জুযারের হাতেই কেবল খুলবে শামারদাল ভাণ্ডারের মুখ। তাকে ছাড়া কারো পক্ষেই ওই ভাণ্ডার খোলা সম্ভব নয়। সে কারণেই আব্দুস সামাদ জুযারকে তার পরিবারের খরচ বাবদ এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে তাকে নিয়ে রওনা হলো শামারদাল শহরের দিকে। যেতে যেতে ক্লান্ত হয়ে পড়লো জুযার। আব্দুস সামাদকে বললো: কী ভুল করলাম! সাথে যদি কিছু খাবার নিয়ে আসতাম! আব্দুস সামাদ খচ্চরকে থামিয়ে বললো: কী খেতে চাও তুমি বলো! ঝলসানো মুরগি? খাসির কাবাব? মিষ্টি পোলাও?
জুযার বললো: যে খাবারগুলোর কথা বললে সেগুলো যদি এখানে পাওয়া যেত! এখন যেহেতু কিছুই নাই অন্তত সামান্য রুটি পনির হলেও তো চলতো।
আব্দুস সামাদ হেঁসে বললো: ‘যেসব খাবারের কথা বলেছি সব খাবারই হাজির করবো’। এই বলে খচ্চরের পিঠের জিনের ভেতর হাত ঢুকালো এবং জুযারের চোখে এক পৃথিবী বিস্ময় ঢেলে দিয়ে জিনের ভেতর থেকে অনেক পাত্র ভর্তি খাবার বের করে আনলো। অনেক বলতে চব্বিশটি পাত্র ভর্তি খাবার। প্রত্যেক পাত্রেই আলাদা ধরনের খাবার। দস্তরখানে খাবার ভর্তি। জুযার তো হতবাক। তার মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পর সে বললো: জিনের ভেতর কি কিচেন রুম কিংবা বাবুর্চি আছে যে এতো খাবার তুমি বের করে আনলে?
আব্দুস সামাদ বললো: এই জিনটা যাদুর জিন।
জুযার আর কিছু না বলে খেতে শুরু করলো। দু’জনই একেবারে পেট ভরে খাবার খেল। জিনের ভেতর থেকে পানির একটি পাত্র বের করে ওই পানি দিয়ে দু’জন ওজু করে নামায পড়ে আবার রওনা হলো।
আব্দুস সামাদ জুযারকে জিজ্ঞেস করলো: তুমি বলতে পারবে আমরা কতোটা পথ এসেছি।
জুযার বললো: দিনের অর্ধেক তো আমরা রাস্তায়…।
আব্দুস সামাদ হেঁসে বললো: আমরা প্রায় এক মাসের পরিমাণ রাস্তা পেরিয়ে এসেছি।
জুযার আশ্চর্য হয়ে আব্দুস সামাদের দিকে তাকালো।
আব্দুস সামাদ বললো: আশ্চর্যের কিছু নেই। আমার খচ্চর প্রতিদিন এক বছরের মতো পথ চলতে পারে। কিন্তু তোমার কারণে তাকে আমি আস্তে আস্তে চালাচ্ছি যেন তুমি ভয় না পাও।
তারা চারদিন পথ চললো। পঞ্চম দিনে গিয়ে পৌঁছলো তাদের গন্তব্যে। শহরের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। বিরাট একটা ঘরের সামনে গিয়ে খচ্চরকে থামালো।
আব্দুস সামাদ বাহনের পিঠ থেকে নেমে ওই ঘরের দরোজায় টোকা দিল। একটা ছোট্ট মেয়ে ঘরের দরোজা খুলে দিল। আব্দুস সামাদ খচ্চরের পিঠ থেকে যাদুময় জিনটা হাতে নিয়ে খচ্চরকে বললো: ‘চলে যাও’।
অমনি খচ্চরের পায়ের নীচের মাটিতে ফাটল সৃষ্টি হলো। খচ্চর ওই মাটির ফাটলে ঢুকে গেল এবং ফাটল বন্ধ হয়ে আগের মতোই সমান হয়ে গেল। আব্দুস সামাদ আর জুযার ঘরে ঢুকলো।
ঘরটা যেমন বড়োসড়ো তেমনি সুন্দর এবং পরিপাটি করে সাজানো। পুরো বাসাটাই খুব মূল্যবান কার্পেট দিয়ে ঢাকা। আব্দুস সামাদ ছোট্ট মেয়েটিকে ডেকে বললো: ব্যাগটা নিয়ে আসো তো!
মেয়েটি গিয়ে একটা ব্যাগ নিয়ে এলো। আব্দুস সামাদ ব্যাগ খুলে চমৎকার একটা পোশাক বের করে জুযারকে সেটা পরতে বললো। জুযার পোশাক পরার পর তাকে দেখতে একেবারে শাহজাদার মতো লাগলো। আব্দুস সামাদ যাদুময় জিনের ভেতর হাত ঢুকিয়ে নানারকম খাবার দাবার বের করে আনলো। ভালো করে খেয়ে দেয়ে দিলো ঘুম। টানা ঘুম দিয়ে উঠে পরদিনও আব্দুস সামাদ জুযারকে নতুন পোশাক দিলো। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই নতুন পোশাক আর নতুন নতুন খাবার দাবার খেতে লাগলো সে।
বিশ দিন কেটে গেল। একুশতম দিনের সকালে আব্দুস সামাদ জুযারকে বললো: আজই সেই প্রতীক্ষিত দিন। আজ আমরা বেরুবো এবং শামারদাল সিন্দুক খুলতে যাবো।
জুযার উঠে দাঁড়িয়ে আব্দুস সামাদের সাথে বাইরে বেরিয়ে পড়লো। বাইরে দুটি খচ্চর প্রস্তুত ছিল। সেগুলোর পিঠে সওয়ার হলো এবং রওনা হয়ে গেল। কয়েক ঘণ্টা খচ্চরের পিঠে চড়ে চললো। দুপুরের কাছাকাছি সময় তারা গিয়ে পৌঁছলো বহমান পানিময় একটি নহরের কাছে। সেখানে তারা খচ্চরের পিঠ থেকে নামলো। আব্দুস সামাদ হাত নেড়ে কেমন যেন একটা ইঙ্গিত করলো। অমনি দুই গোলাম এসে হাজির হয়ে গেল।তারা এসেই খচ্চর দুটোকে দুদিকে নিয়ে গেল এবং বড়ো একটা তাঁবু খাটিয়ে ভেতরে কার্পেট দিয়ে সাজিয়ে দিলো। যাদুর জিন এবং মাছের দুটি পাত্র এনে ভেতরে রাখলো।
খাওয়া দাওয়া সেরে আব্দুস সামাদ মাছের দুটি পাত্র দুই হাতে নিয়ে কী যেন দোয়া পড়লো। হঠাৎ পাত্র দুটো ফেটে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল এবং ভাঙা টুকরোগুলোর ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দুটি মানুষ। তাদের দু’জনেরই হাত বাঁধা। তারা কাকুতি মিনতি করে বললো: আব্দুস সামাদ আমাদেরকে ছেড়ে দাও!
আব্দুস সামাদ বললো: তোরা মুক্তি পাবি না, যদি না কথা দিস শামারদাল সিন্দুক খুলে দিবি।
ওই দুই লোক বললো: তুমি মাছ শিকারী জুযারকে নিয়ে আসো! সে-ই কেবল পারবে ওই সিন্দুক খুলতে।
আব্দুস সামাদ বললো: জুযার তো এখানেই আছে। সে তো তোদেরকে দেখছে, তোদের কথাও শুনতে পাচ্ছে।
ওই দুই লোক একথা শুনে কথা দিলো যে তারা সিন্দুক খুলে দেবে। আব্দুস সামাদ ওই লোক দুটিকে ছেড়ে দিলো।
এরপর বড়ো একটা লাঠি এবং লাল রঙের কিছু আকিক পাথর এনে জুযারকে বললো: আমি এখন এটা দোয়া পড়বো। দোয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কারো সাথে কথা বলবো না। তার আগে তোমাকে বলছি কী করতে হবে। ভালো করে শোনো এবং মনে রেখো যাতে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। আমি দোয়া করতে করতে আগুনে ধূপ ঢালবো, তখন এই নহরের পানি শুকিয়ে যাবে এবং সোনার তৈরি বিরাট একটা দরোজা দেখতে পাবে। মণিমুক্তার দুটি কড়া হলো এই দরোজার নিশানা। তুমি দরোজায় গিয়ে ওই কড়া দুটোতে তিন বার নাড়া দিয়ে বলবে: আমি মাছ শিকারি জুযার! বলতেই দরোজা খুলে যাবে।
তখন দেখবে তলোয়ার হাতে একটা লোক দরোজা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। সে তোমাকে বলবে: ‘তুমি যদি জুযার হয়ে থাকো, তাহলে মাথা নোয়াও! তোমার মাথা ঘাড় থেকে আলাদা করে ফলবো’! তুমি ওই লোকের হুমকিতে ভয় পাবে না। মাথা নোয়াবে! সে তলোয়ার উঠাবে কিন্তু তোমার ঘাড়ে আঘাত হানার আগেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নিজেই মারা যাবে। মনে রাখতে হবে, যদি তুমি ঘাড় পেছনে তোলো তাহলে মারা পড়বে। এবার দরোজা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে। একটু সামনে যাবে। আরেকটি দরোজা দেখতে পাবে। ওই দরোজাতেও টোকা দেবে। দরোজা খুলে যাবে। দেখবে বল্লম হাতে এক দারোয়ান তোমার দিকে এগিয়ে আসছে। সে তোমাকে লক্ষ্য করে বল্লম ছুঁড়ে মারবে। ভয় পেও না। বুক খুলে দেবে। তোমার বুকে ওই বল্লম আঘাত হানবে ঠিকই কিন্তু তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। উল্টো ওই দারোয়ান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যাবে। তুমি এবার সহজেই সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।
এবার তৃতীয় দরোজা সামনে পড়বে। তাতেও টোকা দেবে। তখন তীর ধনুক হাতে এক লোক বেরিয়ে আসবে। তোমার দিকে একটা তীর ছুঁড়েও মারবে। তুমি কিন্তু পিছু হটবে না, পিছে এলেই মারা যাবে। এভাবে আব্দুস সামাদ সপ্তম দরোজা পর্যন্ত যা যা ঘটনা ঘটবে এবং সেসব থেকে কীভাবে বিপদমুক্ত থাকা যাবে সকল বর্ণনা দিলো জুযারকে। সপ্তম দরোজার বিপদ কেটে ওঠার পর সামনে পড়বে গুপ্ত ধন-ভাণ্ডারের দরোজা।#
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।