দিন দিন শুধু বাড়ছেই। এ যুগের বাচ্চাদের কিছু বলেও লাভ নেই। সব বাচ্চাই এখন কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। অন্তু আবার পরীক্ষায় বরাবরই ভালো রেজাল্ট করে। তাই ওর রুমে ও সারাক্ষণ কম্পিউটার চালালেও কিছু বলার উপায় নেই। ছুটির দিনে ও রাত ১২টার পরও এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একদিন কম্পিউটার চালাতে চালাতে রাত প্রায় একটা বেজে গেছে। অন্তু লক্ষ্য করল ওর মনিটরে হঠাৎ কিছু সংকেত ফুটে উঠল। ও লেখাগুলো পড়ার অনেক চেষ্টা করেও পড়তে পারল না। পরদিন ও স্কুলে ওর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুকে প্রশ্ন করে জানতে চাইল ওর কম্পিউটারেও এরকম কিছু দেখা গেছে কি না। বন্ধুটি বলল, “কই না তো!” ঐদিন রাতেও একই রকম সংকেত আসতে লাগল। ব্যাপারটা রহস্যজনক হলেও ও সেটাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিনও কিছুক্ষণ সংকেত আসার পর মনিটরে অদ্ভূত এক প্রাণীর ছবি ফুটে উঠল। ওর মনে হল এটা অন্য গ্রহের কোন প্রাণী। প্রাণীটি ইংরেজীতে বলল, “আমি খুব বিপদে পড়ে তোমার কম্পিউটারে ঢুকে পড়েছি। তোমার কোন ক্ষতি আমি করবো না । তোমার ফ্লপি ডিস্কের ভিতর আমি ঢুকে পড়ব কিছুক্ষণের মধ্যে। তুমি ফ্লপি খুললেই আমি বেরিয়ে আসব। অন্তু খেয়াল করল ওর ফ্লপি ডিস্কে একটা শব্দ হচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি ডিস্ক বের করতেই অদ্ভুত প্রাণীটা বের হয়ে এলো। প্রাণীটি লম্বায় প্রায় দেড় ফুট। অদ্ভূত প্রাণীটি বলল সে অন্য গ্রহ থেকে এসেছে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তাদের গ্রহে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। ওদের একজন তার ইচ্ছায় সবকিছু করতে চাচ্ছে। সে ওদেরকে ঘরে আটকে রাখতে চাচ্ছে, মেয়েদেরকে পড়াশোনা করতে দিতে চাচ্ছে না। ওকে এখন ঐ গ্রহে খোঁজাখঁুজি চলছে। ও কোন উপায় না দেখে পৃথিবীতে পালিয়ে এসেছে। ও জানে পৃথিবীর মানুষ অনেক ভালো। মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে গেছে তাদের মেধার সাহায্যে। মানুষ ইচ্ছে করলেই অনেক কিছু করতে পারে। অন্তু সবশুনে বলল, “তোমাকে দেখলে তো অন্যেরা সমস্যা করতে পারে।” উত্তরে প্রাণীটি জানাল সে শুধু অন্তুর সাথে থাকবে আর বিপদ টের পেলে অদৃশ্য হয়ে যাবে। “কিন্তু তুমি বিপদ টের পাবে কি করে?” সে বলল তার মাথায় যে দুইটি এ্যান্টেনা আছে তাদের সাহায্যে বিপদ আগেভাগে টের পাওয়া যায়। অন্তু প্রাণীটির নাম দিল নীল। অন্তু আর নীল রাতের বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন নানা গল্প করে। নীল কম্পিউটার সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। ও অন্তুকে ধীরে ধীরে এসব শেখাবে। ও প্রায়ই অন্তুর স্কুলের হোমওয়ার্ক করে দেয়, ড্রয়িং করে দেয়, শব্দার্থ বলে দেয়। অন্তু ওর মতো বন্ধু পেয়ে খুব খুশী। অন্তুর পরীক্ষা প্রায় চলে এসেছে। নীল ওকে সব রকমের সহায়তা করবে বলে জানিয়ে দিল। পরীক্ষার দিন নীল ওর কলমের ভিতর ঢুকে পড়ল। তারপর যেসব প্রশ্নের উত্তর ওর জানা ছিল না সেগুলো নীলের সাহায্যে লিখে ফেলল। ব্যাপারটা কেউই টের পেল না। এভাবে ও সব পরীক্ষায় খুব ভালো নাম্বার পেয়ে একেবারে ফার্স্ট হয়ে গেল। ওর অনেক কাজে নীল এরকম সহায়তা করতে লাগল। নীলকে ওদের গ্রহে এখনও হয়তো খোঁজাখঁুজি চলছে। ও সাবধানতা অবলম্বন করতে যেয়ে কিছু উপায় বের করল। ইন্টারনেটের সাহায্যে ও যে পৃথিবীতে এসেছে এটা গোপন রাখার জন্য ও কিছু কৌশল বের করল আর কৌশলগুলো কাজেও লেগে গেল। তবে ও বিদ্রোহ সম্পর্কে ঠিকই খোঁজ রাখতে লাগল।