ভালুক ও কাঠবিড়ালী

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ কবিতাটি কম-বেশি সবাই পড়েছে। এ কবিতাটির কারণেই ছোট্ট প্রাণী কাঠবিড়ালীর নাম ছোট-বড় সবার মুখে উচ্চারিত হয়। কাঠবিড়ালী হচ্ছে রোডেনশিয়া বর্গের স্কিউরিডে গোত্রের অনেকগুলো ছোট বা মাঝারী আকারের স্তন্যপায়ী প্রজাতির অন্যতম। অস্ট্রেলিয়া এবং এন্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সবখানেই কাঠবিড়ালীর দেখা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে আট প্রজাতির কাঠবিড়ালী দেখা যায়। এদের মধ্যে পাঁচডোরা কাঠবিড়ালী ও তিনডোরা কাঠবিড়ালী মানুষের সংস্পর্শে তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। কাঠবিড়ালীর সামনের পা দুটো ছোট এবং পেছনের পা দুটো বড় হয়ে থাকে, ফলে এরা খুব সহজেই লাফ দিতে পারে। কাঠবিড়ালীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু কথা জানা হলো।

রংধুন আসরে আমরা কাঠবিড়ালীর বুদ্ধি সম্পর্কে একটি গল্প প্রচার করেছি। একটি ছায়াঘেরা সবুজ-শ্যামল জঙ্গলে বাস করতো একটি সুন্দর কাঠবিড়ালীর বাচ্চা। বাচ্চাটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। ওর আম্মু-আব্বু ওকে শেখালো, ভালোভাবে জীবন-যাপন পরিকল্পনা করার জন্য নিজেই কামাই-রোজগার করার চেষ্টা করতে হবে।

তাই, ওর আম্মু-আব্বু ওকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। যাতে ও ভালো ভালো কথা-বার্তা শিখতে পারে। ও জীবনে কাজে আসার মতো বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারে। স্কুলে অভিজ্ঞ এক বুড়ি কাঠবিড়ালী তার ছাত্রদেরকে খাবার সংগ্রহ, গাছে ওঠা-নামা করা, গর্ত খোদা, শত্রু থেকে নিরাপদ থাকা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা ওদেরকে হাতে-কলমে শেখাতো। বুড়ি কাঠবিড়ালীর কথাবার্তা খুব ভাল লাগতো কাঠবিড়ালীর বাচ্চার। তাই প্রতিদিন সে স্কুলে যেতো। কখনো সে স্কুল কামাই করতো না। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে এসেও ও স্কুলের লেখাপড়া শিখতো ভালোভাবে।

প্রতি সপ্তাহে একদিন কাঠবিড়ালীর বাচ্চার স্কুল বন্ধ থাকতো। ছুটির দিন ও আম্মু-আব্বু বা আশপাশের বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে কাটাতো। একবার এক মনোরম রোদের দিন কাঠবিড়ালীর বাচ্চা ওর আম্মু-আব্বুর সাথে বাসা থেকে চলে গেলো দূরের একটি বনে। বনের মধ্যেই ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি জায়গা। হাওর-বাঁওড়ে ছিল পানিভর্তি। সবুজ শ্যামল ঘাস, থোকায় থোকায় ফুল, বড় বড় গাছ, উঁচু উঁচু পাহাড়-টিলা এবং পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত ছিল জায়গাটি। কাঠবিড়ালীর বাচ্চা সেখানে গিয়ে খুবই খুশি হলো। মা-বাবার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের খেলায় মেতে ওঠলো সে।

কিছু সময় যাওয়ার পর তারা হঠাৎ দেখল, বনের অন্ধকার একটা জায়গা থেকে কালো ও নোংরা শরীরের একটি ভালুক ওদের দিকে আসছে। ভালুকটি দেখতে যেমন কুৎসিত তেমনি তার ব্যবহারও ছিল খুবই খারাপ। বনের ছোট ছোট দুর্বল জন্তুদের সে বিনা কারণেই ভয় দেখাতো এবং ধমক দিতো। সবাইকে কষ্ট দিয়েই যেন ভালুকটি আনন্দ পেতো। আর এজন্যই বনের ছোট প্রাণীরা ভালুকের এমন নিষ্ঠুর আচরণে বেশ রেগে ছিল। মনে মনে ওকে গাল মন্দ করতো।

গাছের নিচে ছিল মস্ত বড় একটি পাথর। ভালুকের মাথা গিয়ে পড়লো পাথরের ওপর। তার মাথা গেলো ফেটে। মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে। অন্য দিকে মৌমাছিগুলো ওকে দংশন করেই যাচ্ছিলো। ভালুক মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগল। ওর খুব কষ্ট হচ্ছিলো। সে সময়ই ওর মনে হলো, ও ছোট ছোট প্রাণীদের মারার সময়ও ওদের এমনই কষ্ট হতো। ভালুক মনে মনে শপথ করলো, আর কখনো কোনো প্রাণীকে জ্বালাতন করবে না। ব্যথায় ভালুক বেহুঁশ হয়ে গেল। অনেকক্ষণ পর যখন তার জ্ঞান ফিরলো, মাথার রক্ত ততক্ষণে জমাট বেঁধে গেছে। মৌমাছিরাও তাদের রাগ ঝেড়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। ভালুক আস্তে আস্তে হেঁটে তার গুহার দিকে চলে গেলো।   কিছুদিনের মধ্যে ভালুকটি সুস্থ হয়ে উঠলো। সুস্থ হওয়ার পর ভালুক আর কখনো ছোট দুর্বল প্রাণীদের জ্বালাতন করেনি। এরপর থেকে ভালুককে বনের সবাই ভালো ভালুক বলতে থাকলো। বনের সব প্রাণীই ওকে ভালোবাসতে লাগলো। ভালুকও ওদের সাথে খেলাধুলা করতে থাকে এবং ওদের সাহায্য করে আনন্দ অনুভব করতে লাগলো। কাঠবিড়ালী এবং ভালুকের যুদ্ধের কথা পুরো বনে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই কাঠবিড়ালীর বাচ্চার বুদ্ধির প্রশংসা করতে থাকে।

গাজা দিবস

নবী জীবনের গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *