সুনীল আকাশ। পেঁজা তুলোর পাহাড়ে ঘেরা। কুয়াশাচ্ছন্ন। আস্তে আস্তে ফিকে হয়। টুপ টুপ শিশির ঝরে পাতায়-ঘাসে। মৃদু হাওয়ায় দোল খায় লাউডগা। জারুল গাছের পাতার ফাঁকে দোয়েলের শিস। পুকুর-ডোবায় আকাশের তারার মতো শাপলা ফোটে। হাসে কুটিকুটি। ঢেউ লেগে আহ্লাদে ফেটে পড়ে। পুব আকাশে চিকচিক উঁকি দেয় সূয্যিমামা। শুরু হয়ে যায় নতুন একটা দিনের।
আদিগন্ত বিস্তৃত আকাশের গায়ে সোনারোদ ঝিকমিক। নদীর ঢেউ খেলে কুলকুল। পাল উড়িয়ে চলে নৌকোসারি। মাঝির কণ্ঠে ভাটিয়ালির মিহিন সুর। এক মায়াবী জগৎ। ভালো লাগার দুর্বার হাতছানি।
এমন যে দৃশ্য, তাতে মন ব্যাকুল করে। আকুল হয়।
এই যে চমৎকার স্বপ্নসুন্দর পরিবেশ, সে আমাদের দেশের। প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশের চিরচেনা ছবি। এমন মনকাড়া ছবি বিশ্বের আর কোথাও মিলবে না। তাই তো আমরা কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে উঠি একটা মিষ্টি গান- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’
হ্যাঁ, আমরা সবাই ‘বাংলা’ নামের দেশটাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। মায়ের প্রতি যেমন আমাদের সীমাহীন নির্ভেজাল ভালোবাসা- তেমনি ভালোবাসা এ দেশের মাটির প্রতিও। আরও ভালোবাসা মানুষ বাতাস আকাশ পাহাড় ঘাস ফুল পাখি প্রজাপতি নদী আর আদিগন্ত সবুজের প্রতিও।
কিন্তু এ সোনার দেশটি একদিন আমাদের ছিল না। পাকিস্তান নামক দেশের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আর আমাদের এ অংশের নাম ছিল- ‘পূর্ব পাকিস্তান।’
আমরা বাঙালি। আমাদের মিষ্টি একটা ভাষা আছে। নাম বাংলা। আর পাকিস্তানিরা ভিনভাষী। তাদের সব কিছুতেই আমাদের সঙ্গে অমিল। চলায়। বলায়। ভাষায়। বলতে পারো সব কিছুতেই।
মুখের ভাষাটাও তারা কেড়ে নিতে চাইল। আমরা সমস্বরে ‘না’ বললাম।
এ ‘না’-কে প্রতিষ্ঠা করতে কারা ভূমিকা রেখেছিল জানো? এ দেশের অসংখ্য ছাত্র, শিক্ষক, যুবক, জেলে, চাষা, কুলি, মজুর, তাঁতি, মাঝি আর তোমাদের মতো দামাল কিশোরটিও।
এত লোকের ‘না’ বলা কণ্ঠ তারা আবার থামিয়ে দিতে চাইল। আর এর জন্য আবার এক নয়, দুই নয় দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই চলল তাদের সঙ্গে আমাদের।
১৯৭১ সালে সংঘটিত ওই লড়াইয়ের নাম ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ’। গোটা বাঙালি জাতিই সেদিন ষড়যন্ত্রকারীদের কবল থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল। তাই অমন নাম। ওরা ওই মুক্তিকামি মানুষদের রুখে দিতে নানারকম অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। কিন্তু প্রমাণ হয়েছিল- দেশপ্রেমের কাছে সবকিছু নস্যি।
লড়াই করার অর্থ হল- আমরা আর তাদের সঙ্গে থাকতে চাই না। স্বাধীনতা চাই।
চলার স্বাধীনতা। বলার স্বাধীনতা। দেখার স্বাধীনতা। ভাবার স্বাধীনতা। ভাষার স্বাধীনতা- কেবলই স্বাধীনতা।
যে স্বাধীনতা বিশ্বে আমাদের আলাদা করে চেনাবে। আমাদের একটা নিজস্ব মানচিত্র হবে। পতাকা হবে। এ দাবিই ছিল মূল। আমরা বললাম- ‘আমাদের দাবি মানতে হবে।’
ওরা ‘না’ বলল।
‘না’ বললেই হল? এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার নেশায় মেতে উঠল। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গেল। বীরের মতো লড়াই করে রক্ত দিল। কত রক্ত! তারপর ওরা হারল। আমাদের চরম মনোবলের কাছে ওরা পরাজিত হল।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা নতুন একটা পতাকা পেলাম। আর পেলাম নতুন একটা দেশের ঠিকানা। পেলাম স্বাধীন মানচিত্র। গর্বে আমাদের বুকটা টান টান হল। তার মানে ওই দিন আমরা পাকিস্তানি দস্যু বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে বিজয় অর্জন করলাম।
আমাদের নতুন দেশটির নাম হল- ‘বাংলাদেশ’। বিশ্বে স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা নতুন করে পরিচিতি পেলাম।
স্বাধীন দেশের লাল-সবুজ পতাকা সেদিন থেকে স্বগৌরবে পতপত করে আকাশে ওড়ে ঘোষণা করে তার শ্রেষ্ঠত্বের কথা।
প্রিয় এ দেশটির মুক্তির কথা আমরা কখনও ভুলব না। যাদের রক্ত আর প্রাণের বিনিময়ে এ দেশ, এ মাটি তাদের মনে রাখব চিরদিন। দেশকে ভালোবেসে প্রতিদিন অন্তত একবার আমরা সবাই বলব- ‘প্রিয় বাংলাদেশ, আমি তোমায় ভালোবাসি। আজীবন ভালোবাসব।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।