বিষন্ন রাজকুমারী

এক রাজা আর এক রানী। তাদের বারোটি ছেলে। রাজা বলেছেন রানীকে, “যদি এবার মেয়ে হয় তবে ওই বারো ছেলেকে মেরে ফেলব। মেয়ে-ই আমার রাজ্য পাবে।” এই কথা শোনার পর থেকেই দিনরাত রানী কাঁদেন। রাজা’র কথা শুনে ছোট ছেলে বলে, “মা, তুমি এত কাঁদছ কেন?” রানী সব কথা ছেলেকে বললেন। ছেলে বলল, “ভয় কী মা, আমরা বনে থাকব। বাবা আমাদের কিছুই করতে পারবে না।” রানী বললেন, “সেই ভালো। তারা যেন পালা করে বনের সবচেয়ে উঁচু গাছে চড়ে রাজবাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। যদি তাদের ভাই হয়, তবে রাজবাড়িতে সাদা নিশান উড়বে। তখন তারা ফিরে আসবে। আর যদি বোন হয়, তাহলে লাল নিশান উড়বে। তারা যেন তখন আরও দূরে চলে যায়।” বারো ভাই চলে গেলো বনে। এক এক করে এগারো ভাইয়ের পালা কেটে গেল। সবচাইতে ছোট ভাইয়ের যেদিন পালা, সেদিন সে দেখল রাজবাড়িতে লাল নিশান উড়ছে। বারো ভাই আরও অনেক দূরে চলে গেল। বনের মধ্যে একটা বাড়িতে তারা থাকে। ছোট ভাই বাড়ি পাহারা দেয়, অন্য ভাইরা যায় শিকারে। তাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, কোনো মেয়ে দেখলেই তাকে মেরে ফেলবে তারা।

এদিকে রাজকন্যাও বড় হয়েছে। ভারী সুন্দর মেয়ে। কপালে আকাশের তারা জ্বলে, টুকটুকে মুখ। একদিন রানী বারো ভাইয়ের জামা রোদে দিয়েছেন। রাজকন্যা বলল, “মা, এ কাদের জামা?” মা কাঁদতে ফেললেন। মেয়েকে সব খুলে বললেন। সব কথা শুনে মেয়ে বলল, “তুমি কান্না করো না। আমি আমার ভাইদের খুঁজে নিয়ে আসব।” সেই বারোটা জামা নিয়ে রাজকন্যা চলল ভাইদের সন্ধানে। তারপর এসে পৌঁছালো বনের ধারের সেই বাড়িতে। ছোট ভাই তাকে দেখেই জানতে চাইল সে কে, কেন এসেছে। তারপর যখন শুনল সে তাদের বোন, ভাইদের খুঁজতে এসেছে, তখন বড় মায়া লাগলো তার। সে বলল, “আমি তোমার ছোট ভাই। বড় ভাইরা শিকারে গেছে। এসো, এই ফাকে তোমাকে লুকিয়ে রাখি। নইলে তারা হয়তো তোমাকে মেরে ফেলবে।” ছোট ভাই তার বোনকে একটা কাঠের পিপের মধ্যে লুকিয়ে রাখল। শিকার থেকে ভাইরা ফিরে এলো। ছোট ভাই তাদের বলল, “একটা মজার জিনিস দেখাব, কিন্তু আগে কথা দাও, মেরে ফেলবে না।” ভাইরা কথা দিলো। ছোট ভাই বোনকে বের করে দিলো। ভাইরা তখন কী আনন্দ! তারা বোনকে নিয়ে মনের সুখে দিন কাটাতে লাগলো।

একদিন বাড়ির বাগানে বারোটা সুন্দর ফুল ফুটেছে। বোনের ইচ্ছে হল, ভাইদের জামার বোতাম ঘরে সে ফুলগুলো লাগাবে। কিন্তু যেই সে ফুলগুলো তুলেছে, অমনি বারো ভাই দাড়কাক হয়ে উড়ে চলে গেলো। রাজকন্যা বোনের মধ্যে একা একা কাঁদতে লাগলো। এমন সময় তার সামনে দেখা দিলো এক ডাইনী বুড়ী। বুড়ী বললো, “ফুলগুলোর মধ্যেই ছিল তোমার ভাইদের জীবন।” রাজকন্যা বুড়ীকে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে, আমার ভাইরা কি আর মানুষ হতে পারে না?” বুড়ী বলল, “পারে বটে, তবে এটা খুব কঠিন কাজ। সাত বছর তোমাকে চুপ থাকতে হবে। কথা বলতে পারবে না, হাসতে পারবে না। হাসলেই মৃত্যু হবে তোমার ভাইদের।” রাজকুমারি বলল, “আমি তাই করবো।” সেই থেকে শুরু হল তার ব্রত। কথা বলে না, হাসে না, শুধু বসে বসে সুতা কাটে।

এক দেশের এক রাজপুত্র একদিন দেখতে পেলো রাজকন্যাকে। দেখে খুব পছন্দ হল তার। ঘরায় চরিয়ে তাকে নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলো রাজপুত্র। কিন্তু রাজপুত্রের মা বুড়ো রানী তাকে দেখতে পারে না। “এ নিশ্চয়ই ডাইনী। কথা বলে না, হাসে না।” ঠিক হল, এই ডাইনী বউকে পুরিয়ে মারা হবে। রাজকন্যাকে যখন পুরিয়ে মারার ব্যবস্থা হচ্ছে, সেই সময় কোথা থেকে বারোটা দাড়কাক উড়ে এসে মাটিতে নামলো, আর মাটিতে পা দিয়েই তারা হয়ে গেলো বারো জন রাজপুত্র। আসলে সেই দিনই রাজকন্যার ব্রতের সাত বছর পূর্ণ হল। বারো ভাই আগুন নিভিয়ে ফেললো। কত দিন পরে হাসলো তাদের আদরের বোন। আনন্দে অধির হয়ে উঠলো বোনের স্বামী। তারপর?? তারপর রাজসভার বিচারকরা মিলে রায় দিলেন, বুড়ো রানীকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হোক।

রাজার দুধের পুকুর

উত্তরে ছুটে দক্ষিণে যাওয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *