পরশু রাতে দৌড়তে গিয়ে পা টা একটু মচকে মত গেছে বিষ্টুচোণের কিন্তু তা বলে তো আর ‘কাজ’ থেমে থাকবে না। কাজ থেমে গেলে পেট চলবে কী করে? কাল একটু শুয়ে বসে বিশ্রাম নিয়ে আজ আবার ‘নাইট ডিউটি’ তে বেরিয়েছে বিষ্টুচোণ। বিয়ে হয়ে বাড়িতে আসার পর বেষ্পতি তাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি কী ডিউটি করগো? আমার বাপের বাড়ির দেশেও তো আমাদের দুজন পড়শি রাতের ডিউটি করে। তারা তো সেই নটা –সাড়ে নটায় বেরিয়ে যায়, আবার সকাল সাত টা নাগাদ ফিরে আসে। তোমার ডিউটি তো দেখি বড় অদ্ভুত। রাত দেড়টার সময় কী ডিউটি শুরু হয়গো? বিষ্টুচোণ বলেছিল, তুমি মেয়েমানুষ, অতশত বুঝবেনা।
বেষ্পতির একদম ভাল লাগেনা এসব। মানুষটা রাত দুপুরে বেরিয়ে যায়, ঘরের দরজাটাও তো তেমন পোক্ত নয়, যদি চোর ডাকাত ঢুকে পড়ে রাত বিরেতে? সে কথা বলতে বিষ্টু তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে, দেখি তো কোন চোরের কত খ্যামতা, বিষ্টু মোদকের ঘরে ঢোকে? এই শুনে বেষ্পতি বলে, আরে হ্যাঁ, তাইতো, আমরাতো মোদক, তবে তুমি মিষ্টির দোকান দাও না কেন? কী দরকার এই সব বিচ্ছিরি ‘নাইট ডিউটি’ করার? বিষ্টু বলে এই অজ পাড়াগাঁয়ে কে কিনবে তোমার মিষ্টি? বেষ্পতি বলে, তবে কোলকাতায় যাও। বিষ্টু বলে, কোলকাতায় একটা দোকানের সেলামি কত জান? তাছাড়া ওখানেও কেউ মিষ্টি খায়না আজকাল, বাবুদের তো সব ‘ডাইবিটিশ’, কেউ মিষ্টি খায়না। বেষ্পতি বলে, কচু, এই তো আমার বিয়ের আগে ওখানে দিদি-জামাইবাবুর বাড়ি কতবার বেড়াতে গেছি, কী বড় বড় আলো ঝলমলে দোকান, আর কত রকম যে মিষ্টি, ভেবেছিলাম খেয়ে দেখি, তবে ওখানে দাম বড্ড বেশি। বিষ্টুচোণ বিজ্ঞের মত মুখ করে বলে, ওখানে মিষ্টি কেবল সাজানোই থাকে, কেউ কেনেনা। বেষ্পতি বলে, যাঃ, তাই কখনও হয়? তবে দোকানদারদের তো সবই লোকসান – বিষ্টুচোণ বলে, ও সে কায়দা আছে, তুমি বুঝবেনা।
ভাল নাম শ্রী বিষ্ণু চরণ মোদক। নিজে মিষ্টি না বানালেও বিষ্টু জানে বানানোর সব কায়দা কানুন। ঠাকুদ্দার দোকান ছিল তো। বিষ্ণু ছেলেবেলা থেকেই হাতে হাতে যোগাড় দিত ঠাকুদ্দাকে। ঠাকুদ্দা যা জিলিপি বানাতো, ওই বেষ্পতির জামাইবাবুদের কোলকাতাতেও অমন জিলিপির কারিগর একজনও নেই। একফোঁটা রঙ দিতনা ঠাকুদ্দা, বলত, এই সব রঙ মানুষের ক্ষতি করে। দাদাভাই, তুমি বড় হয়ে মস্ত কারিগর হবে। দেখো ভাই, মানুষকে জেনেশুনে এমন জিনিষ খাইওনা, যাতে তার ক্ষতি হয়। রঙ না দিলেও ভাজার গুণে তাতে দিব্যি রঙ ধরত। হাতে হাতে উড়ে যেত সেই জিলিপি, এই অজ পাড়া গাঁয়েই।
ঠাকুদ্দার দানাদার আর চমচমেরও কদর ছিল খুব। গাঁয়ের লোক তো বটেই, কোলকাতা থেকেও মানুষ গাড়ি করে এসে নিয়ে যেত হারাণ মোদকের হাতে বানানো চমচম। তবে সে সব দিন গেছে। দিনে দিনে মিষ্টি বানানোর উপকরণের দাম বাড়তে লাগল। এখন বড় শহরে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মিষ্টির দাম বাড়ানো যায়, কিন্তু এখানে অত দাম দিয়ে খাবার লোক কই? হারাণ তাই আইটেম কমিয়ে দিল। ক্ষীর নামমাত্র দিয়ে সুজি, সয়াবীন, এই সব ভরে মিষ্টি বানাতে লাগল, তাতেও সুবিধে করা যায়না, চিনির দাম তো আগুন। তবু সে টানছিল কোনও রকমে। মিষ্টির জায়গায় কচুরি বানিয়ে লাভও হচ্ছিল ভালই। কিন্তু বিধি বাম, ঠাকুদ্দা পড়ল অসুখে। সে অসুখ আর সারলনা।
ঠাকুদ্দা মারা যাওয়ার পর বিষ্টুর বাপ আর দুই কাকায় কাজিয়া লাগল সম্পত্তি নিয়ে। ঘর, জমি, সব ভাগ হয়ে গেল সালিশি সভা ডেকে। দোকান তো আর ভাগ করা যায়না, তাই সেটা বেচে দেয়া হল নাসিমুল গাজিকে। সে ওখানে এখন প্লাস্টিকের চপ্পল বিক্কিরি করে। তেঁতুলবাগানের মোড়ের কাছাকাছি গেলেই বিষ্টুচোণের বুক দিয়ে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। বিষ্টু তাই ওপথ মাড়ায় না সচরাচর। খালি মনে পড়ে ঠাকুদ্দা বলেছিল, আমাদের ছেলেদের তো ব্যবসায় মতি নেই, আমি তোকেই সব শিখিয়ে যাব দাদাভাই।
বিষ্টুচোনের ‘ডিউটি’র জায়গায় আবার সামনে দিয়ে ঢোকা যায়না। বেশ কষ্ট করেই উঁচু পাঁচিলটা টপকালো বিষ্টু। বাঁ পায়ে মচকানোর ব্যথাটা ভালই বেগ দিচ্ছে। কিন্তু তাই বলে তো আর ঘরে বসে থাকা যায়না, পেট চলবে কী করে? পাঁচিলের পর বেশ খানিকটা বাগান মত। কিন্তু গাছের চেয়ে আগাছাই বেশি। এমন সুন্দর একটা বাগান পেলে ফুলে ফলে চারদিক ভরিয়ে দেয়া যেত, ভাবল বিষ্টু। এখানে কেউ দেখবার নেই মনে হচ্ছে। তিনতলা বাড়িটার পেছনের দেয়ালে গিয়ে বিষ্টুর মুখ দিয়ে বেরিয়েই গেল, বাঃ, বেঁচে থাক বাবা। এটা সে বলল, বাড়ির মালিককে। এ বাড়ির রেন পাইপগুলো লোহার। আজকাল যা সব প্লাস্টিকের পাইপ বেরিয়েছে, ‘ডিউটি’ করে সুখ নেই। দোতলা অবধি উঠেই হয়ত একটা আংটা খুলে গেল। প্রাণে বাঁচবে বিষ্টু তখন?
বেষ্পতি একদিন ভাত বাড়তে বাড়তে জিজ্ঞেস করেই বসল, আচ্ছা হ্যাঁগো, তোমায় সবাই ‘বিষ্টুচোণ’ বলে কেন? এমন অদ্ভুত নাম তো আগে শুনিনি। বিষ্টু সজনে ডাঁটা চিবোতে চিবোতে বলল, আরে ওই তো, বিষ্ণু তো দেশপাড়াগাঁয়ে কেউ বলেনা, বলে বিষ্টু। – আর চোণ? সেটা আবার কী? বেষ্পতির কৌতূহল। বিষ্টু বলল, ওমা, সেটাও বুঝলেনা? ঐ চরণ থেকে চোণ। বিষ্ণুচরণ কে ছোট করে বিষ্টুচোণ। বেষ্পতি তখনকার মত চুপ করে গেলেও, মনে ব্যাপারটা খচখচ করতেই থাকে। হরিচরন, গুরুচরণ, অনেক শুনেছে সে। কই তাদের কাউকে তো হরিচোণ বলে না কেউ? পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের নাম অমূল্যচরণ মন্ডল। একদিন বাজারের পথে তাকে ফাঁকায় ধরল বেষ্পতি। আচ্ছা কাকা, তোমার নামেও তো চরণ আছে, তো কেউ কি অমূল্যচোণ বলে তোমায়? অমূল্য তাড়াহুড়ো করে যেতে যেতে বলে, আরে না না, চ-য়ে ওকার দিয়ে অন্য একটা নাম তো চেঁচিয়ে বলা যায়না, তাই ছেলে ছোকরারা চোণ বলত ওকে। ও কিছুনা বৌমা, বিষ্টু নিজের গেরামে কোনও উত্পাত করেনা। বেষ্পতির মাথায় কিছুই ঢুকলনা।
লোহার পাইপ পেলে তরতর করে উঠে যেতে পারে বিষ্টু চোখের পলকে। এ পাইপের গজালও খুব শক্ত, চট করে খুলে আসবে এমন কোনওদিন হয়নি তার জীবনে। তবে আজকালকার ফ্ল্যাট বাড়িগুলোয় আর লোহার পাইপ লাগায়না কেউ, যা লোহার দাম । তার ওপর পুরোন বাড়ি বলে আরও সুবিধে, জানলা বন্ধ থাকলেও খড়খড়ি ফাঁক করে ছিটকিনি খোলা যায়। তারপর গ্রিল, গরাদ, যাই থাক, ওসব বিষ্টুর বাঁ হাতের খেল। তবু আজ যেন একটু কষ্টই হচ্ছিল উঠতে, পায়ের ব্যাথাটা চাপ পড়তে আবার চাগিয়ে উঠেছে, কিন্তু ওসবে আমল দিলে চলবেনা, ‘ডিউটি’ বলে কথা।
ঝুপ্ করে লাফিয়ে পড়ে অন্ধকারে চোখটা সইয়ে নিল বিষ্টু, আলো টালো জ্বালা তো একদমই যাবেনা। আর নাইট ডিউটি করতে করতে, তার চোখ এখন বেড়ালের মত আঁধার সওয়া হয়ে গেছে। এবার দেখে নিতে হবে কোন ঘরে ক’টা লোক, আর আলমারি সিন্দুকগুলো কোথায়। কিন্তু সবার আগে সেই গুরুর শেখানো মন্তরটা পড়তে হবে আর দু দিকের গেঁজেতে যে দুটো ক্যারিব্যাগের পুঁটলি গোঁজা আছে, তার ডানদিকের পুঁটলির থেকে কিছুটা কিছুটা ছড়িয়ে দিতে হবে এদিক ওদিক। গুরু তো সেই রকমই শিখিয়ে ছিল। নিজের নাকমুখ তো ভালভাবে গামছা দিয়ে জড়ানোই আছে। বাঁ দিকের পুঁটলিতে যেন ভুলেও হাত না যায়, তাহলেই সব্বোনাশ। এঘরটায় মনে হচ্ছে কেউ নেই, আসবাব পত্তরও খুবই কম। আস্তে করে দরজাটা খুলে বিষ্টু ভেতরের প্যাসেজে পা দেয়ার আগেই শুনল, ঘরের কোনার দিকে একটা কেমন যেন আওয়াজ।
বেশ ভয় ধরে গেল বিষ্টুর। এমন গোঁ গোঁ করে আওয়াজ করতে পারে বেশ বড়সড় বাঘা কুকুর। এক পা এগোলেই ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে পড়বে। ও, তাই এঘরে আসবাব পত্তর তেমন নেই, এটা তাহলে কুকুরের ঘর। বিষ্টু জমে গেল সেখানে। সামান্য নড়লেই ব্যাটা ঘ্যাঁক করে ধরবে। খুব ধীরে ধীরে বিষ্টু হাতটা নিয়ে গেল কোমরের বাঁ দিকে। এই পুঁটলিতে যা আছে, তা মানুষকে কাত করতে পারে, কুকুরকেও পারবে কি? আবার আওয়াজ – নাঃ এতো কুকুরের আওয়াজ নয়। আর কুকুর হলে এতক্ষণ কি চুপ করে বসে থাকত? অন্ধকারে চোখ সয়ে গিয়ে এখন বেশ ভালই দেখছে বিষ্টু। কোনের দিকে পুঁটলির মত কী ওটা? কুকুর তো নয়, তবে জ্যান্ত। নড়চড়ার চেষ্টা করছে মনে হচ্ছে। আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় বিষ্টু –
মুখের বাঁধনটা খুলেই বিষ্টু হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে, অ্যাই, যা বলবি, ফিসফিস করে। চেঁচালে তুইও মরবি, আমিও মরব। এখানে কে তোকে বেঁধে রেখেছে? পুঁটলিটা বলে আমায় ধরে এনেছে, এরা দুষ্টু লোক, মার কাছে যাব। কাকু আমায় খুলে দাও না। বিষ্টু বলে খুলে দিলেই কি যেতে পারবি মা? দাঁড়া তোর পায়ের বাঁধন খুলছি কিন্তু হাতটা বাঁধাই থাক। আমার মাথার ওপর দিকে হাত দুটো গলিয়ে দেতো – দেখিস আবার গলায় চাপ দিয়ে ঝুলে পড়িস না, দুজনেই মরব। সেই শক্ত লোহার পাইপ বেয়ে নামতে থাকে বিষ্টু। এবার ওজন দেড়গুণ, তার ওপর বাঁ পা টা বেশ ভোগাচ্ছে, কার্নিশে আবার ধাক্কা খেল ওই বাঁ পাটাই। বিষ্টুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল – উফ্-
একতলা অবধিও নামা হয়নি, মুখে দু–দুটো পাঁচ সেলের টর্চের আলো পড়ল। নিচ থেকে কেউ বলল, এই যো বাবা রবিন হুড, নেমে এসো চাঁদ। অত কষ্ট করে ধরে আনা জিনিস নিয়ে পালিয়ে যাবে? এত সোজা? এসো বাবা, তোমায় কেমন জামাই আদর করি দেখবে। বিষ্টু বলল, আরে দাঁড়াও, পায়ে লাগা আছে। ঝামেলা কোরনা। ধরা যখন পড়েইছি, সুস্থ হয়ে নামতে দাও। ঝুপ করে নামল বিষ্টু। একে পায়ে ব্যথা, তায় পিঠে অত ভারি বোঝা, একটু ককিয়েই উঠল সে। ষন্ডামার্কা লোক দুটো এগিয়ে আসছে, বিষ্টু বলল, জানতো, আমি হারাণ মোদকের নাতি। মিষ্টি বানানো আমাদের বংশের পেশা। তবে মিষ্টি না পেলে কী বানাই বলতো? সামনের লোকটা বলল, কী? কথা বলতে বলতে বিষ্টুর হাত চলে গেছে কোমরের বাঁ দিকে। সে বলল, – ঝাল।
লোকদুটো দুহাত দিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বাবাগো মাগো করছে। একজন তো ঘাসের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। বিষ্টু ব্যথা লাগা পা টা নিয়ে কষ্টেসৃষ্টে পাঁচিল টপকাতেই দেখে একটা জিপগাড়ি আর হাসি হাসি মুখে একটা খাকি জামা পরা মোটা লোক। মোটা লোকটা বলল, আয় বাবা, তোকে অনেক দিন ধরে খুঁজছি। পিঠে কিসের বান্ডিল রে ? বিষ্টু বলল, খুব দামি জিনিস স্যার।
কাল কালীপূজোর ভাসান ছিল, এখনও পটকা ফাটছে এখানে ওখানে। বিষ্টু কাল রাতে ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরেনি। বেষ্পতি কান্নাকাটি করছিল। অমূল্যকাকা এসে বলল, কাঁদিসনে মা, এমনটা হবে আমি জানতুম। ঐ যে বিষ্টুচোণ বলে ডাকা হয়, আসলে লোকে ‘চরণ’ এর মাঝের অক্ষরটা বলতে পারেনা বলে শেষ অক্ষরটা বলে। জানতুম একদিন একটা কিছু হবে। তবে চুরির দায়ে ক’বছর আর থাকবে জেলে। সে ক’টা দিন একটু কষ্ট করে চালা। আমরা সবাই আছি তো।
একটা জিপগাড়ি করে কটা পুলিশ এসে বেষ্পতিকে বলল, চলুন, আপনাকে ডেকেছে। অমূল্যচরণ রুখে দাঁড়াল, সেকি? যে চোর তার বৌকে ধরে টানেন কেন, দেশে আইনকানুন নেই? ও যাবেনা। পুলিশগুলো একগাল হেসে বলল, ভয় নেই কাকা, কোনও ক্ষতি হবেনা, ওখানে মন্ত্রীমশাই আসবেন, আরও কত লোক, আপনিও আসতে পারেন।
থানায় গিয়ে দেখা গেল, গরাদের মধ্যে একজন ধুতি পাঞ্জাবি পরা লোক আর তার গোটা পাঁচেক ষন্ডামার্কা চেলা। দুজন তখনও চোখ ডলে যাচ্ছে। বিষ্টুচোণ বড়বাবুর সামনে চেয়ারে বসা। একজন বৌ এসে তাকে থালা সাজিয়ে ভাইফোঁটা দিচ্ছে। বিষ্টুকে ছেড়ে এবার থানাশুদ্ধু ফোঁটা দেয়া আর মিষ্টি খাওয়ানো হয়ে গেল। অমূল্যকাকাও বাদ গেলনা। বেষ্পতি ফোঁটা না পেলেও মিষ্টি পেল ভালই। বৌ মানুষটি বলল, আপনারা সবাই আজ থেকে আমার খুকুর মামা। আপনারা না থাকলে – বলে চোখ মুছতে লাগল। এক হোমরা চোমরা মন্ত্রীমশাই কয়েকজন অফিসারকে সঙ্গে করে হুটার লাগানো গাড়ি চেপে এলেন। বললেন, এত বড় শিশুপাচারকারীকে ধরিয়ে দেবার জন্য শ্রী বিষ্ণুচরণ মোদক মহাশয়কে দুই লক্ষ টাকার চেক দেয়া হচ্ছে। অমনি ফোটগ্রাফাররা খচাখচ ছবি তুলতে লাগল।
অমূল্যকাকা গ্রামের সবাইকে জড়ো করে সাফসাফ বলে দিল, আজ থেকে ওকে বিষ্টুচরণ ছাড়া অন্য নামে যে ডাকবে, তাকে একঘরে করা হবে। বাবা বিষ্টু, তুমি নিশ্চয় ওই টাকা নিয়ে এবার কোলকাতায় গিয়ে ব্যবসা ট্যবসা করে ভাল মানুষ হবে? বিষ্টু বলল, পাগল, আমি গেরামেই দোকান করব, ঐ তেঁতুলবাগানে নাসিমুলের দোকানের পাশেই। আমার হাতের চমচম খেতে কোলকাতা থেকে গাড়ি করে লোক আসবে। একটা বাচ্চা ছেলে ভিড়ের মধ্যে থেকে বলে উঠল, -শুধু মিষ্টি, আর ঝাল ? বিষ্টুচরণ বলল, আবার ছেলেধরা দেখলে তার চোখে ভাল করে ডলে দেব।