
ঘটনাটা আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি তখনকার।। আমি ঢাকায় একটা রেসিডেণ্ট স্কুলে পরতাম তখন।।
গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশের বাড়িতে বেড়াতে গেছি।। জায়গাটা ময়মনসিংহে।। আমি যেইদিন বাসায় পৌঁছলাম তার কয়েকদিন পরের ঘটনা।।
আমাদের এলাকায় হাফিয নামের একজন লোক থাকতেন।। লোকটা ছিল খুবই বদমেজাজি আর রাগী।।
সবার সাথেই তার ঝগড়া লেগে থাকতো।। এমনকি নিজের ভাইয়ের সাথেও জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে অনেকদিন যাবত তার ঝগড়া লেগে ছিল।।
হয়তো এতো শত্রু থাকার কারনেই কে বা কারা তাকে একরাতে বাজার থেকে আসার সময় তাকে নেরে ফেলে।। গ্রাম অঞ্ছলের খুন।।
তাই পুলিশ এসে লাশটাকে পোস্ট মরটেম এর জন্য লাশ কাঁটা ঘরে পাঠাতে চাইলো।।
রাস্তা ভয়াবহ খারাপ থাকায় কোনও গাড়ি পাওয়া গেলো না।। শেষমেশ এক ব্যান গাড়ি চালককে তারা রাজি করাতে পারলো লাশ নিয়ে যাবার জন্য।।
ব্যান চালক ছিল জুয়ান তাগড়া মানুষ তাই ভয়ভিতি তেমন একটা ছিল না।।
লাশকাটা ঘরটা মোটামুটি ভালোই দূরে আর যাওয়ার পথে রাস্তায় একটা জঙ্গলের মত জায়গা পরে।। লাশ নিয়ে পরিবারের লোকদের কান্নাকাটি, বিলাপের কারনে রউনা হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।।
অনেকেই লাশ এতো রাতে নিয়ে যেতে না করলেও ব্যান চালক পাত্তা দিল না।। নিজের সাহস দেখানোর জন্য তখনই রউনা হল সে।।
বলা বাহুল্য, এতো রাতে তার সাথে যাওয়ার মত তেমন কেউ উপস্থিত ছিল না।। তাই সে একাই রউনা হয় লাশ নিয়ে।।
গল্পের বাকি অংশটুকু ভ্যান চালকের মুখ থেকে শোনা।।
তার জবানবন্দিতে যা শুনতে পারলাম তা নিজের ভাষায় লিখতে চেষ্টা করছি।। নুরু ভাই(ব্যান চালক) রউনা হবার ৩০ মিনিটের মধ্যে অন্ধকার হয়ে গেলো।।
তখন তিনি একটা হারিকেন জ্বালিয়ে সেটা ব্যান এর নিচে ঝুলিয়ে দিলেন।। যারা গ্রামে গঞ্জে গেছেন তারা হয়তো বা দেখেছেন।।
যারা শহরে থাকেন তারা তো প্রায় কিছুই দেখেন নাহ।। যাক গিয়ে, মূল ঘটনায় ফিরে আসি।। সেদিন পূর্ণিমা রাত ছিল।।
তাই রাস্তা একদম ফকফকে দেখা যাচ্ছিল।। তো, সেই জঙ্গলের পাশাপাশি আসা মাত্রই নাকি বাতাসে নাকি অন্য কোনও উপায়ে কে জানে, হারিকেন তা নিভে গেলো।।
নুরু ভাই ব্যান থেকে নেমে আবারো হারিকেন জালানর চেষ্টা করলো।।
কিন্তু জোর বাতাস বার বার ম্যাচের কাঠি নিভিয়ে দিচ্ছিল।। যখন নুরু ভাই ম্যাচের কাঠি জালানর চেষ্টা করছিলেন, তখন হটাত উনার মনে হল লাশটা যেনও খানিকটা নড়ে উঠলো।।
গ্রাম্য আর কুসংস্কার আক্রান্ত হলেও নুরু ভাই ছিলেন বিরাট সাহসী লোক।।
তাই তিনি মনকে সান্ত্বনা দিলেন যে, ও কিছু না।। শুধুই মনের ভুল।। কিন্তু তবুও তার মনের মধ্যে একটা খটকা রয়ে গেলো।।
হারিকেনটা শেষ পর্যন্ত জালাতে না পেরে হাল ছেড়ে দিলেন তিনি।। ভাবলেন, চাঁদের আলোতেই কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন।।
রাস্তাঘাট চাঁদের আলোতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তাহলে আর বাড়তি আলোর দরকার কি।।
ব্যান চালিয়ে কিছুদুর যাওয়ার পর হটাত উনার খটকা লাগলো।। পিছনে লাশটার নড়াচড়ার আওয়াজ পাওয়া গেলো যেনও।।
মনে হলে পাশ ফিরে শুল।। নুরু ভাই পাত্তা না দিয়ে ব্যান চালাতে লাগলো।। বাইরে যতই সাহসীর ভাব দেখান, আসলে ভেতরে ভেতরে তখন ঠিকই ভয় ঢুকে গেছে।।
আর কিছুদূর যাওয়ার পর তার মনে হল লাশটা যেনও উঠে বসেছে আর কষ্ট করে টেনে টেনে শ্বাস নেয়া শুরু করেছে।।
তিনি সাথে সাথে পেছনে তাকিয়ে দেখলেন, এবার আর ভুল নয়।। আসলেই লাশটা উঠে বসেছে।।
লাশের উপর থেকে কাপড়টা সরে গেছে।। চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মুখখানি।।
চোখের জায়গাটায় বড় গর্ত।। আর মুখটা যেনও কেউ এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে।। ওটা দেখে নুরু ভাই ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে দিল।।
ব্যান থেকে নেমে যেই দৌড় দিতে যাবে অমনি দেখল লাশটা সামনের রাস্তায় পরে আছে।। আড়াআড়ি ভাবে, পথ আটকে।।
এটা দেখে পিছনে তাকিয়ে সে দেখল লাশটা ব্যানে নেই।। উনি আর সহ্য করতে পারলেন না।। ভয়ে দিক্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে দৌড় মারলেন।।
কোন দিকে যাচ্ছেন তাতে তার কোনও হুশ নেই।। কেবলি মনে হতে লাগলো, পেছনে কে যেনও দৌড়ে আসছে।। সে দৌড়ের স্পীড বাড়িয়ে দিল।।
এভাবে কিছুক্ষণ ছোটার পর সে দূরে কিছু আলো দেখে সেদিকে রুদ্রশাসে দৌড়াতে লাগলো।।
আলোটা আসছিলো একটা বাড়ি থেকে।। নুরু ভাই দৌড়ে গিয়ে একটা বাড়ির দরজায় ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।।
শব্দ শুনে বাড়ির লোকজন বের হয়ে এলে নুরুকে অচেতন অবস্থায় পায়।। সেবা যত্ন করার পর নুরু ভাইয়ের জ্ঞান ফিরে।।
তার মুখে ঘটনার বিস্তারিত শুনে বাড়ির জউয়ানরা মিলে বের হয় লাথি সোটা হাতে।।
কিন্তু নুরু ভাইয়ের দেখানো মত জায়গায় গিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না।।
শুধু দেখা গেলো, যেই জায়গায় নুরু ভাই লাশটাকে শুয়ে থাকতে দেখেছিল, সে জায়গাটা কেমন যেনও উঁচু হয়ে আছে।।
আমি নিজেও পরে জায়গাটা দেখেছিলাম।। অনেকটা স্পীদ ব্রেকারের মত।।
গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত কিন্তু আরেকটু ঘটনা বাকি রয়ে যায়।।
এর পরেরবার যখন আমি বাসায় যাই তখন শুনি যে, রাস্তার মাঝে উঁচু জায়গা থাকায় সমস্যা হচ্ছিল।। তাই রাস্তা কেটে জায়গাটা সমান করে দেয়া হয়।।
কিন্তু, এর পরদিনই আবার জায়গাটা উঁচু হয়ে যায়।। আবারো গ্রামবাসী মিলে জায়গাটা কেটে সমান করে দেয়।।
কিন্তু কিছুদিন পর আবার সেই আগের মতন উঁচু।। এরপর গ্রামের সকলের উপস্থিতিতে একটা বড় গর্ত খোঁড়া হয় সেখানে।।
খুঁড়ে সেখানে ঐ হাফিজ নামক বেক্তির পচাগলা লাশ পাওয়া যায়।।
পরে তাকে ঠিক মতন দাফন করা হয়েছিলো আর রাস্তাটাও আর কখনো উঁচু হয়নি।।