গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নারায়নগঞ্জ বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ নদীবন্দর। এ বন্দর থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার পাট রপ্তানী হয় দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে। নারায়নগঞ্জ থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে ব্ৰহ্মপুত্র নদের পাড়ে এক সময়ে একটি কুঠিবাড়ী ছিল। বাড়ীটি ব্যবহৃত হতো ডাকবাংলো হিসেবে। সরকারী কর্মচারির কাজে এসে সময় সময় সেই বাড়ীতে আশ্রয় নিতেন। ঢাকা জেলায় জরিপের কাজ তদারকের জন্যে মিঃ অগাস্টাস সোমার ভাইল নামে একজন ইংরেজ কিছুকাল সেই বাড়ীতে ছিলেন। পুরাতন এ বাড়ীটির আশেপাশে গ্রাম্য লোকজন অনেক ছিল কিন্তু সাহেবের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে এমন লোক সেই তল্লাটে ছিল না বললেই চলে। কাজেই মিঃ অগাস্টাসের অবসর ছিল অফুরন্ত। এই অফুরন্ত অবসর তিনি কাটাতেন বারান্দায় আরাম কেদারায় বসে কখনো বই পড়ে, কখনো বা নদীর দৃশ্য দেখে।
একদিন দুপুরবেলা এমনি এক অবসর সময়ে তিনি আরাম কেদারায় শুয়ে ঝিমুচ্ছিলেন, হঠাৎ অদূরে নদীর ঘাটে গ্রাম্য স্ত্রীলোকদের হৈ-চৈ শব্দে তার তন্দ্র ছুটে গেল। তিনি দাঁড়িয়ে দেখলেন, স্নানরতা মেয়েরা ঘাট থেকে পাড়ে উঠে ব্যস্তভাবে ছুটোছুটি করছে আর প্রাণপণে চীৎকার করছে। ব্যাপার কি খবর নিয়ে জানা গেল, সঙ্গিনীদের চোখের সামনেই গ্রামের এক বৌকে কুমীরে নিয়ে গেছে। আশেপাশের গ্রামের মেয়ের প্রতিদিনই এ সময়ে দল বেঁধে নদীতে স্নান করতে আসে কিন্তু এ রকম অঘটন স্মরণকালের ভেতর কখনো ঘটেনি।
শোনা যায়, কুমীর শিকার ধরেই টুপ করে গিলে খেয়ে ফেলে না বরং শিকার মুখে নিয়ে বার কয়েক নদীতে ভেসে ওঠে তারপরে এক সময়ে একবারেই ডুবে যায়। মিঃ অগাস্টাস বন্দুক হাতে তাড়াতাড়ি ছুটে এলেন নদীর পাড়ে। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে এদিক ওদিক কুমীরের খোঁজে চাইতে লাগলেন। কিন্তু কুমীরের আর দেখা পাওয়া গেল না।
ভারতবর্ষে চাকুরী নিয়ে এসে অবধি মিঃ অগাস্টাস নানান জায়গায় ঘুরে অনেক জীবজন্তু শিকার করেছেন। তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, যেমন করেই হোক এই কুমীরটাকে জব্দ করতেই হবে।
এই দুর্ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে একদিন ভোরবেলা হঠাৎ খবর পাওয়া গেল, সেই কুমীরটা কাছেই এক চরের ওপর উঠে দিব্যে আরামে শুয়ে আছে।
তখন শীতকাল। রবিবারের সেই ভোরবেলায় ছিল কনকনে শীত। সেই সঙ্গে যোগ দিয়েছে হাড় কাঁপানো ঝিরঝিরে উত্তুরে বাতাস। সাহেব গরম জামা কাপড় পরে বারান্দায় রোদে বসে আরাম করছিলেন। চায়ের পেয়ালা তার হাতে। খবর পেয়েই পেয়ালা নামিয়ে রেখে বন্দুক নিয়ে তিনি ছুটলেন চরের দিকে নদীর পাড় ধরে চর বরাবর গিয়ে দেখা গেল, সত্যিই বিশালাকায় এক কুমীর চরের ওপরে উঠে রোদে পিঠ দিয়ে পড়ে আছে, ঠিক যেন প্রকাণ্ড গাছের একটা গুড়ি। আশেপাশে দু’একটা গাংচিল জাতীয় পাখী ছাড়া আর কিছুই কোথাও দেখা যাচ্ছেনা। তবু এতদূর থেকে গুলি করে কুমীরকে কাবু করা সহজসাধ্য কাজ নয়। কুমীরের শ্যাওলাপড়া পিঠে গুলি বরং ফসকে অন্য দিকে চলে যাবে কুমীর তাতে সামান্য আঘাত পেলেও ঘায়েল হবে না। কজেই, দরকার একটি নৌকোর। নৌকো করে কুমীরের মুখ বরাবর গিয়ে গুলি করতে হবে।
সাহেবের কথা মতো দু’জন সাহসী যুবক তাড়াতাড়ি গিয়ে একটি ডিঙ্গি নৌকো নিয়ে এল। নৌকোর ওপরটা ছেয়ে ফেলা হ’ল গাছের ডালপালা আর জংলা লতাপাতা দিয়ে। তারপর সঙ্গী দু’জনকে নিয়ে সাহেব নৌকো ভাসিয়ে দিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, কচুরিপানার মতো ঠিক যেন আস্ত একটা ঝোপ নদীর জলে ভেসে চলেছে।
মিঃ অগাস্টাসের মনে আনন্দ আর ধরে না। কুমীর যেন তার হাতের মুঠোয় এসে গেছে এমনি মনের ভাব। লতাপাতার আড়ালে লুকিয়ে থেকে বন্দুক হাতে তিনি কুমীরের দিকে একদৃষ্টি চেয়ে আছেন আর ভাবছেন কুমীর কোথায় পালায় তিনি এবার দেখে নেবেন।
ওদিকে কুমীরও বোধহয় আড়চোখে চেয়ে সাহেবের কীর্তিকলাপ লক্ষ্য করছিল
গল্পের ২য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।