বিনয়ের পুরষ্কারঃ জিনের অট্টহাসি

মহান আল্লাহর সত্ত্বা তাঁর সৃষ্টিকে তাঁর কাছে বিনীত অবস্থায় দেখতে পছন্দ করেন। তার নগন্য মখলূকও তাই। এমনকি কঠিন অন্তর বিশিষ্ট জিনও বিনয়ের কাছে দয়া- প্রবণ হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে।

এক মাড়োয়ারী মহাজনের মেয়ের উপর একটি দুষ্ট জিন আশেক ছিল। বড় বড় কবিরাজ এসে জিনকে সরাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু জিন তাড়াতে পারলো না। এ জিনটি ছিল খুব শক্তিশালী আর তার হৃদয় ছিল খুব কঠিন। সে খুব উশৃঙ্খল ছিল। যে কবিরাজই তার কাছে আগমন করতো সে নিরাপদে ফিরতে পারতো না। কারো হাত ভাঙ্গতো, কারো পা ভাঙ্গতো, কাউকে বা হাত-পা বেঁধে ছাদের সাথে ঝুলিয়ে রাখতো। খুব বড় যালেম ছিল এ জিনটি।

মহাজন নিরুপায় হয়ে পড়লো।

একদিন কে একজন রশিকতা করে বললো, “অমুক মসজিদে এক মুয়াজ্জিন আছে সে খুব ভাল কবিরাজ”।

মহাজন ছুটে গেল মুয়াজ্জিনের কাছে। মুয়াজ্জিন কসম করে বলতে লাগলো সে জিন তাড়াতে জানে না। জীবনে কখনও সে এ আমল করেনি। কিন্তু মহাজন তার পায়ে পড়ে। হাত জোড় করে নিবেদন করলো। চোখের পানি যখন গড়িয়ে পড়তে লাগলো তখন মুয়াজ্জিন বললো, “ঠিক আছে চল আমি যাবো” তবে কী দিবে বল।

মহাজন বললো, তুমি যা চাও তাই তোমাকে দিব।

মুয়াজ্জিন বললো, আমাকে পাঁচশো টাকা দিতে হবে।

মহাজন বললো তোমাকে পাঁচশ টাকাই দিব।

মুয়াজ্জিন ছিল খুব গরীব। ভাবলো এ কষ্টের জীবনের চেয়ে জিনের হাতে মরে যাওয়াই ভাল। আর যদি কোন প্রকারে পাঁচ শ টাকা পেয়ে যাই তবে সুখের জীবন কাটাতে পারবো। মুয়াজ্জিন বিসমিল্লাহ বলে রওয়ানা হয়ে গেল।

মুয়াজ্জিন মহাজনের বাড়িতে পৌঁছাতেই জিন এমন এক অট্ট হাসি দিল যে সে হাসির আওয়াজে মুয়াজ্জিনের বুক কেঁপে উঠলো। হাসি থামিয়ে মুয়াজ্জিনের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো, আজ তোকে কাঁচা চিবিয়ে খাবো। তুই এসেছিস ভালই হয়েছে। এদিকে আয়!”

মুয়াজ্জিন হাত জোড় করে জিনের পায়ে পড়ে গেল। বললো হুযুর, আমি আপনার রাজ্যের সামান্য একজন প্রজা। আমি কোন কবিরাজও নই বা কোন কবিরাজ গিরিও করতে আসিনি। আমি একজন মূর্খ এবং গরীব মানুষ।

এ মহাজন গিয়ে আমার ঘাড়ে চেপে বসেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে ছাড়তে পারি নি। আমি বাধ্য হয়ে আপনার কাছে এসেছি। যাতে আমার একটা উপকার হয় আপনার কাছ থেকে। যদি পাঁচ মিনিটের জন্যেও এ মেয়েটিকে ছেড়ে যান তবে আমি পাঁচ শ টাকা পাব। পরে যখন আবার ইচ্ছা চলে আসবেন। আমার খুব উপকার হবে। হুযূরের কোন ক্ষতি হবে না। হুযূর আমি খুব গরীব মানুষ।

একথা শুনে জিন উচ্চ স্বরে হেসে দিল। বললো, পাঁচ মিনিট নয়। চিরদিনের জন্যে চলে গেলাম। তোর ভাল হোক।

এরপর থেকে এ মুয়াজ্জিনের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো যে সে জিনের একজন বড় ধরনের কবিরাজ। সারা জীবনের আয়ের ব্যবস্থা হয়ে গেল। আর পেলো অফুরন্ত শ্রদ্ধা ভালোবাসা।

কিন্তু এগুলো হলো শুধু বিনয় আর শ্রদ্ধা দেখানোর কারণে। বিনয় এক আশ্চর্য জিনিস।

আল্লাহর নগন্য মাখলুকের কাছে বিনীত হওয়ার কারণেই যদি এত কিছু লাভ করা সম্ভব হয় তবে যিনি খালেক এবং অফুরন্ত দয়ার মালিক তাঁর কাছে বিনীত হলে ইনশা আল্লাহ আরো অধিক ফল লাভ হবে।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।