কোনো এক বাংলা সিনেমায় দেখেছি স্বামী নিয়ে দুই নায়িকা অর্থাত্ দুই বউকে টানাটানি করতে, যদিও শেষে প্রমাণিত হয় স্বামীর আসল বউ কে, তবুও টানাটানি নিয়ে তুলকালাম ঘটে যায়।
পাঠক, এতক্ষণ দড়ি টানাটানি ও স্বামী টানাটানির কথা বলছি, এবার আসি বিল টানাটানি প্রসঙ্গে। কিছুদিন থেকেই শুরু হয়েছে আড়িয়ল বিল নিয়ে টানাটানি। রক্তের বিনিময়ে হলেও সেখানকার মানুষ রক্ষা করতে চায় তাদের প্রাণের বিল। অন্যদিকে সরকার সেখানে বিমান উড়াতে চাচ্ছে অর্থাত্ এয়ারপোর্ট বানাতে চাচ্ছে। আমাদের হেড স্যারের ভুঁড়ির কারণে দড়ি টানাটানিতে ওনার দলই জিতে যেত, কিন্তু আড়িয়ল বিল নিয়ে যেভাবে টানাটানি চলছে তাতে শেষতক কারা জেতে, বলা যাচ্ছে না। আড়িয়লবাসী আন্দোলন করছে আর পুলিশ রুখে দিচ্ছে, আন্দোলন রুখতে গিয়ে ঘটছে নিহত আহত হওয়ার মত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
অবশ্য কারও কারও রক্ত ঝরাতে আবার কারও কারো খুব মজা লাগে। এই ধরুন মশা ও আমাদের মধ্যে এত তিক্ত সম্পর্ক যে, আমরা কেউই কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। আমাদের রক্ত চুষে পেট ভরাতে পারলে মশা বাহিনীর আনন্দের শেষ থাকে না। আবার মশাদের কষে থাপ্পড় মেরে রক্ত ঝরাতে পারলে আমরা খিলখিলিয়ে দাঁত বের করে হাসি। সোজা কথায় বলা যায় কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। এবার বলছি মশাবিষয়ক একটা গল্প—
এক লোক মশারি টাঙানোর পর মশারির ভেতরে বসে বসে মশা খুঁজছে, বাইরে মশক দলের এক সদস্য উত্তেজিত হয়ে উঠল।
—মশারির ভেতর তো খুঁজবাই, সাহস থাকলে মশারি ছাড়া ঘুমাও দেখি!
—ক্যান চান্দু রক্ত চুষতে বুঝি খুব টেস্ট লাগে?
—চুপ করো মিয়া, তোমরা ভীতু নাম্বার ওয়ান। সামান্য আমাদের ভয়ে মশারি টাঙাও অথচ গরু-ছাগল পর্যন্ত রাতে মশারি ছাড়া ঘুমায়।
—ভীতু কইলি ক্যান, বের হলে কিন্তু এক থাপ্পড়ে সাইজ কইরা দিমু?
—মশারির ভেতর লাফাস ক্যান, সাহস থাকলে বাইরে আয়। বাইরে এসে আমাকে আঘাত করতে চাইলেই আমাদের গোয়েন্দা টিম ভেতরে ঢুকে পড়বে।
—হ আমি বের হমু আর তোমরা চুপিচুপি আমার মশারির জায়গা দখল করবা, প্রয়োজনে রক্ত দেব তবুও মশারির ভেতর থেকে বের হব না।
পাঠক, যুগে যুগে মশা ও আমাদের মধ্যে যে তিক্ত সম্পর্ক, এ সম্পর্ক আজীবনই নিম পাতার মতো তিতা থাকবে। কারণ, আমরা মশারি টাঙিয়ে একটু নাকে তেল দিয়ে ঘুমাব এটা মশার সহ্য হয় না। তারা মশারির ভেতর জবরদখল করার অপচেষ্টা চালায়। আবার মশা একটু খেয়ে-দেয়ে বাঁচুক এটা আমরা চাই না। যদি চাইতাম তবে থাপ্পড় মেরে রক্তাক্ত করে তাদের আহত কিংবা নিহত করতাম না। এই তিক্ত সম্পর্কের মতো এখন তিক্ত হয়ে উঠেছে আড়িয়লবাসী ও সরকারের সম্পর্ক। আন্দোলন-বিক্ষোভের মধ্যে কাটছে তাদের জীবন। রক্ত দেবে তবুও তারা আড়িয়ল বিলকে এয়ারপোর্ট বানাতে দেবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত আন্দোলনের পরও যেহেতু এ বিল টানাটানির শেষ হচ্ছে না সেহেতু পুলিশ ও আড়িয়লবাসীর রক্ত কি ঝরতেই থাকবে ?
এ তিক্ত সম্পর্ক মশা ও আমাদের সম্পর্কের মতো দীর্ঘস্থায়ী না হোক, এটাই আমাদের কাম্য। দড়ি টানাটানি যেমন কিছুক্ষণ চলে থেমে যায় আবার স্বামী টানাটানিও যেমন এক পর্যায়ে স্থির হয়ে থেমে যায়, তেমন আড়িয়ল বিল টানাটানিও থেমে যাক।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।