
উৎকণ্ঠায় ঘুম হারাম বনের পশুদের। সামনের তিন মাসে যেসব পশুকে সাবাড় করা হবে, তাদের একটি তালিকা নাকি তৈরি করেছেন সিংহরাজ!
কাদের নাম আছে সেই তালিকায়, তা কেউ জানে না। অথচ জানা থাকলে ভালো হতো সবার জন্য— মরার আগে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যেত। যাদের নাম নেই, তারা নিশ্চিত আনন্দে বাঁচতে পারত।
অনেকেই জানতে চায়, কিন্তু সিংহের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করার সাহস কজনেরই বা হয়?
অবশেষে সাহস করে এগিয়ে এল জেব্রা। দিনের আলো থাকতে থাকতে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে দাঁড়াল সিংহের ডেরার সামনের বড়ো পাথরের আড়ালে।
— “কি রে, কী চাই?”
— “আমি কি আপনার লিস্টে আছি, মহারাজ?”
— “আছিস।”
উত্তর শুনে আর কিছু না বলে মন শক্ত করে ফিরে এল জেব্রা। বউ, ছেলে-মেয়ে, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিল।
তিন রাত পর জেব্রার আর কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না।
ভয়ে ভয়ে ক’টা দিন কাটল। কেউই সিংহের কাছে যেতে সাহস পেল না। অবশেষে অনেক বোঝানো-বুজানোর পর শেয়ালনি পাঠাল শেয়ালকে সিংহের কাছে।
শেয়াল গিয়ে বিনীতভাবে জানতে চাইল—
— “আমি কি লিস্টে আছি, মহারাজ?”
সিংহ শেয়ালের চশমা নিয়ে তালিকাটি পড়তে লাগল। একবার নয়, দুইবার। শুকনো মুখে অপেক্ষা করতে লাগল শেয়াল। তালিকা পড়ে সিংহ চশমাটি ফেরত দিয়ে জানতে চাইল—
— “তুই কি এই বনের ইস্কুলমাস্টার শেয়াল?”
— “জি, জাঁহাপনা।”
— “খারাপ খবর! তুইও আমার লিস্টে আছিস।”
শেয়াল এসে শেয়ালনিকে দুঃসংবাদটি জানাল। শেয়ালনি কেঁদে কেঁদে তা পুরো বনবাসীদের জানিয়ে দিল।
নতুন ইস্কুলমাস্টারের জন্য পাশের জঙ্গল থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হলো। একাধিক আবেদন থেকে একজনকে নিয়োগও দেওয়া হলো।
কিন্তু নতুন ইস্কুলমাস্টার কাজে যোগ দেওয়ার আগের রাতেই আগের শেয়ালমাস্টারের ঘাড় মটকে দিল সিংহ!
নতুন মাস্টার তার ক্লাস নেওয়া শুরু করল। বনের পশুরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে সারাদিন শুধু চিন্তা করল— “আজ কার পালা? কাল কার?”
এভাবে অনিশ্চয়তার মাঝে কতদিন থাকা যায়?
অবশেষে গাধা গেল সিংহের কাছে।
সিংহ তখন জেব্রা আর শেয়ালের মাংস মিশিয়ে নতুন এক রেসিপির পরিকল্পনায় ব্যস্ত। গাধাকে দেখেই গর্জন করে উঠল—
— “অসময়ে বিরক্ত করতে এসেছিস! কী চাই তোর?”
— “আমি কি আপনার লিস্টে আছি, মহারাজ?”
— “আছিস।”
— “তাহলে একটা আর্জি ছিল, মহারাজ।”
— “কী? তাড়াতাড়ি বল!”
— “নামটা কেটে দেবেন, হুজুর?”
সিংহ একটু হাসল।
— “নো প্রবলেম! কেটে দিলাম। এখন বাড়ি যা।”
গাধা নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরে গেল।
নৈতিকতা:
বিনা বাক্যে মেনে নেওয়ার চেয়ে কিছু বলা অনেক ভালো।