ভয়ংকর ভুতের কিচ্ছা……………।

একদা এক ভুত বাস করিত তাল গাছের আগায়। আর এক পেতনী বাস করিত গাব গাছে ঝোপঝারের মধ্যিখানে। পেতনীর খুব শখছিল একখানা প্রেম করার। কিন্তু মনের মত ভুত না পাওয়ার কারণে তাহার এই ইচ্ছা ইচ্ছাই রইয়া গেল। বাস্তবে তাহার কিছুই ঘটিল না। এ নিয়ে পেতনীর মনে ব্যপক দুঃখ। এদিকে ভুত মনে মনে পেতনীকে ব্যপক ভালবাসত। কিন্তু সে তাহার মনের কথা কোন ভাবেই পেতনীর নিকট বলিতে পারিত না। কারণ ভুত জানতই না কি করিয়া ভালবাসার কথা বলিতে হয়।

মনে ভাব প্রকাশ করিতে না পারায় ভুতের মনে ব্যপক দুঃখ। একদিন ভুত দেখিল তাহার তালগাছতলায় একজোড়া মানুষ্য কপোত কপোতি আসিয়া বসিয়াছে। অতি আধুনিক একজোড়া কপোত কপোতি। তরুণটির মুখে জায়গায় জায়গায় দাড়ির অংশ বিষেষ দেখা যাইতেছিল, মথার চুলগুলা ছিল শিং এর মত খারাখারা। দুর থেকে তাহারে দেখিলে বাউয়া বিলাই অর্থাৎ হুলো বিড়ালের মত লাগতেছিল। তাহার পড়নে ছিল হাজার টা ছিড়া ফাড়া তালি আর পকেট দিয়া ভরপুর জামাকাপড়। তরুণিটিও অনেকটা সেইরকমই। বানুরে কালারের চুল ছিল তাহার মাথায়। আর কি আজব একখানা ড্রেস পড়িয়া আসিয়াছে দেখিলে টাসকি খাইতে হয়।

তরুণটি হঠাৎ কথা নাই বার্তা নাই তরুণিটির হাত ধরিয়া বলিল “I love you” তরুণিটিও সাথে সাথে বলিল “I love you too” তাহার পর কি সব দৃশ্য….ভুত টাসকি খাইয়া গেল। সে তারাতারি গাছ হইতে নামিয়া আসিয়া তরুণটিকে জিগাস করিল -তুমি তাহারে ইহা কি বলিলে? আর সে জবাবে ইহা কি বলিল? আর ইহা বলিলে কি হয়? তরুণ টি মুচকি হাসিয়া বলিল – ইহা মডার্ট টকিং। ইহা বলিয়া আমি তাহারে ভালবাসার প্রস্তাব করিয়াছি আর সেও তাহা গ্রহন করিয়াছে,ব্যস আমাদের ভালবাসাবাসি শুরু হইয়া গেল…।

ভুত টাসকি খাইয়া গেল। এত্ত সোজা ভালবাসার কথা বলা? আর সে এতদিন মনের মধ্যে পেতনির জন্য ভালবাসা পুষতে পুষতে ফুতুর হইয়া যাইতেছে…এইবার ভুত এই মডার্ন জুটিদের নিকট হইতে ভালবাসার শিক্ষা লইয়া গেল পেতনির কাছে ভালবাসার প্রস্তাব করিতে। গাব গাছের নিচে দাড়াইয়া ভুত পেতনীকে ডাকিয়া বলিল ” I love you”। পেতনী উহার বিন্দু মাত্র বুঝিতে পারিল না। সে ভুতকে বিরক্তির স্বরে বলিল – কি সমস্ত ভাষায় কথা বলিতেছ? যাহা বলিবে ভুতুরে ভাষায় বলিবে।

তখন ভুত তাহারে ভুতুরে ভাষায় বলিল – আচুংকা মাচুংকা ফুচুফুচু। আর্থাৎ আমি তোমারে ভালবাসি। পেতনী এইবার বুঝিল ভুত তাহারে ভালবাসে। পেতনী ছিল বেজায় চালাক। ভুতরে পরিক্ষা করার জন্য প্যচ মারিয়া বলিল – আমি প্রেম করিতে চাই ভালবসিতে চাইনা।

ইহা শুনিয়া ভুতের মাথা আউলাইয়া গেল। তাহার মথা প্রথম স্তরে আউলাইয়া গেল। প্রথম স্তরে আউলাইলে কিছুই বোঝে আসে না,দ্বিতিয় স্তরে আউলাইলে সব জট পাকায় যায়,তৃতিয় স্তরে আউলেইলে জট খুলতে শুরু করে। ভালবাসা আর প্রেমের মধ্যে পার্থক্য কি তাহা কিছুতেই বোধগম্য হইল না ভুতের।

ভুত, পেতনীর কথা মর্ম খুজিতে খুজিতে চলিয়া আসিল তালগাছের আগায়। এইভাবে তাহার দিনযায় মাস যায় কিন্তু পেতনীর কথার মর্মার্থ মাথায় আসে না। হঠাৎ একদিন তাহার তালতলায় সেই আল্ট্রা মডার্ন বাউয়া বিলাই টাইবের যুবকটি আসিয়া বসিল। এইবার সাথে তাহার নয়া বান্ধবী।

এইটারে দেখতে অনেকটা ভীন গ্রহের মাইয়া মনে হইতেছে। যুবকটি আগেরবারের মত এরও হাত ধরিয়া “I love you” বলিল। তরুণিটিও “I love you too” বলিল এবং আগের মত সেই দৃশ্যের অবতারণা হইল। ভুতের পুরাই টাসকি খাইয়া গেল। তাহার মাথা দ্বিতিয় স্তরে আউলাইয়া গেল।

সে তারাতারি তালগাছ হইতে নামিয়া যুবকটিকে একা ডাকিয়া বলিল – সেই দিন তোমাকে দেখিলাম অন্য এক তরুণিরে ভালবাসার কথা বলিতেছ আজ আবার অন্য আরেকজনরে!! ভালবাসা আবার বদলায় কেমনে? যুবকটি মুচকি হাসিয়া বলিল – ভালবাসাতো বদলায় নাই,বদলায় গেছে শুধু মানুষটা।

ইহা শুনিয়া ভুতের মাথা তৃতিয় স্তরে আউলাইয়া গেল। এইবার তাহার মাথার জট খুলিতে লাগিল। সে এইবার পেতনীর কথার মর্মার্থ বুঝিতে পারিল। এইবার সে পেতনীরে পাওয়ার জন্য সঠিক পথ অবলম্বন করিল।

টানা একবছর সে পেতনীর প্রতি ভালবাসা নিবেদন করিল তাহার কাজে কর্মে প্রকাশ ঘটাইয়া। এই এক বছরে ভুত, পেতনীর জন্য এমন কিছু নাই যে সে করে নাই।এর মধ্যে সে আর কোন পেতনীর দিকে একবারের জন্যেও তাকাইলোও না। সবটুকু ভালবাসা সে পেতনীর প্রতি নিবেদন করিল। একবছর পর পেতনীর মন গলিতে লাগিল। সে ভুতের ভালবাসার প্রতি সাড়া দিল। অবশেষে ভুত, পেতনীকে পাইল। পেতনী ভুতের হাত ধরিয়া গাব গাছ হইতে চলিয়া গেল তালগাছের আগায়।

এখন তাহরা মনের সুখে প্রেম করে আর তাল খাইয়া বাউয়া বিলাই টাইপের পোলাপানের মাথায় তালের আটি নিক্ষেপ করে…..

যুলকিফল (আঃ)

মূসা (আঃ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *