বড় মনমরা হয়ে আছি। ছেলেটার জন্য কিছুতেই পাত্রী খুঁজে পাচ্ছি না। ছেলে আমার ছোট থেকেই লম্বাচওড়া, স্মার্ট, খেলাধুলায় চ্যাম্পিয়ান, বিশেষ করে হাই জাম্পে। যখন তখন দুই মিটার উঁচু লাফ দিতে পারত। কিন্তু আমাদের সমাজে আবার মেয়েদের বড় খাঁই। ওনারা সহজে কাউকে পাত্তা দেন না। ছেলেদের হাঁটিয়ে, কথা কইয়ে, গান গাইয়ে, বাজিয়ে দেখে তবে বেটিরা পছন্দ করেন। ছেলেটা আবার আমার তেমন বলিয়ে-কইয়ে নয়, গাইয়েও নয়। ভালো গাইতে না জানলে কন্যেদের মন ওঠে না কিনা। তাই ছোঁড়াগুলো দুবেলা গলার শির ফুলিয়ে গাইতে থাকে, আর বৃষ্টি পড়লে তো কথাই নেই। বৃষ্টিতে ভিজে ছোঁড়াগুলোর আওয়াজ আরও খোলতাই দেয়। ছুঁড়িগুলোর পছন্দও বলিহারি। তাদের আবার মন্দ্রমধুর ব্যারিটোন গলার স্বর পছন্দ নয়। তাদের পছন্দ সরু গলার চিলচিৎকার। ভাবুন দিকি বচ্চনের আওয়াজের বদলে হিমেশ রেশমিয়া! এদিকে হয়েছে কি, যত গাড়িঘোড়া বাড়ছে, শব্দদূষণ বাড়ছে, আমাদের ছেলেপুলেগুলোর গলার আওয়াজ তত বসে যাচ্ছে। ছেলেটাকে বারবার বলেছিলাম “আমাদের গাঁ’য়ের পুকুরই ভালো, শোরগোল নেই, এখানেই থাক বাবা, লক্ষীপানা একটা বৌ আনব তোর জন্য, বৌয়ের সাথে পদ্মপাতায় বসে দোল খাবি, গেঁড়িগুগলি ঠিক জুটে যাবে দুবেলা”। তা মায়ের কথা কানে নিলে তো! পাততাড়ি গুটিয়ে এল শহরে, এখন কনে জুটছে না। দুবেলা গলা সাধছে এখন, কিন্তু গাড়িঘোড়ার আওয়াজ ছাড়িয়ে সেই রেওয়াজ কনেদের কানে পৌঁছালে তো! এদিকে বেপাড়ার বেঁটে লিকপিকে ছোকরাগুলো কাঁসীর মত সরু গলার আওয়াজ নিয়ে দিব্যি কনে পেয়ে যাচ্ছে! ছেলের মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না, যে শহরের এত আওয়াজ ছাড়িয়ে কিছুতেই ওর গলার আওয়াজ উঠবে না। আর শহুরে কনের আশায় বসে থাকলে আর হয়তো কনেই জুটবে না! কে জানে, নাতিনাতনীর মুখ দেখা হবে কিনা আমার এ জন্মে।
এতদিন তো আপনারা মনিষ্যিরা আমাদের কেটেকুটে পর্দাফাই করে, হাত পাকিয়ে নিজেরা সব ডাক্তার হয়েছেন! বলুন দিকিনি আমাদের এই অদ্ভুত সমিস্যের কোন নিদান আছে নাকি আপনাদের কাছে?