ভাগ্যবানের ভাগ্য

আমাদের পাশের দেশ ভারত।দুনিয়ার প্রাচীন দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম।এদেশের হাজার হাজার রূপকথা লোককাহিনী সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।সেই ভারতের এক হতভাগা যুবকের কাহিনি শোন।হত ভাগা যুবকটি তার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাহাজে করে অন্য দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ভিষম ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি।পাহাড়ের গায়ে ধাক্কালেগে জাহাজটি ঢুবে যায়।যুবকটি ছাড়া সবাই মারা যাই।অনেক কষ্টে সাঁতার কেটে উঠে যুবকটি দেখল,সে একট জনমান বিহিন দিপে দাঁড়িয়ে আছে।দ্বিটিতে ছিল অসংখ্য নারকেল গাছ।যুবকটি সেই দ্বিপের ডাব আর নারকেল খেয়েই জীবন রক্ষা করে চলল।কিন্তু একসময় সে খাদ্য তার মুখে কিছুতেই রোচেনা।সারাক্ষন শুধু ক্ষুধার যন্ত্রণাই কষ্ট পাই।
একদিন সোভাগ্য তার দুয়ারে এসে হাজির হল।সে একটা নারকেল গাছের তলায় শুয়ে ছিল।হঠাৎ দেখল আকাশের বুকে অদ্ভুত কালো একটা প্রানী ভাসছে।প্রথমে সে ভাবল কোন পাখি,কিন্তু সে কোন পাখি দেখল না!প্রাণীটি একটু কাছে আসতেই সে দেখল;ওটা একটা গাধা।কি অবাক কাণ্ড,একটা পাখাবিহিন গাধা আকাশে উড়ছে?সে আবার দু,চোখ ঘসে ভাল করে দেখল।কিন্তু না, ওটা আসলে উড়ন্ত গাধা।একটু পরেই গাধাটা দ্বীপে নেমে এলো।দ্বীপ অবতরণ করেই সে রোদের আঁচ বাচিয়ে একটা গাছের নিচে ঘুমিয়ে গেল।
হতভাগাযুবক টি পা টিপে টিপে ওর কাছে গেল।ওটা যে সত্যি একটা গাধা তার কোন সন্দেহ নেই।এখন ওটা গভির ঘুমে আচ্ছন্ন।যুবক অবাক হয়ে দেখল যে,ঘুমান্ত গাধাতার পাশে মাটিতে পড়ে রয়েছে একটা হীরকখণ্ড।রহস্য ময় গাধাটি ওই হিরা তার সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।

যুবক হিরাটি নিজের হাতে তুলে নিয়ে গাধাকে আবার ভালো করে দেখল।দেখতে কুৎসিত আবার ভয়ংকর।মনে মনে ভাবল ও জেগে উঠে আমার হাতে তার হীরকখণ্ড দেখলে নিশ্চয় ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ধারালো দাঁত দিয়ে আমাকে আক্রমন করবে।
আমি হদি এই মুহুতে ওই গাছের মাথায় নিরাপদ দূরত্বে উঠে বসতে পারতাম!
কথাটা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে তার দেহ মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো।আর তখনই সে দেখল যে সে পাশের নারকেল গাছটার মাথায় বসে আছে।যুবক বুঝতে পারল যে এটা জাদুর হিরা।এটা হাতে নিয়ে মনে মনে কিছু একটা ভাবলে সে টা পূর্ণ হবে।গাধাটা নিশ্চয় তাই করেছ।ব্যাপার টা পরখ করে দেখতে হয়—।আছা আমি এখন নিচে মাটিতে গাধার পাশে যেতে চাই।বাহ!মুহুতের মধ্যে সে গাধার পাশে দেখতে পেল।দ্রুত আবার সে ইচ্ছা জানিয়ে আবার গাছের উপর বসল।তারপর সে নিচে নিদ্রিত গাধার মাথার উপর একটা ডাব গেলে দিল।চমকে জেগে দেখে টার পাশে জাদুর হীরা নেই।উপরে তাকিয়ে দেখল যে গাছের মাথায় একটা যূবক বসে আছে।রাগে সে যেন পাগল হয়ে গেল।বার বার সে টার মাথা ওঁ দাঁত গাছের কাণ্ডে আঘাত হানলো কিন্তু তাতে কিছু হল না।ও আসলে ছিল আকটা দুষ্ট যাদুকর,যাদুর সাহায্যে সে গাধার রুপধারন করেছিল।ওদিকে হীরক হীন গাধা টার বিশাল দাঁত দিয়ে গাছের গায়ে বার বার আঘাত করার সময় একবার টার দুটো দাঁতই গাছের মধ্যে ঢুকে যায়।সে আর নিজেকে তা রহেকে মুক্ত করতে পারে না। গাছের মাথার যুবক তখন নিচে নেমে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলো।নিচে নেমে এসে সে কয়েক টা বড় বড় পাথরের আঘাত করার সময় সে গাধাটি কে মেরে হীরক খণ্ডের সাহায্যে
আগুন জ্বালিয়ে দিল। টারপর হীরা হাতে তুলে নিয়ে সেই নির্জন দ্বীপ ত্যাক করে পাশের রাজ্যে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো।সে আকাশে ভাসতে ভাসতে পাশের দেশে গিয়ে হাজির।তখন সন্ধা নেমে এসেছে।সে নেমেছে একটা সমুদ্র বালুময় সৈকতে।আকাশে একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখতে পেল।সে হীরক খণ্ডটি পকেটে পুরে যেখান থেকে ধোঁয়া উঠেছিল সে দিকে হাটতে লাগল।হাঁটতে হাঁটতে সে একটা কুটিরের সামনে উপস্তিত হল।যুবক সেখানে একটি লোক কে বসে বসে একটা বাচ্চা ছাগলের রোষ্ট রান্না করতে দেখল।লোকতির দুটি পা-ই নেই।যুবক সাবধানে ওর সামনে গিয়ে বলল,শুভ সন্ধা,স্যার।পদযুগলহীন বৃদ্ধা বলল,শুভ সন্ধ্যা।
আপনি কি আমাকে কিছু খেতে দিতে পারেন এবং রাতে আশ্রয়?বিনীতভাবে যুবক বলল।যুবকটি খেতে বসে,কিন্তু পদযুগলহীন বৃদ্ধা যে ভাবে বার বার চোখ তুলে লোলুপ দৃষ্টিতে যুবকের দিকে তাকাতে থাকে যুবকের স্থির বিশ্বাস যে ছাগলটি না থাকলে সে তাকেই রোষ্ট করে খেয়ে ফেলত,আসলে ওই লোকটাছিল একটা যাদুকর।একসময় ওর দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধা বললো,তা তুমি এখানে এলে কি করে?যুবক তাকে ঘটনা টি খুলে বলতেই সে বলল,আমি ওই হীরা টা কিনতে চাই।টার বিনিময়ে আমি তোমাকে আমার মায়াবি কুঠারটি দেব।আমি যদি এই কুঠারের হাতলে চাপ মেরে বলি,কাঠ আর আগুন!তখনই কুঠার বনে উড়ে গিয়ে কাঠ কেটে এনে জ্বালিয়ে দেয়।আমি যদি বলি শীর উচ্ছেদ কর তখনই কুঠার সবচাইতে কাছে যে মাথা পাবে তাকেই কেটে ফেলবে।এই রকম আজব কাজের কুঠার তুমি সারা দুনিয়াতে পাবে না।যুবক বললো তাই তো মনে হয়।ঠিক আছে আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি।এই বলে সে তুলে দিল তার হীরকখণ্ড আর তুলে নিল জাদুকরের মায়াবি কুঠার।

যাদুকর হীরক খণ্ডতুলে নেবার পর ওই যুবকের রোষ্ট করে খাওয়ার ইচ্ছা করলো।কিন্তু তার আগেই যুবক তার হাতের কুঠারের বাঁটে চাপ মেরে বলে উঠে,শিরুচ্ছেদ কর!আর ছখের পলকে বুড়ো দুষ্ট জাদুকরের মাথা মাটিতে গড়িয়ে পড়ে।
পদযুগলহীন মানুষ কে এবার মস্তক হীন মানুষে পরিনিত করে সৌভাগ্যবান ভাগ্যান্বষী যুবক দুটি মায়াবী জিনিস হাতে নিয়ে এগিয়ে চলল।চলতে চলতে আবার একটা নিঃসঙ্গ কুঠিরের সামনে অপুস্তিত হয়।কুঠিরের সামনে এসে সে দেখল একটা বৃদ্ধকে কান্নাকাটি করতে দেখে।এই বৃদ্ধও দেখতে অদ্ভুত।তার পা আছে কিন্তু হাত নেই।যুবক ভাবলো এই বনে বাঘের উৎপাত বেড়েছে।যুবক সাহসভারে বৃদ্ধাকে শ্বাগত সম্ভাষনের জন্য এগিয়ে যাই।কিন্তু তার কাস্মিক আবির্ভাবে বৃদ্ধ চমকে যাই।তার সামনে গাছের গুড়ির কাছে এক গামলা দুধ ছিল।বৃদ্ধা চমকে উঠতেই তার চিবুকের ধাক্কা লেগে গামলা থেকে দুধ শব মাটিতে পড়ে যায়।ছোখের নিমিসে ওই দুধ একটা নদীতে পরিণীত হয়ে বুড়ো আর বুড়ির কুঠিরের চার পাশদিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।আর বুড়ো তার সামনে এসে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে।
কিন্তু অল্পক্ষনের নধ্যে তার হাসি বন্ধ হয়ে গেল।যুবক হীরকখণ্ড হাতে নিয়ে তার ইচ্ছা জানাতেই ছখের নিমিসে নদী পার হয়ে বুড়োর সামনে এসে দাঁড়াল।বুড়ো দাঁত-মুখা খিঁচিয়ে প্রশ্ন করে,নদী পার হয়ে কেমন করে এখানে এলে?যুবক তার পকেট থেকে হীরকখণ্ড বের করে বলে খুব সোজা, এর সাহায্যে আমি যা ইচ্ছা করি তাই করতে পারি।
হাতকাটা মানুষ ক্রুর চোখে ওকে দেখতে দেখতে বলে,আমি ওই হীরকখণ্ড কিনতে চাই।তার বিনিময়ে আমি তোমাকে এই মায়াবি গামলা দেব।তুমি চাওয়া মাত্র এই গামলা বিরানি,পোলাও,কোরর্মা,ফিরনি জরদা,রসগোল্লা,সন্ধেশ,আম-জাম-কাঠালে পূর্ণ হয়ে যাবে। যা চাইবে তাই পাবে তুমি।তারপর গামলা উলটে দিলেই সেটা মুহুতেই মধ্যে নদীতে পরিণীত হয়ে চারপাশ সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে,তোমাকে কেউ খুঁজে পাবে না।কী,রাজী?
যুবক বললেন অবশ্যই রাজী।এতো খুব ভালো প্রস্তাব যুবক টি গামাল টি তার হাতে পাওয়া মাত্র কুঠরের বাটে চাপ মেরে বলে “শিউচ্ছেদ কর!”এর তার কথার সঙ্গে সঙ্গে কুঠার হস্তহীন যাদুকর কে মস্তকহীন করে দিল।তার পর ওই রাত টা সে জাদুকরের কুঠিরে কাটিয়ে দিয়ে পর দিন মায়াবী রত্ন নিয়ে আবার চলতে শুরু করল।
সে দিন সন্ধার দিকে সে জঙ্গলের ভেতর প্রচণ্ড হইচই শুনতে পেল।কে যেন খুব
জোরে জোরে ঢোল বাজাচ্ছে,আর হরিণ,বাঘ,সিংহ হাতির পাল প্রানভয়ে থর থর করে কাঁপছে।একটু পরে ঢোলের শব্দ থেমে গেল।যুবক তখন সাবধানে অগ্রসর হতেই দেখে যে বনের মধ্যে বিশাক একটা দৈত্য কোলের উপর একটা ঢোল নিয়ে বাজাচ্ছে,তাকে দেখতে পেয়ে দৈত্য সাদর অভ্যাথানা জানিয়ে বলল,আমার সাথে ক্ষেতেবসো।থ্যাং ইউ,বলে যুবক টা যতটা সম্ভব দূরে বসলো,দৈত্য একটা রোষ্ট করা মাংসের পাত্র তার দিকে এগিয়ে দিল।মাংসের চেহারা দেখে যুকের মনে হল এটা কোন গরু,অথবা ছাগলের মাংস নয়।বরং এটা মানুষের মাংস।সে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে আমি কোন মাংস খাইনা। তারপর সে হাতের গামলা টা ধরে তার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। সঙ্গে সঙ্গে ডালে পরিণীত হয়ে গেল।
ব্যাপার দেখে দৈত্যের চোখ লাল হয়ে গেছে।কেমন করে ওই কাণ্ড ঘটলো জানতে চাইলে যুবক তাকে বিষয় টা বুঝিয়ে বলল।তার কথা শুনে দৈত্যের চোখ জ্বল জ্বল করে উঠল।সে হুমকার দিয়ে বলল,আমি তোমাকে আমার এই মায়াবী ঢোল দেব।এর একপিটে তালি বাজালে বনের শব প্রানিরা ভয়ে থর থর করে কাঁপতে থাকে।তারা নড়বার ক্ষ্মমতা হারিয়ে ফেলে।তুমি তখন তোমার ইচ্ছামতো শিকার করতে পারবে।আর এর অন্য পিঠে তালি বাজালে মুহুতের মধ্যে পদাতিক ও অশ্বারোহী বিশাল এক বিশাল এক সেনাবাহিনী তোমার সামনে এসে তোমার আদেশ পালনের জন্য অপেক্ষ করবে। কী বলো,এই ঢোলের বদলে তোমার গামলা আমাকে দেবে?
যুবক বলল,মন্দ কী?চুক্তিটা তো ভালই মনে হয়।
যুবক গামলাটা দৈত্যের হাতে দিতেই সে লোভীর মতো সেটা তার মুখের কাছে তুলে ধরে,আমি রক্ত পান করতে চাই,বলতে উদ্যত হয়।কিন্তু যুবক তার আগেই কুঠারের হাতল ধরে নির্দেশ দেয়,শিরশ্ছেদ কর।সঙ্গে সঙ্গে কুঠার এক লাফ এগিয়ে গিয়ে দৈত্যের মাথা কেটে ফেলে।

মুণ্ডহীন দৈত্যকে পেছনে ফেলে রেখে যুবক এগিয়ে গেল।এক সময় সে একটা নগরীতে এসে পৌছায়।তার শাসনকর্তা এবং অসৎ,নিষ্ঠুরম,অত্যাচারী রাজা।নিজের প্রজাদের উপর অত্যাচার চালাতো।তার ধারে কাছে কোনো অচেনা বা ভিনদেশী লোক ঘেঁসতে দিত না।ওই রাজা যখন খবর পেল যে এক অচেনা যুবক তার রাজ্যে প্রবেশ করেছ তখনই তাকে ধরে আনার জন্য বার জন সৈন্যর একটি দল
পাঠালো।যুবক দেখতে পেয়ে তার ঢোলে চাটি মারলো।সঙ্গে সঙ্গে ঐ বার জন সৈন্য ভয়ে পালিয়ে গেল।রাজা ভীষন রেগে গেল।তার আদেশে তৎক্ষণাং ওই বার সৈন্যর গর্দান গেল তার পর জারা ওই উদ্ধুত এবং দুঃসাহসী যুবক কে হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে তার পুরো সেনাবাহিনী কে তার বিরদ্ধে প্রেরণ করল।
যুবক তখন তার হাতের গামালা উল্টে দিতেই তখন বন্যার মতো জলস্রত প্রবাহিত হয়ে রাজার সেনাদল কে সম্পর্ন ডুবিয়ে দিল।কোন রকমে রাজা শহরে এসে উঠল।এবং যুবকের কাছে তার সব অন্যায়-অত্যাচারের জন্য ক্ষমা চাইল ও যুবকের মাথায় রাজ মুকুট পরিয়ে দিল।

দুঃখিত!