
কিশোর বন্ধুরা, এই শিরোনাম দেখে তোমরা কি বিস্ময়ে থ’হয়ে গেলে? নাকি ভাবছো যে, আমার মাথাটি এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেছে! নাহ্ বিলকুল সব ঠিক হ্যায়। হ্যাঁ,অবশ্য আমি তোমাদের কে এখন তোমাদের অতসব মানুষের মাথার কথাই বলবো। ভাবছ এ বিশ্লেষণ শুনে তোমাদের মাথাই আবার খারাপ হয়ে যায় কি না? যাক আল্লাহ ভরসা। আমাদের দেহের ভিতর মাত্র তিন পাউন্ড ওজনের মস্তিস্কের গঠন সবচেয়ে জটিল। এমনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার কম্পিউটারের চেয়ে হাজার হাজার কোটি গুণ জটিল। ডাক্তার ওয়াল্টারের মতে বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে মানুষের মত সমক্ষমতার একটি বৈদ্যুতিক বা এটমিক মস্তিস্ক তৈরি করতে চাইলে পনের শত কোটি, কোটি টাকারও বেশি প্রয়োজন হবে।
সংখ্যাটিকে অংকে লিখলে দাঁড়ায় ১৫০০,০০০০০০০,০০০০০০০ টাকা। অর্থাৎ যে পরিমাণ টাকা দিয়ে বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক প্রায় দশ হাজার কোটি কম্পিউটার কেনা সম্ভব।……..য়েই থামো, শরীরে একটু চিমটি কেটে দেখোতো স্বপ্ন দেখছো কিনা? আরো মজার খবর … এই মস্তিষ্ককে চালাতে এক হাজার কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হবে। দৈনিক চালু রাখার জন্যে প্রয়োজন হবে কর্নফুলির কাপ্তাইয়ের মতো তিন হাজার আড়াইশত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামগ্রিক উৎপাদন। সাবধান তোমরা কিন্তু ভয় পেয়ে যেও না, এই যান্ত্রিক মস্তিস্কের আয়তন হবে আঠারোটি এক’শ তলা বিল্ডিংয়ের সমান। আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে ওপরের সাদা ঢেউ খেলানো অংশকে কর্টেক্স বলে। স্তরে স্তরে বিন্যস্ত এই কর্টেক্সকে সমান্তরালভাবে সাজালে এর আয়তন হবে দু’হাজার বর্গমাইলেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ব্রুনাই দেশের সমান। চৌদ্দশত কোটি নিরপেক্ষ জীবকোষ দিয়ে কর্টেক্স গঠিত। এ সকল পরস্পর বিচ্ছিন্ন সম্পূর্ণ একক জীবকোষকে নিউরন বলা হয়। এগুলি এতই ক্ষুদ্র যে কয়েকশত একত্রে একটি আলপিনের মাথায় স্থান নিতে পারে। প্রতি সেকেন্ডেই শত শত হাজার হাজার নিউরন এসে ব্রেইনের প্রাথমিক স্তরে জমা হতে থাকে। এরা একেকটি ইলেক্ট্রনিক সিগনাল যা শরীরের বিভিন্ন অংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং মূল নিয়ন্ত্রণের আদেশ অতি দ্রুত হাজার কোটি সেলে ছড়িয়ে দেয়। ব্রেইনের এ সকল প্রতিক্রিয়া অনেক সময় সেকেন্ডের দশ লক্ষ ভাগের মাত্র একভাগ সময়ে ঘটতে পারে। আমাদের দেহের মেরুদন্ডের মাধ্যমে নিউরনগুলি সারা শরীরের যন্ত্রপাতিগুলিকে সজীব ও তৎপর রাখে।
এগুলির আবার অনেক স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে যার সংখ্যা প্রায় ২৫০টি। যেমন কোন অংশ শোনার জন্যে. কোন অংশ বলার জন্য, কোন অংশ দেখার জন্য আবার কোন অংশ অনুভূতিগুলিকে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল টাওয়ারে ট্রান্সমিট করার জন্যে ব্যস্ত থাকে। এতে আবার বসানো হয়েছে একটি স্বয়ংক্রিয় শক্তিশালী ‘মেমোরি সেল’। যার কাজ হলো নিত্য নতুন সংগ্রহ গুলিকে যথাযথভাবে সংরক্ষন করা এবং প্রয়োজনের সময় তাকে ‘রি ওয়াইন্ড’করে মেমোরি গুলিকে সামনে নিয়ে আসা। এই স্মৃতি সংরক্ষণশালা প্রতি সেকেন্ড ১০টি নতুন বস্তুকে স্থান করে দিতে পারে। পরম আশ্চর্যর বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর সর্বকালের সর্বপ্রকারের যাবতীয় তথ্য ও তত্ত্বকে একত্র করে এক জায়গায় করে যদি এই মেমোরি সেলে রাখা যায় তাতে এর লক্ষ ভাগের একভাগ জায়গাও পূরণ হবে না। সুবহানআল্লাহ! আমরা আল্লাহর এ মহিমার শুকরিয়া কিভাবে আদায় করবো ভেবে কূলকিনারা পাই না। প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা কি অনুধাবন করতে পারছো কত শক্তিশালী আমাদের এ মস্তিষ্ক! তবে দুঃখের বিষয়, আমরা এর হাজার ভাগের একভাগও কাজে লাগাতে পারি না।
আধুনিক বিজ্ঞান এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের প্রত্যেকের আল্লাহ প্রদত্ত এই মহাশক্তিশালী কম্পিউটার (মস্তিস্ক) কে কাজে লাগাতে পারবো। সুপ্রিয় কিশোর বন্ধুরা, আমরা এ আলোচনাটা শেষ করতে চাই একজন মহামনীষীর বক্তব্য দিয়ে। তিনি বলেছিলেন, “ নো দাই সেলফ’অর্থাৎ নিজেকে জানো।’এ যেন সেই আরবি প্রবাদেরই প্রতিধ্বনি ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফা রাব্বাহু’অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজকে চিনতে পারলো সে তার প্রভুকে চিনতে পারলো।