আমাদের নানুবাড়ী হবিগঞ্জের মোশাজান গ্রামে । এই গ্রামে একটি আধা পাকা বাড়ি আছে । গ্রামের সবার মতে ওই বাড়িটায় সমস্যা আছে ! ঐ বাড়িটিতে দিনের বেলায় গেলেও গা ছমছম করে ! ওই বাড়ির উঠানে গেলেই চারদিকের পরিবেশ অনেক নিরব হয়ে যায় ! বাড়িটার বিবরণ দেই, দুইটা বাড়ি পাশাপাশি, সামনে উঠান, বাড়িটার পিছন দিকে একটা পুকুর এবং পুকুর ঘিরে ঝোপঝাড় ।
এই বাড়িতে একজন খুব ধার্মিক মানুষ থাকতেন উনার স্ত্রীসহ । উনাদের ছেলে মেয়ে শহরে থাকত । উনি মারা যাওয়ার পর ওদের বাড়িতে একটা বিরাট বড় সাপ দেখা যেত। সাপটা কারো হ্মতি করত না । সাপটি ওই বাড়িটা এবং উনার স্ত্রীকে পাহারা দিত । প্রত্যেক রাতে সাপটা সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতো এবং দিনের বেলা ঘরের এক কোনায় থাকত । একবার উনার এক ছেলে আসে শহর থেকে । এসে না বুঝে উনি সাপটা মেরে ফেলেন । উনি সাপটাকে মারতে মারতে ওর মাথা আলাদা করে ফেলেন । তারপর থেকে ওই মহিলা আর উনার ছেলে পাগল হয়ে যায় । ডাক্তার বলেছেন উনাদের ব্রেনে এফেক্ট হয়েছে । মহিলাটা প্রায় রাতে চিৎকার দিয়ে উঠতেন “দেউ আসছে, দেউ আসছে পুকুরে যা… মাফ চা”…
মাঝে মাঝে কাজের মহিলা রাতে ঘরের বাইরে আওয়াজ পেত কে মোটা গলায় বলত “ভাত দে”… ! একবার ওই বাড়ির সব সদস্য স্বপ্ন দেখে বাড়ির পেছনের পুকুরটাতে একটা মাথা কাটা লোক পানির নিচে ডুব দিচ্ছে ।আর সবাইকে বলছে যে “সাবধান এইটা আমার ওস্তাদের বাড়ি আমাকে তাড়াতে চেষ্টা কোরো না । ওস্তাদ বলে গেছেন এই বাড়ির দেখাশোনা করে রাখতে”…
বাড়িটার পুকুর শেওলায় ভরা থাকত । কেউ ভয়ে যেত না ! একবার ওই বাড়ির কাজের মহিলার ছেলে ওই পুকুরে নামে । পরে ও চিৎকার দেয়, ছেলেটা প্রায় ডুবে যাচ্ছিল তখন ওকে উঠানো হয় টেনে হিঁচড়ে । যারা টেনে তুলেছে ওদের মতে ছেলেটাকে অন্যদিক থেকে কে যেন টানছিল ! ছেলেটার পায়ে শিকল (গ্রামের ভাষায় জিঞ্জিল) এর দাগ পাওয়া যায় ! … পুকুরটা পরিষ্কার করানো হয়, ঠিক পরদিন দেখা যায় শেওলা যেমন ছিল তেমনই আছে ! …..
একবার এক লোক ওই বাড়ির ভেতর দিয়ে আসছিল রাতে । সে রাস্তা কমানোর জন্য এই বাড়ির ভেতর ঢোকে । সে পুকুর ক্রস করে যেই দুই বাড়ির মাঝখানে এসেছে, সে দেখে প্রকাণ্ড এক কালো লোক ওকে জাপটিয়ে ধরেছে । লোকটা মাটিতে পরে গড়াগড়ি করছিল কিন্তু ওর মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিল না । হঠাৎ ওই বাড়ির কাজের মহিলা রান্না করতে গিয়ে দেখে বাড়ির মাঝখানে লোকটা একা একা গড়াগড়ি করছে । যেন কারোর সাথে লড়াই করছে ! কাজের মহিলা চিৎকার দেয়, মানুষ ওকে ধরে । ধরার পর ওর হুঁশ আসে, সে ওই পুকুরের কালো লোকটার কথা খুলে বলে । সবাইভাবে লোকটা পাগল । পরে লোকটা ওই রাতেই রক্ত বমি করে মারা যায় ! বর্তমানে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে ! কেউ ভুলেও ঐ বাড়িমুখি হয় না