বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-শেষ পর্ব
বিশ্বনবীর লাশ চুরির চক্রান্ত-পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাদশা তাদেরকে মসজিদ হতে অর্ধ মাইল দূরে বিরাট ময়দানে ২০ (বিশ) হাত উঁচু একটি কাঠের মঞ্চ তৈরী করে তাদেরকে লৌহ শিকলে আবদ্ধ করে মঞ্চের উপর বসালেন, তারপর মদিনার পার্শ্ববর্তী এলাকার দূর-দূরান্তের লোকজনদের সংবাদ দিয়ে বাদশা নূরউদ্দীন তাদের হীন মনোভাবের এ চক্রান্তের কথা জনসমুদের পেশ করেন। তারপর জনগনকে কাষ্ঠ সংগ্রহ করতে আদেশ প্রদান করেন। বিপুল পরিমাণে কাষ্ঠ সংগ্রহ হয়ে গেল। লক্ষাধিক জনতার সম্মুখে সেই ইয়াহুদীদেরকে ২০ হাত উঁচু মঞ্চে বসিয়ে নিম্নভাগে আগুন লাগিয়ে দেন। সে আগুন দীর্ঘ ১১ দিন পর্যন্ত জ্বলতে থাকে এবং তাদেরকে সেখানে ভষ্ম করে ফেলা হয়।
তারপর তিনি বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করে কয়েক প্রকারের ধাতু গলিয়ে রওজা মোবারকের চতুষ্পার্শ্বে মোটা রড সহ এক হাজার মণ শিশা লাগিয়ে মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দেন। তিনি আল্লাহ তায়ালার নবীর রওজা মুবারকের রক্ষণাবেক্ষণের এই মহান কাজ সম্পাদন করেন। তারপর তিনি সপ্তাহ কালব্যাপি দরবারে এলাহিতে অশ্রুসিক্ত নয়নে শুকরিয়া আদায় করে বাগদাদে প্রত্যাবর্তন করেন। ইতিহাসের পাতা থেকে অবগত হওয়া যায় যে, বাদশা নূরউদ্দীন ইন্তেকাল করলে তার অছিয়ত মত তার লাশ রওজা মুবারকের অতি নিকটে দাফন করা হয়।
এ ঘটনার আগেও বহুবার বিশ্বনবীর লাশ চুরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। গভীর রাত্রের অন্ধকারে শত্রুরা যখন মসিজিদে নববীতে কোদাল ইত্যাদিসহ প্রবেশ করেছে এবং কবরের দিকে অগ্রসর হয়েছে তখন হঠাত মসজিদের মাটি ফেটে যেয়ে দুভাগ হয়ে গেছে আর সাথে সাথে শত্রুরা মাটির ভিতর জীবন্ত প্রথিত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় আল্লাহ তায়ালা এদেরকেও মাটির তলায় সুঁড়ঙ্গের মধ্য প্রথিত করে দিতে পারতেন কিন্তু তাতে বিশ্ববাসি কিছুই জানতে পারতো না।
ফলে বিশ্ববাসী যাতে জানতে পারে এজন্য এদেরকে আল্লাহ তায়ালা মাটির নিচে প্রথিত না করে ধরিয়ে দিয়েছেন, যাতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা সকল জিন ইনসান যেন কেউ আর হুজুরে পাক (সাঃ)-এর কবর মুবারকের সাথে কোন প্রকার বেয়াদবী করতে সাহস না পায়।
এ ছাড়া এই বিশেষ মুজিযার দ্বারা এটাও প্রমাণিত হচ্ছে যে, কুরআন হাদিসে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা সব অক্ষরে অক্ষরে সত্য। রাসূল (সাঃ) জীবদ্দশায় থাকতে যে অসংখ্য মু’জিযা প্রকাশিত হয়েছে। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য করার বিষয় তা হলো, এই ঘটনা ঘটেছে ৫৫৫ হিজরী সনে অর্থাৎ হুজুর (সাঃ) ইন্তেকালের ৫৪৫ বছর পর, যেহেতু তিনি হিজরতের ১০ বছর কাল পরে ইন্তকাল করেছেন। এতো দীর্ঘদিন সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও কবরে হুজুরে পাক (সাঃ)-এর লাশ যেমন প্রথম দিন রাখা হয়েছিল ঠিক তেমনই রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ঐ রুপ থাকবে।
এ ছাড়া শয়তান কখনও নবীর আকৃতি ধরতে পারেনি। সুতরাং যাঁরা হুজুরে পাক (সাঃ)-কে স্বপ্নে দেখলো তাঁরা ঠিকই হুজুরে পাক (সাঃ) কে স্বপ্ন দেখলো।
এভাবে আজ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ উম্মত তাঁকে স্বপ্নে দেখেছে তো সত্যই দেখেছে। কিতাবের মধ্যে তথা ইতিহাসে এ কথা উল্লেখ আছে যে, উম্মতের মধ্যে বড় বড় হাস্তিগণ কবরের পাশে সালাম দিয়ে দাবি জানিয়েছেন যে, তাঁরা কবর থেকে তাঁদের সালামের জবাব শুনতে চান। সে ক্ষেত্রে অনেকেরই সালামের জবাব দান করেছেন। যেমন হযরত ইমাম আবু হানিফা (রাঃ)-এর প্রশিদ্ধ ঘটনা।
তিনি বিশিষ্ট শাগরেদগণের বিরাট এক জামাত সহ কবরের কাছে এসে আবদার জানিয়েছেন যে, দূর থেকে জীবনে বহু সালাম পাঠিয়েছি আজ আপনার মেহমান হয়ে কবরের কাছে এসে সালাম পাঠাচ্ছি সুতরাং আমি আমার সালামের জবাব চাই। এই বলে যেই সালাম দিয়েছেন অমনি কবর থেকে সাথে সাথে সালামের জবাব চলে এসেছে যা সকলেই শুনেছেন। ফলে এসব কিছু সম্মিলিতভাবে প্রমাণ করেছে যে, তিনি সত্য নবী তিনি যা বলেছেন সবই অক্ষরে সত্য! ফলে আমাদের সকলকে কুরআন হাদিসের নির্দেশ মত জীবন গড়তে হবে এবং শুধু একা একা গড়লে হবে না, গোটা বিশ্ববাসী যাতে গড়তে পারে তথা জাহান্নামের রাস্তা ছেড়ে জান্নাতের রাস্তায় চলে সরাসরি জান্নাতে পৌঁছাতে পারে তার জন্য সকলকে জান মাল সময় দিল দেমাগ হিম্মত কৌশল সব কিছু দিয়ে চেষ্টার মত চেষ্টা পরিশ্রম মেহনত করতে হবে। আমিন