বোকা বাঘ আর চালাক গরু

বনের ধারে একটা মাঠ। সেই মাঠের এককোণায় বাঁধা ছিল একটা গরু।

এমন সময় বন থেকে বেরিয়ে এল বিশাল এক বাঘ। গরুটাকে দেখে তার জিভে জল এসে গেল। বলল, “ওরে গাই, তোকে তো আমি খাই।” গরু বলল, “সে কী গো বাঘমামা, শেষমেশ আমায়! আজ বুঝি হরিণ-টরিণ ধরতে পারো নি?” বাঘ বলল, “খাব খাব খাব খাব। হালুম হুম।” “সে নয় খাবে। কী আর করা যাবে! তবে এখন আমায় খেলে তো তোমার বড্ড লোসকান হয়ে যাবে গো!” “কেন কেন? ঘোঁত ঘোঁত?”

“এই দেখো না, আমার মালিক আমায় কেমন দড়ি দিয়ে খোঁটায় বেঁধে রেখেছে। সারা মাঠে এত ঘাস, অথচ আমি নাগালই পাচ্ছি না, তো খাব কী? যেটুকু নাগাল পেয়েছি কখন খেয়ে ফেলেছি। ভাল করে না খেলে কি শরীরে মাংস হয়? এখন আমার শরীরে যেটুকু মাংস আছে তাতে তোমার পেটই ভরবে না। বেকার কষ্ট করে খাবে।” “বটে বটে! তোর মালিক তো বেজায় বোকা দেখছি।” “সে আর বলতে! রোজ এত দুধ দেই, সেই খেয়েও মানুষগুলোর বুদ্ধি হয় না।” “কিন্তু আমার যে খিদে পেয়েছে? তোকে আমি খাবোই।” “সে তো খাবেই। তার আগে এক কাজ করো মামা, তাহলে আমারও পেট ভরবে, তোমারও পেট ভরবে।” “কী কাজ শুনি?” “আমার দড়িটা খুলে দাও তুমি। আমি পেটভরে মাঠের ঘাস খেয়ে শরীরে মাংস করে নি, তারপর তুমি আমায় খেয়ে পেট ভরিও ’খন।” “বেশ, বেশ। বুদ্ধিটা মন্দ নয়। দড়ি আমি খুলে দিয়ে যাচ্ছি, বিকেলে এসে তোকে খাবো।” এই বলে বাঘ এক কামড়ে দড়িটাকে কেটে দিয়ে বনের ভেতর ঘুমোতে চলে গেল।

গরু সারাদিন নিশ্চিন্তে ঘাস খেল। বিকেলে বাঘ এসে বলল, “কই, রেডি?” গরু বলল, “রেডি আর কোথায়? দেখো না সারাদিনে কোনটুকু ঘাস খেতে পেরেছি। এইটুকুতে শরীরে আর কতটা মাংস লেগেছে?” “তাই তো দেখছি। তাড়াতাড়ি খাচ্ছিস না কেন? দড়ি খুলে দিয়ে গেলাম!” “মামা, তাড়াতাড়ি খেলে বদহজম হয়ে যাবে, পেট খারাপ হবে। তখন যেটুকু মাংস গায়ে লেগেছিল সেটুকুও ঝরে যাবে। পেট ভরবে না তোমার। তুমি এক কাজ করো বরং।” “ফের কী কাজ? তুই আমায় খুব খাটাচ্ছিস কিন্তু।” “না না, সেরকম খাটুনির কিছু নয়। বলছি, কাল তো আবার আমার মালিক আমায় খোঁটায় বেঁধে রেখে যাবে। তুমি এক ফাঁকে এসে দড়িটা খুলে দিয়ে যেও। আমি আরও অনেক ঘাস খেয়ে শরীরে মাংস করে রাখব।” “বেশ, তাই হবে। কাল বিকেলে কিন্তু তোকে খাবোই।” “অবশ্যই খাবে, একশবার খাবে। একদম চিন্তা কোরো না।”

পরদিন সকালে বাঘ ফের এসে গরুর দড়ি কেটে দিয়ে গেল। তারপর বনে গিয়ে সারাদিন ঘুমোল।

বিকেলে মাঠে এসে দেখল মাঠের অর্ধেক ঘাসও খাওয়া হয় নি। রেগেমেগে বলল, “গরু, তুই কিন্তু খুব ফাঁকি মারছিস, ঘ্রাউম। আজও পুরো ঘাস খাওয়া হয় নি। আমার সঙ্গে চালাকি করছিস?” গরু ব্যস্ত হয়ে বলল, “সে কী মামা, চালাকি করব কেন? রাম, রাম। আমি তো প্রাণপণে সারাদিন ঘাস খেয়েই চলেছি। এত বড় মাঠের ঘাস শেষ করা কি চাট্টিখানি কথা? আর শেষ না করলেও তো চলবে না। তুমি কাল আবার এসে আমার দড়ি খুলে দিয়ে যেও, কাল অনেকটা খেয়ে ফেলব। তোমায় কথা দিচ্ছি তিন দিনের ভেতর মাঠের সমস্ত ঘাস আমি খেয়ে শেষ করে দেব। তখন দেখো আমার চেহারাটা কেমন নাদুসনুদুস হয়, তুমি এক হপ্তা বসে আমায় খেতে পারবে। এই ক’দিন ছোটখাটো শিকার মেরে পেট চালিয়ে নাও। তারপর তো আমি আছিই।”

পরের তিনদিনে গরু সত্যিই মাঠের প্রায় সব ঘাস শেষ করে ফেলল। কেবল বনের ধারে এক বিশাল অশথ গাছের তলায় একফালি ঘাস পড়ে রইল। চারদিনের দিন সকালবেলা বাঘ এসে বলল, “আজ তোকে খাব। হালুম। পাঁচদিন ধরে প্রায় না খেয়ে আছি, তোকে খাব বলে। আজ আর তোর নিস্তার নেই। হুম।”

গরু বলল, “হ্যাঁ মামা, বোসো। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমি রেডি। তবে খাবার আগে দড়িটা আর একবার খুলে দাও। ওই গাছের তলায় একফালি ঘাস পড়ে আছে, ওটাও খেয়ে ফেলি, আর পড়ে থাকে কেন? তারপর তুমি আমায় খাও।” “বেশ, খুলে দিয়ে আমি এইখানেই বসছি। আজ আর ঘুমোতে যাব না। তাড়াতাড়ি ওটুকু খেয়ে ফ্যাল, তারপর আমার পালা।”

বাঘ দড়ি কেটে দিতেই গরু ধীরেসুস্থে হেঁটে গিয়ে তরতর করে অশথ গাছের ওপর উঠে পড়ল। সে তো গল্পের গরু! গাছে উঠতে পারে।

একেবারে মগডালে উঠে আরাম করে বসে গরু চেঁচিয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ, বাঘমামা। তুমি বসে থাকো ওখানে। আমি একমাস আর নামছি না। গত পাঁচদিন যে খাওয়া খেয়েছি, এবার শুধু জাবর কাটব।” বাঘ কিছুক্ষণ ঘাড় তুলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। তারপর ঘ্রাউউউম করে এক হুঙ্কার ছেড়ে বাধ্য হয়ে অন্য শিকারের খোঁজে রওনা দিল।

স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন

বিভ্রাট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *