গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আর মনে মনে হাসছিল। নৌকো এগিয়ে চলল। সাহেব বন্দুকের গোড়ায় হাত দিলেন। আঙ্গুলগুলো তার নিশপিশ করতে লাগল। আর ঠিক সেই মুহুর্তে-ঝুপ ঝুপ করে নদীতে পড়েই ধূর্ত কুমীর এক সেকেন্ডে অদৃশ্য হয়ে গেল। বন্দুক হাতে শিকারী সাহেব বোকার মতো হাঁ করে চেয়ে রইলেন ।
কিন্তু মজা হল তার পরে। নৌকো ফিরে চলেছে। বোধহয় চারপাঁচ গজ তারা এগিয়েছে, হঠাৎ নৌকো নড়ে উঠল–নড়েই ক্ষান্ত হল না, নদীতে যেন সহসা ঢেউ উঠেছে এমনি দোলা দুলতে লাগল। দেখতে দেখতে নৌকোর একটা দিক ক্রমশঃ উপরে উঠতে উঠতে বেশ খানিক কাত হয়েই পড়ল। ব্যাপারটা কি হচ্ছে ভালো করে বুঝবারও অবসর হল না, ভয়ে তখন বীরত্রয়ের হাত-পা কাঁপছে ঠকঠক কযরে-চোখ উঠেছে কপালে। সাহেব মনে মনে স্মরণ করছেন ত্রাণকর্তা পিতা যিশুর নাম। এমন সময় নৌকোর গা ঘেঁষেই ভোঁ-ও ও-স্-স্ করে ভেসে উঠল কুমীরের এক বিশাল মাথা। আর দেরি করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কম্পমান হাতেই মিঃ অগাস্টাস গুলি ছুড়লেন কুমীরের চোয়াল লক্ষ্য করে। ঠিক জায়গা মতো গুলি লাগল কিনা কিছুই বোঝা গেল না, কুমীর মাথা নীচু করল কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঝাঁকুনির চোটে নৌকোখানাকে এক সেকেণ্ডেই উলটে দিয়ে গেল।
ঠিক সেই মুহুর্তে সেভ মি, ও মাই গড়’ বলে ভয়ে আধমরা সাহেব উপায়য়ান্তর না দেখে নদীতে লাফিয়ে পড়লেন। বন্দুকটা কিন্তু তখনো তিনি হাড়ছাড়া করেননি। জলের তলায় ডুব দিয়ে কুমীর শিকার করবেন কিনা তা তিনিই জানেন।
ভাগ্যিস মদীর সে জায়গাটায় জল ততো গভীর ছিল না। ভয়ে আর শীতে কাঁপতে কাঁপতে সাহেব পাড়ের দিকে ছুটলেন। অতিকষ্টে হাঁপাতে হাঁপাতে অনেক হাবুডুবু খেয়ে আর বেশ খানিকটা ঠাণ্ডা জল গিয়ে ঠিক ভিজে বেড়ালটির মতো হামাগুড়ি দিয়ে তিনি এসে ডাঙ্গায় উঠলেন। সঙ্গী দু’জন তার আগেই ডাঙায় উঠে হাসতে আরম্ভ করেছে। তাই দেখে সাহেবও এবার একটু হাসলেন—অতিকষ্টের কণ্ঠহাসি। অসহ্য শীতে তখনো তিনি কাঁপছেন হি-হি করে। তার এ দুরবস্থা দেখে স্বাভাবতই মনে হ’ল কুমির শিকারের সাধ বোধহয় বেচারার মিটেই গেছে।
কিন্তু আসলে তা নয়। এভাবে নাকানি-চুবানি খেয়ে নাজেহাল হওয়ার পরে মাথায় যেন তাঁর খুন চেপে গেল। রাত নেই, দিন নেই-অবসর পেলেই বন্দুক হাতে নিয়ে তিনি পাগলের মতো নদীর পাড়ে কুমীরের খোঁজে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
এক মাস কেটে গেল।
এবার মিঃ অগাস্টাসের মনের অবস্থা একেবারেই কহিল। মনে মনে হার মেনে তিনি তখন ভাবছেন, এবার হাল ছেড়েই দেবেন। তিনি তখন নারায়নগঞ্জ থেকে ত্রিশ মাইল দূরে ছোট্ট একটা গাঁয়ে। সেখানে হঠাৎ খবর পেলেন, পাশের গায়ের একটি মেয়েকে কুমীরে নিয়ে গেছে।
এ খবর পেয়ে সরকারী কাজকর্ম তার মাথায় উঠল। কাগজপত্র গুটিয়ে রেখে তিনি গিয়ে আস্তান গাড়লেন নদীর পাড়ে। মেয়েদের কাপড় কাচা, বাসন মাজা ঘাটের পাশেই নদীতে ঝুঁকে পড়েছে একটা ঝাকড় গাছ। বন্দুক হাতে সাহেব গিয়ে সেই গাছে লুকিয়ে রইলেন।
সন্ধ্যা উত্রে গিয়ে রাত হল। সারা রাতের ভেতর দু’বার তিনি টের পেলেন, আশেপাশে কোথাও কুমীরটা মাথা উঁচু করে সশব্দে নিঃশ্বাস ফেলছে। কিন্তু ঠিক কোথায় যে সে মাথা তুলেছে তা বোঝা গেল না। কুমীর বোধহয় মানুষের উপস্থিতি টের পেয়েছিল, তাই সারা রাতের ভেতর সে আর ঘাটের কাছেই ভিড়ল না।
ভোর হল। সাহেব চটেমটে গাছ থেকে নেমে এলেন। সারাটা রাত ঠায় গাছে বসে থেকে সারা গায়ে তার ব্যাথা ধরে গেছে। নদীর দিকে চেয়ে আক্রোশে হাত পা নেড়ে তিনি নিমকহারাম কুমীর জাতটাকে অভিসম্পাত দিতে লাগলেন। এ ছাড়া করবার কি-ই বা আছে।
ঘুম ভাঙ্গতেই কৌতুহলী গ্রামবাসীরা দু’একজন করে নদীর পাড়ে এসে জমতে লাগল তামাশা দেখবার জন্যে । তাদের সঙ্গে লাঠিভর করে এসে দাঁড়াল খুনখুনে এক বুড়ী। ফোকলা দাঁতে এক গালে হেসে বুড়ী মিঃ অগাস্টাসের সামনে গিয়ে বলল, ওটা কুমীর নয় সায়েব, ওটা শয়তান ও শয়তানকে মারা তোমার কাজ নয়। ওকে কি করে মারতে হবে, এসো আমার সঙ্গে, শিখিয়ে দিই তোমাকে।
বুড়ী তার হাতের লাঠি নেড়ে নেড়ে কি বলছে তার এক বর্ণও বুঝতে না পেরে হতবাক সাহেব এদিক ওদিক চাইতে লাগলেন। বুড়ী তখন হাত ইশারায় তাকে ডেকে নিয়ে গেল নিজের বাড়িতে। তারপর তিনটে টাকা চেয়ে নিয়ে ছেলেকে পাঠাল কি একটা জিনিস কিনে আনতে।
গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।