অবাক কান্ড! মারিয়া বিড়ালটির কথা বুঝতে পারছে!
কেমন আছেন, আপু?
মারিয়া বুঝতে পারছে না, ব্যাপারটি সত্যি কি না? সত্যি হতে যাবে কেন? মানুষ প্রাণীদের ভাষা বুঝে না। যদি এমনটা কখনো ঘটে, তবে নিশ্চয়ই তার মাথার গন্ডগোল হয়েছে ধরে নিতে হয়। তবে কি তার..? নাহ! সে তো সুস্থ ভাবে চিন্তা করতে পারছে। একজন মানসিক রোগীতো এটা পারবে না। তবে হয়তোবা অতিরিক্ত দু:শ্চিন্তা থেকে এটা হচ্ছে। কি জানি!
বিড়ালটি তার দিকে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে। মাত্র ঘুম ভেঙেছে মারিয়ার। বিকালের এ ঘুমটা মারিয়াকে পুরোপুরি মাতাল করে দেয়। নড়াচড়ার শক্তিও থাকে না। সেজন্য বিছানা থেকে নেমে বিড়ালটাকে তাড়িয়েও দিতে পারছে না। মহা যন্ত্রণায় পড়া গেল!
আপু কেমন লাগছে আজ? বিড়ালটি তাকিয়ে আছে এমন ভাবে যেন বুঝা যাচ্ছে সে প্রশ্নের উত্তরের অপো করছে।
মোটামোটি। মারিয়ার মনে হল জবাব না দিলে বিড়ালটি তার রুম থেকে যাবে না।
আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে ইদানিং একটু বেশি দুশ্চিন্তা করছেন আপু। দুশ্চিন্তা করবেন না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
তুমি আমাকে আপু ডাকছ কেন? তুমি তো এ বাড়ির সদস্য। ভাবী ডাকতে পার, অথবা, অন্যদের মতো, চাচী, আন্টি এসব?
আপু, আপনি আমাকে চিনতে পারেননি। আমি আপনার বাড়ি থেকে এসেছি। আপনার হাজব্যান্ডকে আমি দুলাভাই ডাকি।
আমার বাড়ি থেকে? কবে আসলে?
এইতো যেদিন আপনি প্রথম এ বাড়িতে আসলেন, আপনার বিয়ের দিন।
বিয়ের দিন? আশ্চর্য! কিভাবে আসলে তুমি? মারিয়া এবার বেশ মজা পাচ্ছে।
আপনার গাড়ির পেছনে উঠে বসেছিলাম। ব্যস্ততার কারনে কেউ খেয়াল করেনি।
কেন আসলে অতো দূর থেকে, জানতে পারি কি?
বিয়ের দিন দেখাশোনা করার জন্য পাত্রীর সাথে তার ছোট বোন বা ভাই অথবা কোন কাজের বুয়াকে দেয়া নিয়ম। কিন্তু আপনার সাথে দেখলাম কাউকে দেয়া হচ্ছে না। তাই নিজ দায়িত্বে আপনার সাথে চলে আসলাম।
ভাল করেছ। তা মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে এসে এতোদিন কেউ থাকে বুঝি? যদ্দুর জানি, কন্যার সাথে আসা লোকজন ফিরাযাত্রার সময় চলে যায়।
সে কথা বলে আর লজ্জা দিবেন না আপু। আমিও চলে যেতাম।
যাও নাই কেন?
আপনারা যখন ফিরাযাত্রায় রওনা দিলেন, তখন আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আপনারা চলে গেলেন টেরও পাইনি।
সেদিন যেতে পার নাই, ইটস ওকে। বাট, পরে তো আমি আরো অনেকবার গিয়েছি।
আর লজ্জা দিবেন না আপু। লজ্জার কথা এটা। তবু আপনি জানতে চাইছেন যখন, বলি। আপনারা তখন বাসায় নাই। হঠাৎ একদিন দেখা হয়ে গেল পাশের বাসায় থাকা টমির সাথে। সে আমাকে প্রপোজ করল। বলল, সে নাকি আমাকে ভালবেসে ফেলেছে। love at first sight যাকে বলে আরকি। এর আগে কেউ আমাকে অমন করে বলেনি বলে থেকে গেলাম তার সাথে। এখানে দুজন বেশ সুখেই আছি। খাওয়া-দাওয়ার কোন অভাব নেই। দুই বাসায় মিলেঝুলে থাকি দুইজন। আপু কি রাগ করলেন আমার কথা শুনে?
নাহ! রাগ করব কেন?
আপু, একটা কথা বলব। আসলে কথাটা বলতেই আপনার রুমে ঢুকা।
তোমার আবার কি কথা?
আপু, দুলাভাইয়ের স্বভাব খারাপ।
কি যা তা বলছ!
জ্বি আপু। সত্যি ঘটনা। উনি বিড়াল দেখলেই ঢিল ছুঁড়ে মারেন। একেবার বিনা কারনে, আপু। বিশ্বাস করেন। সেদিন আমি উঠোনে একটু শুয়েছিলাম। দুলাভাই বাইরে থেকে আসলেন। গেট দিয়ে ঢুকে আমাকে দেখতে পেয়ে বলা নেই কওয়া নেই একটা ঢিল কুড়িয়ে নিয়ে ছুঁড়ে মারলেন। ভাগ্যিস! আমি আগেই দেখতে পেয়েছিলাম!
তো, আমি কি করব?
আপনি ভাইয়াকে একটু বলবেন, এমন কাজ যেন না করেন। আপনার কথা ভাইয়া শুনবেন। চিন্তা করেন আপু, সেদিন যদি ঢিলটা আমার পেটে লাগত, কি হতো ব্যাপারটা? আপু, বলতে লজ্জা করে, তবু বলছি। ব্যাপারটার গুরুত্ব তবে বুঝতে পারবেন আপনি। আপু, আপনার যেমন বাবু হতে যাচ্ছে, তেমনি আমারও।
মারিয়া খেয়াল করল , বিড়ালের পেটটা বেশ ঝুলে রয়েছে।
ওকে, বলে দেব। এখন তুমি যাও। আমার আবার ঘুম পাচ্ছে।
ঠিক আছে আপু, যাচ্ছি। মনে করে বলবেন কিন্তু। প্লিজ।
বিড়ালটি চলে গেল। এসব কি হচ্ছে! নীলার মাথা আসলেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে বোধ হয়! মারিয়া আবার ঘুমানোর চেষ্টা করল। কম ঘুমের কারনে এমন হেলুসিনেশন হচ্ছে।
২.
আপু, আপু…
মারিয়া ঘুমুচ্ছিল। অনবরত ডাকে ঘুম ভেঙে গেল তার। আবার দেখি উপদ্রব শুরু হল! মাঝে দুই দিন একেবারেই দেখা যায়নি বিড়ালটাকে। আজ আবার দেখা যাচ্ছে সামনের পা দুটি উঁচু করে বসে আছে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে। মারিয়া চোখ রগড়ে উঠে বসল।
কি ব্যাপার? ডাকছ কেন?
বিরক্ত করার জন্য এক্সট্রিমলি স্যরি। ঘুমুচ্ছিলেন বুঝি?
দেখতেই পাচ্ছ ঘুমুচ্ছি। তাড়াতাড়ি কথা শেষ কর।
আপু, ভাইয়াকে বলেছিলেন? ভাইয়া তো আজও তেড়ে আসলেন।
উফ! আশ্চর্য যন্ত্রণায় পড়া গেল। বলিনি। ভুলে গিয়েছিলাম। আজ বলব।
প্লিজ আপু মনে করে বলবেন।
ঠিক আছে। এখন যাও।
আপু, একটা কথা বলি?
আবার কি কথা?
আপু, আপনি আমাকে আগে যেভাবে টেক কেয়ার করতেন, এখনও সেভাবে করবেন প্লিজ। না হলে মনে কষ্ট পাই।
আগে টেক কেয়ার করতাম! মানে কি?
আপনি ভুলে গেলেন আপু? সেই যে, আপনার ছোট ভাইটা একদিন আমাকে মোড়ার ভেতর ঢুকিয়ে খেলা করছিল, আপনি দৌড়ে এসে আপনার ভাইকে ধমক দিলেন। আপনার ধমকে ভয় পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিল সে। সেই থেকে আমি আপনার জনমের গোলাম হয়ে আছি। তাইতো আমি নিজ দায়িত্ব থেকে আপনার দেখাশোনার জন্য চলে এসেছি এখানে।
মারিয়ার ঘটনাটা মনে পড়ল।
ও, তাহলে তুমি সেই বিড়ালটি?
জ্বি, আমি সেই। আপু আমাকে আপনি মিনি বলে ডাকবেন। আপনার ভাইটিই আমাকে এই নাম দিয়েছিল।
ওকে মিনি। আমি বলে দেব আজ। তুমি যাওতো এখন!
ওকে আপু। আসসালামুয়ালাইকুম।
আশ্চর্য! বিড়ালও কি মুসলমান হয়! নাকি মুসলিম বাড়িতে থাকে বলে সালাম দিল। হিন্দু বাড়িতে থাকলে নমষ্কার দিতো! ধুস! মারিয়া এ কি ভাবছে! নিশ্চয়ই এটা একটা স্বপ্ন। একটু পরেই ঘুম ভাঙবে। নাহ! মারিয়ার আবার নতুন করে ঘুম ভাঙল না। সন্ধার পর রাকিব বাড়ি ফিরল। মারিয়া রাকিবকে জিজ্ঞেস করল, রাকিব, তুমি কি আজ বিড়ালটাকে মেরেছ?
রাকিব কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, হঠাৎ এ প্রশ্ন?
না এমনি। মেরেছ কিনা বল।
মেরেছিলাম তো। কিন্তু থ্রোটা ভাল হয়নি। লাগল না। জানো, আমি যখন ক্রিকেট খেলতাম, খুব ভাল ফিল্ডার হিসেবে নাম ডাক ছিল । সবাই আমাকে জন্টি রোডস বলে ডাকত। এক থ্রোতে স্টাম্প উড়িয়ে দিতাম। এখন বয়স হয়েছে। হাতের নিশানা আর আগের মতো নাই।
সেই চিরাচরিত রাকিব। কিছু বলতে গেলেই ক্রিকেট। এমন কি মারিয়ার আব্বার সাথেও ক্রিকেট নিয়ে গল্প। সবাই খেতে বসেছে। ইলিশ মাছ রান্না হয়েছে। আব্বা বলছেন তার সময়ের ইলিশ মাছের গল্প।
বুঝছ রাকিব, আমাদের সময় দুটাকা টাকা দিয়ে ইলিশ কিনেছি। পদ্মার ইলিশ। কি টেইস্ট! বলে বুঝাতে পারব না। এখনকার মতো কেজি হিসাব ছিল না তখন। বাজারে গেলেই আস্ত ইলিশ ব্যাগে ঢুকিয়ে দিত জোর করে।
নিখাঁদ ইলিশের গল্প। এখানে ক্রিকেট নিয়ে আসা স্বয়ং স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পক্ষেও সম্ভব না। অথচ রাকিব ঠিকই নিয়ে আসল।
জ্বি আব্বা। আমি যখন ছোট ছিলাম তখনও কিন্তু ইলিশ পাওয়া যেত। মানে এখনকার মতো অতো র্যায়ার ছিল না। সকালে ইলিশ মাছ ভাজা খেয়ে ক্রিকেট খেলতে যেতাম। একবার আব্বা কি হলো জানেন, আমি ওপেনিং উঠে শেষ পর্যন্ত খেললাম। ৫০ ওভার খেলে আমার রান কতো জানেন আব্বা মাত্র ৩৫। আপনি ভাবছেন, আমি খুব বাজে খেলেছি। বিশ্বাস করেন আব্বা, আমার খেলাটা সময়পোযোগী হয়েছিল। খেলা দেখলে বুঝেত পারতেন। উইকেটের পর উইকেট পড়ে যাচ্ছে আর আমি একটা এন্ড ধরে রেখেছি। ইশ! আমি যদি এখনো খেলতাম আব্বা, আপনাকে স্টেডিয়াম নিয়ে যেতাম।
এই হচ্ছে রাকিব। এতো ক্রিকেট ভক্ত খুব কমই দেখেছে মারিয়া।
এখন তাই সাবধানী মারিয়া রাকিবকে ক্রিকেটে যেতে দিল না।
তুমি বিড়াল দেখলেই মারো কেন?
একশবার মারব। বিড়ালের মতো মিচকা শয়তান খুব কম আছে। দেখতে মনে হয় কতো সুন্দর, কতো নিরীহ। অথচ ভেতরে ভেতরে কি না করে বেড়ায়। সুযোগ পেলেই লুকিয়ে দুধ, মাছ সব সাবাড় কর ফেলে। বিড়ালে কামড়ালে কি হয় জান? রেবিস। ভয়ানক রোগ। হলে নির্ঘাত মৃত্যু! মৃত্যু অবশ্য ক্রিকেট খেললেও হয়। রমন লাম্বাকে চেন? খুব ভাল ক্রিকেট খেলত। আবাহনীর হয়ে খেলত। মনে আছে তোমার?
না, মনে নাই। মনে করতেও চাইনা। ক্রিকেট পাগল এই মানুষটার সাথে সিরিয়াসলি একটা কথাও বলা যায় না। মারিয়া রান্না ঘরে চলে গেল।
রান্না ঘরের পাশে বাড়ির যে পেছন দরজা সেখানে বিড়ালটি বসে ছিল।
আপু, করছেন কি? পানি ভর্তি হাঁড়িতো আপনার তোলা উচিত না। ভারী জিনিস কখনো তুলবেন না।
মারিয়া পেছন ফিরে বিড়ালটি দেখতে পেল। মাথা গরম হয়ে গেল তার। চুপ! চুপ! একটা কথাও বলবি না তুই। যা ভাগ! মারিয়া হাত তুলে ঢিল ছোঁড়ার ভঙ্গি করল। চিৎকার শুনে শাশুড়ি দৌড়ে আসলেন। কি হয়েছে, মারিয়া? কার সাথে কথা বল?
না, মা। ব্যাথা পেয়েছি পায়ে!
তোমাকে কতবার বললাম, দেখে শুনে থাকবে তুমি। এসময় সাবধান থাকতে হয়।
ঠিক আছে আম্মা, সাবধান থাকব।
৩.
মারিয়া বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছে। থ্রি ম্যান ইন অ্যা বোট । হাসির বই। হাসতে হাসতে পেটে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
হ্যারিস ঢুকেছে একটা গোলক ধাঁধায়। এ গোলক ধাঁধায় ঢুকলে নাকি কেউ বেরুতে পারে না। হ্যারিস খুব গল্প করতে করতে ঢুকল, এটা কোন গোলকধাঁধা হল নাকি? সে পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হয়ে সবাইকে দেখাবে। পথ খুঁজে না পাওয়া যাকেই পাচ্ছে তাকেই বলছে আমার সাথে আসেন এটা কোন ব্যাপারই না। সবাই তার পিছু নেওয়া শুরু করেছে। পাঁচ মিনিট অতিক্রম হয়ে ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ হ্যারিস গোলক ধাঁধার কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না। সবাই ধীরে ধীরে হ্যারিসের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। তবু হ্যারিস বলছে, এটা কোন ব্যাপার না। বড়জোর আর পাঁচ মিনিট লাগবে। কঠিন অবস্থা! হাসতে হাসতে নীলার চোখ পড়ল ড্রেসিং রুমের কাছে বসে থাকা মিনির দিকে। কিরে মিনি কেমন আছিস?
না আপু, অতোটা ভাল না।
কেন?
বেশ শীত পড়েছে। ঠান্ডা লাগে।
মারিয়া আবার পড়তে শুরু করল।
আপু, একটা কথা বলি?
বল।
ভাইয়াকে বলে আমার জন্য একটা বাক্সের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
বাক্স!কেন?
আমার থাকার জন্য। রাতের বেলা প্রচন্ড শীত লাগে। বাক্সের ভেতর থাকলে শীত একটু কম লাগবে।
আচ্ছা, দেখি।
বিদেশে বিড়ালদের কতো আদর যত্ন করা হয়। থাকার জন্য বাক্সের ব্যবস্থা থাকে। বাথরুম করার জন্য থাকে লিটার বক্স। বাচ্চা প্রসবের সময় ডেলিভারী বক্স। কতো সুবিধা! শালা, বাংলাদেশ। এদেশে কিছুই নাই।
এটা কেমন ভাষা মিনি!
স্যরি আপু। আর এমন হবে না।
আপু, আপনি পড়েন। আমি আছি।
তোমাকে থাকতে হবে না। চলে যাও।
না আপু, আমি ঠিক করেছি এ অবস্থায় যতক্ষণ পারি আপনার আশেপাশে থাকব। কখন কি লাগে বলা যায় না।
ওকে বাবা, তোমার যা খুশি কর।
আপু, আর একটা কথা।
আবার কি?
আপনার ছেলে হবে।
তুমি কি করে জানলে?
আমরা অনেক কিছু বুঝতে পারি। আপু, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি আছি। আপনি দয়া করে আমার একটু খেয়াল নিবেন। কাজের মেয়েটাকে বলে দেবেন আমাকে যেন মাঝে মাঝে একটুখানি দুধ দেয়। এসময় আপনার যেমন পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন, আমারও প্রয়োজন।
ওকে বলা যাবে।
মারিয়ার ছেলে হবে, ছেলে! খুব আনন্দ লাগছে তার। পড়া ফেলে পিচ্চি বাবুটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করল মারিয়া। খানিক পরে আবার বাস্তবে ফিরল। কি আশ্চর্য! কি আশ্চর্য! বিড়ালের সাথে কথা বলাটাকে এখন সে সত্যি মনে করছে! এমনকি বিড়ালের কথাকেও বিশ্বাস করা শুরু করেছে! এটা কি তবে পাগলামীর শুরু। নীলা কি পাগল হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।এসময় নাকি এমনটা হয় মাঝে মাঝে। রাকিবের সাথে আজকেই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে হবে। নাহ! রাকিব তবে খুব হাসবে। সবাইকে বলে বেড়াবে। নাহ। বেড়াল প্রসঙ্গে কোন কথাই তাকে বলা যাবে না। মরে গেলেও না।
রাকিব বাইরে থেকে আসতেই নীলা বায়না ধরল। এই চলো না আলট্রাসনো করে আসি।
কেন? হঠাৎ! কোন সমস্যা?
নাহ, সমস্যা না। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে ছেলে না মেয়ে হবে।
আশ্চর্য ব্যাপার! সেদিনই তো তুমি বললে ছেলে মেয়ে আল্লাহ ঠিক করে দেন। এটা আগেভাগে জানা উচিত না।
সেদিন ইচ্ছে করেনি। আজ করছে। নিয়ে যাবে কি না বল।
রাকিবের খুব খুশী খুশী লাগছে। তাদের ছেলে হবে। ছেলেকে ক্রিকেটার বানাবে। খুব বড় ক্রিকেটার। বাংলাদেশ জাতীয় টিমে খেলবে।
মারিয়া কেন জানি না ভাল লাগছে না। বিড়ালের সাথে কথা বলার বিষয়টা কি তবে সত্যি। মারিয়া কি তবে সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছে। মারিয়ার খুব ভয় করে উঠে।
৪.
সারা পেট জুড়ে তীব্র ব্যাথা। অপার্থিব ব্যাথা। ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সে। বিছানা থেকে নামতে পারছে না কিছুতেই। এখন তো এ ব্যাথা উঠার কথা না। আরো দুই তিনদিন দেরী হওয়ার কথা। হঠাৎ ব্যাথার তীব্র আক্রমনে সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। শশুড় শাশুড়ি দুজনের কেউ এখন বাসায় নেই। রাকিব আছে তবে টিভি রুমে। বেশ সাউন্ড দিয়ে খেলা দেখছে। ডাকলেও তো শুনবে না। মারিয়া কোনরকমে পাশে রাখা মোবাইল হাতে নিল। চার্জ নেই! এখন। রাকিবকে কি করে ডাকবে সে? বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করতেই তীব্র ব্যাথা তাকে আবার বিছানায় শুইয়ে দিল। এমন সময় মারিয়া মিনির কণ্ঠ শুনতে পেল, আপা, ঘাবড়াবেন না। আমি এক দৌড়ে দুলাভাইকে নিয়ে আসছি। আপনি ধৈর্য ধরেন। মারিয়া ব্যাথায় কোন উত্তর দিতে পারল না।
৫.
মারিয়ার কোলজুড়ে ফুটফুটে একটা বাবু। ঠিক তার বাবার মতো হয়েছে দেখতে। গতকাল মারিয়াকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। বাচ্চা এবং মা দুজই সুস্থ। বাবুর সাথে কথা বলতে বলতে তার হঠাৎ মিনির কথা মনে হল। রাকিবকে ডাকল সে। রাকিব পাশের রুমেই ছিল।
অ্যাই, একটা বিড়াল ছিল আমাদের বাসায়। ওটাকে দেখছি না যে!
ওই পাজিটার কথা বলছ? রাকিবের কণ্ঠে ওষ্মা।
পাজি বলছ কেন? কি করেছে?
আর বলোনা! সেদিন ঐ যে তোমার ব্যাথা উঠল যেদিন, আমি তো তখন খেলা দেখছিলাম। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই আমার পায়ে এসে কামড়ে ধরল। আমি লাথি দিয়ে কোন রকমে ছুটতে পেরেছিলাম। তারপরই তো স্যাভলন লাগাতে গিয়ে দেখি তুমি ব্যাথায় মরে যাচ্ছ। এই দেখ, এইখানে কামড় মেরেছে পাজিটা। রাকিব তার পায়ে কামড়ের চিহ্ন দেখাল।
মারিয়া অবাক হলেও বুঝতে দিল না। বলল, বিড়ালটাকে দেখছি না কেন?
আর কোথায় খুঁজে পাবে ওটাকে। রমিজকে বলেছি বস্তায় ঢুকিয়ে দূরে কোথাও ফেলে আসতে। এতোদূও থেকে স্বয়ং কলম্বাসও ফিরে আসতে পারবে না।
মারিয়া বুঝতে পারল, বিড়ালটা তাকে বাঁচাতেই রাকিবকে ওভাবে কামড়ে ধরেছিল। রাকিব তো আর বিড়ালের কতা বুঝতে পারে না। মারিয়ার মনটা বিষাদে ভরে গেল। বিড়ালটা তাকে বলেছিল আমি আপনার দেখাশুনা করব, বিনিময়ে আপনি একটু আমার দেখাশুনা করবেন। বিড়ালটি তার কাছে একটা বাক্স চেয়েছিল, দুধ চেয়েছিল। বিড়াল কথা রেখেছে, মারিয়া রাখেনি। মন খারাপ করে সে বাবুটার পাশে শুয়ে থাকল।
৬.
পরদিন বিকেলে বাবুর ভিজে যাওয়া কাঁথাটি ধুঁয়ে রোদে দিতে উঠোনে গিয়ে মারিয়া অবাক। মিনি! মারিয়ার মনটা আনন্দে ভরে ইঠল। তার মনে হল মা বেড়াতে এসেছেন মেয়েকে দেখতে।
মিনি, কেমন আছ তুমি? নিজের অজান্তেই প্রশ্নটি চলে আসল মারিয়ার মুখে।
কিন্তু মিনি তো শুনল না! শব্দ শুনে কেবল একবার তার দিকে তাকাল। তারপর আপনমনে রান্নাঘরের পেছন দিকে এগুতে থাকল।
মিনি, এই মিনি। মারিয়া আবার ডাকল।
তার ডাক শুনে শাশুড়ি বারান্দায় আসলেন। কি হয়েছে বৌমা। কাকে ডাক?
না মা, কিছু না। মারিয়া তার রুমে ঢুকল। বিড়ালের ব্যাপারটি তাকে ধাঁধায় ফেলে দিল। সে অনেকক্ষণ চিন্তা করল। আরো কয়েকবার মিনির কাছে গেল। কিন্তু না। মিনি থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না। তার মনে হল, বিড়াল রহস্য বুঝিবা সে আর কখনোই উদঘাটন করতে পারবে না।