বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৭ম পর্ব

বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

লোকমান তনয় আগুনের পাত্রটি নিয়ে বাসর ঘরে ঢুঁকে দেখল তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞহীন অবস্থায় পড়ে আছে এবং ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সব লণ্ডভণ্ড। তখন সে আগুনের পাত্রটি কক্ষের এক কোনে রেখে স্ত্রীর নিকট গিয়ে দেখল সে সংজ্ঞাহীন। তখন তাড়াতাড়ি তাঁর মাথায় একটু পানি দিয়ে বাতাস করতে আরম্ভ করল। দীর্ঘ সময় সেবা যত্ন করার পরে তাঁর স্ত্রীর চেতনা ফিরে এল। স্বামীকে তাঁর কাছে বসে থাকতে দেখে সে উঠে বসল এবং বলল, তুমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে এক বিরাট আকৃতির দৈত্য এসে আমাকে উপরে তুলে মাটিতে ফেলে দিল। তাঁর পরে কি  হয়েছে আমি জানি না। লোকমান তনয় তখন বললেন , এটাই ছিল তোমার শেষ বিপদ। আল্লাহ তায়ালার রহমতে আগামিতে তোমার আর কোন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।

এই বলে তার সাথে প্রাণ ভরে কথা বলতে আরম্ভ করল। হৃদয়ের ভালবাসা আদান প্রদান করে, সবশেষে তাঁর সাথে মিলন করে। রাত্রি গোছল করে উভয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে।

অতপর সূর্যোদয়ের সাথে সাথে যখন লোকমান তনয় ঘর থেকে বের হয়ে বৃদ্ধা চাচার নিকট রওয়ানা করল, তখন পথে ডোমদের সাথে দেখা হল। ডোমেরা বলল, হুজুর! আপনি রাক্ষসি কন্যার বর? তিনি বললেন, হ্যাঁ! তারা বলল, তবে আপনি কি ভাবে বেঁচে আছেন? তিনি বললেন বাঁচা মরা আল্লাহর হাতে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তোমরা প্রতিবারে লাশ সরিয়ে যে টাকা পেতে, আমার নিকট থেকে তা নিয়ে যাও। এ কথা বলে তাদের পাঁচশত টাকা বখশিস দিলেন। ডোমেরা বর জীবিত থাকার কথা সারা এলাকায় ছড়িয়ে দিলেন।  খবর শুনে সকল মানুষ তাকে দেখতে এসে সালাম জানাল। এবং তিনি কি ভাবে বেঁচে আছে তা জানতে চাইল। লোকমান তনয় বললেন, এটা সবই আল্লাহর ইচ্ছা। লোকমান তনয় বৃদ্ধা চাচার নিকট গিয়ে সমস্ত ঘটনা বলল, তাঁর বৃদ্ধ চাচা তাকে বলল, এ যুবতীর প্রতি শক্তিশালী জিনের আছর ছিল। সে এই যুবতির বিবাহ সহ্য করতে পারত না। বিশেষ করে কোন মানুষ যদি এই যুবতির সাথে একবার মিলন করতে পারে তাহলে জিনের আছর  এবং জিনের প্রভাব শেষ হয়ে যেত। তাই ইতোপূর্বে তাঁর অন্যান্য স্বামীর সাথে মিলন করার  পূর্বে জিনটি এক ক্ষুদ্র সর্পাকৃতি ধারন করে স্বামীকে দংশন করত। বেঁচে থাকা সম্ভব হত না। এবারে আমি তোমাদের সাথে আসাই জিনটি আগে থেকে দুর্বল হয়ে গেছে। অতপর তোমার স্ত্রীর কাপড়  ও কিছু জেবস্বী লতাপাতা জালিয়ে সর্পাকৃতির আর এক জিনের মাথা উহার মধ্যে আগুনে জ্বালালে এবং উহার ধোঁয়া চারিদিকে ছড়িয়ে দিলে উক্ত আস্কত জিনটি  অস্থির ও উন্মাদ হয়ে যায়। সে তোমার স্ত্রীকে আছাড় দেয়, ঘরের আসবাব পত্র লণ্ডভণ্ড করে দেয়। সব শেষে সে পালাতে চেষ্টা করে আমি তখন তাকে বাধা দেই এবং অন্য কিছু দ্বারা আক্রমন করি। যাতে জিনটি মৃত্যু অবস্থায় পৌঁছে। সর্বশেষে যখন তোমরা সহবাসে প্রবৃত্ত হও তখন সে মৃত্যু বরণ করে। আর কোন দিন সে তোমার স্ত্রীর ক্ষতি করতে পারবে না।  এখন থেকে তোমরা নিরাপদ।  লোকমান তনয় তখন বৃদ্ধাকে অনেষ ধন্যবাদ জানাল।   

বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।