বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-শেষ পর্ব
বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-নবম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একদিন একরাত ধরে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর তারা দেশে পৌঁছল। বাড়ী থেকে কিছুটা দূরত্বে থাকাকালীন সময়ে বৃদ্ধ বলল, বৎস! এবার আমাকে বিদায় কর। লোকমান তনয় বললেন, চাচা মিয়া আপনি আমাকে যে সব বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে। তাতে আপনাকে পথিমধ্যে বিদায় দিব না। আমাদের বাড়ীতে যাবেন। আমি এবার তা পারব না। যেহেতু তোমার সাথের অনির্ধারিত ছফরে আমার অনেক মূল্যবান সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং অনেক প্রোগ্রাম ক্ষতির সম্মুখীন আছে। অতএব আমাকে এখনই গিয়ে সেগুলা পরিপূরণ করতে হবে।
এখন তোমরা চলে যাও। আমি এক বার শিঘ্রই তোমার পিতার সাথে সাক্ষাৎ করব।
তখন লোকমান তনয় বলল, চাচা মিয়া আপনি দোয়া করে তিনটি উট বোঝাই মালামাল নিয়ে যান। বৃদ্ধা বললেন, ভাগটা তুমি করে দাও? ওটা আমার উপর ন্যস্ত করা উচিৎ ছিল। তখন লোকমান তনয় বলল, হ্যাঁ চাচা মিয়া! এটা আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করুন। আপনি আমাকে সমস্ত মালামালের চেয়ে অনেক বেশি দামী জিনিস দিয়েছেন। বিশেষ করে এক সেরা সুন্দরি ও ধনাঢ্য রমণীকে আমার স্ত্রীরুপে লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। যার মূল্য পরিশোধ করা কোন দিন আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব আমার যা যাবতীয় মালামাল আছে যা প্রকৃত মালিক আপনি। অতএব এ গুলা আপনাকে নিতে হবে।
বৃদ্ধা বললেন হ্যাঁ বাবা! এবার তুমি ঠিক কথা বলেছে। তবে দশটি উটের মধ্যে পাঁচটি আমাকে দাও। লোকমান তনয় বললেন, আপনি যা বলবেন তা গ্রহন করাই আমার পিতার আদেশ। অতএব আপনার যে পাঁচটি ইচ্ছা নিয়ে যান। বৃদ্ধা বললেন, আমি উটের সারির শেষ দিকের পাঁচটি উট নিলাম। তোমরা প্রথম দিকের পাঁচটি নাও। লোকমান তনয় বলল, আল হামদুলিল্লাহ, তাই হোক। এ কথা বলে উটগুলো কে দুই’ভাগে বিভক্ত করেদিলেন। অতপর বৃদ্ধাকে ছালাম দিয়ে পথ চলতে আরম্ভ করল। তখন বৃদ্ধা বলল, একটু থাম লোকমান তনয় বৃদ্ধার কথা শুনে থেমে গেল। তখন তিনি লোকমান তনয়ের স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন, মা! আমি আমার ভাগের পাঁচটি উট দান করে দিলাম। তুমি এ গুলির মালিক হিসাবে নিয়ে নাও। মহিলা বলল, চাচা মিয়া আপনি এক্দা আমাকে নতুন জীবন দিয়েছ। আমাকে পৃথিবীর সেরা ব্যক্তির পুত্রকে উপহার দিয়েছ। আপনার দেনা আমি কোন দিন শোধ করতে পারব না। আপনাকে শুধু উট নয়, আমার এ বিশাল সম্পন্তির অর্ধেক আপনাকে আমি দান করব বলে অঙ্গীকার করেছি। আপনি দোয়া করে আমার এ ক্ষুদ্র দান কবুল করে নিন। তখন বৃদ্ধা বললেন, আমি আফেজ নামক এক ফেরেস্তা। আমি নেককার বান্দাকে মহা বিপদ থেকে রক্ষা করে থাকি। এটা আমার দায়িত্ব। আমি তনয় এর হেফাজতের দায়িত্বে ছিলাম। তাই ছফরে দুর্যোগ মোকাবেলায় আমি সাহায্য করেছি। আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুক। এই বলে বৃদ্ধা নিরুদ্দেশ হয়ে গেল।
লোকমান তনয় ও তাঁর স্ত্রী তখন আল্লাহর দরবারে অসংখ্যক সুকরিয়া আদায় করে বাড়িতে পৌঁছল। তখন তাঁর পিতা লোকমান হাকিম তাকে ও তাঁর স্ত্রীকে আদর করে ঘরে তুলে নিলেন। অতপর পুত্রের নিকট তাঁর ছফরের বিস্তারিত বিবরণ শুনে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করল।
বিশ্ববিখ্যাত লোকমান হাকিমের কথা-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন