
কুরাইশ প্রধানরা ঠিক করল, মুহাম্মাদকে(সাঃ) সমাবেশে হাজির করে সকলে মিলে তাঁকে বুঝাতে হবে, বুঝাপড়া তার সাথে একটা করে ফেলতে হবে। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে মহানবীর (সাঃ) কাছে একজন দূত পাঠানো হলো। দূত গিয়ে মহানবীকে (সাঃ) কুরাইশ দরবারে হাজির হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলল, ‘আপনার স্বজাতিয় ভদ্রজনরা আপনার সাথে দু একটা কথা বলতে চান।’ মহানবী (সাঃ) এ খবর পাওয়ার পর বিন্দু মাত্র দ্বিধা করলেন না। উপস্থিত হলেন গিয়ে কুরাইশ দরবারে। শত্রু সমাবেশে তিনি হাজির হয়েছেন, এনিয়ে চিন্তার সামান্য লেশও তাঁর মধ্যে ছিল না। আরও অনেকের কাছে তিনি আল্লাহর দাওয়াত পৌঁছাতে পারবেন, এই মুহূর্তে এই আনন্দই তাঁর কাছে বড়।
কুরাইশ প্রধানরা উৎবার মত তাঁকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলো, সম্মান, সম্পদ, সিংহাসন যা চাও দিতে প্রস্তুত আছি। তুমি আমাদের উপদেশ গ্রহণ কর,”…………ইত্যাদি। তাদের সব কথা শুনে মহানবী (সাঃ) বললেন, “আমি আপনাদের কাছে সম্পদের ভিখারি নই, রাজা হবার আকাঙ্খা আমার নাই।…… প্রকৃত কথা এই যে, আল্লাহ সত্য ও জ্ঞানের আলোক দিয়ে ইহ-পরকালের মুক্তির পথ দেখানোর জন্য আমাকে আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন। এই বাণী গ্রহণ করলে এর দ্বারা আপনারাই ইহ-পরকালে সুফল পাবেন। আর যদি একে অস্বীকার করেন আমি ধৈর্য ধারণ করে থাকব- আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই হবে।”
অনুরোধে-প্রলোভনে কোন ফল হলো না দেখে কুরাইশ প্রধানরা মহানবীকে (সাঃ) ভীষণ ব্যঙ্গ –বিদ্রুপ করতে লাগলো। কই, তোমার আল্লাহকে বলে আমাদের মরুভূমিতে ইরাকের ন্যায় নদ-নদী করে দাও দেখি, সুজলা সুফলা করে দাও দেখি। অন্তত তোমার জন্য কিছু কর। তোমার আল্লাহ দেবাত্মাকে তোমার সহচর করে দিক, বৃহৎ প্রাসাদ, স্বর্ণ-রৌপ্যের ভাণ্ডার তোমার জন্য এনে দিক,……ইত্যাদি।
তাদের সব কথার উত্তরে মহানবী (সাঃ) ধীর স্বরে বললেন, “এই পার্থিব ধন-সম্পদের জন্য আমি প্রার্থনা করতে পারি না, তা আমার কর্তবের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমি বিশ্ববাসীর কাছে এক মহাসত্যের প্রচারক রূপে প্রেরিত হয়েছে।”
পর পর ব্যর্থতায় এবং মহানবীর (সাঃ) অচল অটল দৃঢ়তায় কুরাইশ প্রধানরা ভীষণভাবে খেপে গেল। তারা কঠোর ভাষায় বলল, “মুহাম্মাদ(সাঃ), আমাদের সব কথা তোমাকে বলে দিয়েছি। অতঃপর সাবধান, নিশ্চিতরূপে স্মরণ রেখো আমরা আর তোমাকে অধর্মের কথাগুলো প্রচার করতে দেব না- দেহে প্রাণ থাকতে না। এতে হয় আমরা ধ্বংস হয়ে যাব, না হয় তুমি।”
এই কথার পর সভাকক্ষে হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। নানা দিক থেকে অসহ্য বিদ্রুপ বাণ বর্ষিত হতে লাগলো। কিন্তু কোন কিছুই মহানবীর (সাঃ) মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারলো না। ‘আপন কর্তব্য সম্পন্ন হয়েছে’- এমন প্রসন্নতা নিয়ে মহানবী (সাঃ) ধীর পদক্ষেপে অটল পাহাড়ের ন্যায় সভা ক্ষেত্র চলে গেলেন।