বিচারের অপেক্ষায়

মানুষদের নিজ নিজ পিতার নামে ডাকা হবে
হযরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন তোমাদের নামের সাথে তোমাদের বাবার নাম যোগ করে ডাকা হবে। এজন্য তোমরা ভাল নাম রাখ। [মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ]
কেয়ামত উচুঁ-নীচু কারী
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেনÑ “যখন ঘটনা ঘটার তখন ঘটে যাবে, তা ঘটার মধ্যে কোন মিথ্যা নেই। সে (কেয়ামত) নীচু কারী এবং উচুঁ কারী।”   কেয়ামতের দিন আমল অনুযায়ী মানুষের শ্রেণীবিভাগ হবে। ছোট-বড় হওয়ার মাপকাঠি হবে নেকী-বদী। দুনিয়াতে ছোট বড় হওয়ার যে মাপকাঠি আছে তা সেখানেও থাকবে। বড় বড় অহংকারী- যাদের দুনিয়াতে প্রভাবশালী এবং উঁচু মনে করা হতো- তাদের কেয়ামতের দিন জাহান্নামের নীচু গর্তে নিক্ষেপ করা হবে। তাদের অহংকার আভিজাত্য বড়ত্ব সব মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে। তখন তারা বলবেÑ ‘আমার মাল আমার কোন কাজে আসল না, আমার রাজত্ব রাজ্যক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গেছে।’
তখন এরকম বলে আফসোস করে কোন লাভ হবে না, কোন কাজে আসবে না। অনেক লোক এমন আছে যারা দুনিয়াতে বিনয়ের সাথে থাকত। লোকেরা তাদের তুচ্ছ দৃষ্টিতে দেখত, নীচু জাতের মনে করত, তাদের বড়ত্বের কোন খেয়াল ছিল না, কিন্তু যেহেতু তারা আল্লাহ পাকের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখে এবং তাঁর আহকামের ওপর আমল করে, এজন্য কেয়ামতের দিন তাদের কেউ কেউ মেশকের টিলার ওপর বসবে, কেউ নূরের মিম্বরের ওপর বসবে, কেউ আরশের ছায়াতলে মজা করতে থাকবে। অতঃপর অনেকে বিনা হিসাবে এবং অনেকে হিসাব-নিকাশের পর জান্নাতে প্রবেশ করে সেখানকার বালাখানায় আরামে বসবাস করতে থাকবে। ‘তাদের ধৈর্যের প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত দেয়া হবে। তাদের সেখানে অভিবাদন ও সালাম সহকারে অভ্যর্থনা জানানো হবে।’
অতঃপর বলেন, সাবধান, দুনিয়াতে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা নিজেদের সম্মানিত বানিয়ে রাখে। আসলে তারা নিজেদের লাঞ্ছিত, অপমানিতই বানাচ্ছে (যা আখেরাতে বুঝা যাবে)।
দুনিয়াতে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা (বিনয় ও সরলতার কারণে) নিজেকে ছোট করে রাখে। আসলে তারা নিজেদের সম্মানিত বানাচ্ছে (কেননা, এ বিনয়, নম্রতা, সরলতাই তাদের জান্নাতে পৌঁছে দিবে)। [তারগিব ওয়া তারহিব]
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লা সা. এরশাদ করেছেন- ‘অবশ্যই এমন হবে, কেয়ামতের দিন (অনেক) মোটাতাজা লোক আসবে, যার ওজন আল্লাহর কাছে মাছির সমানও হবে না (সেদিন তার কোন মর্যাদাই থাকবে না)। অতঃপর হুজুর সা. বলেন, তোমরা (আমার কথার সত্যতা) চাইলে এ আয়াত তেলাওয়াত কর- “রোজ কেয়ামতে আমি তাদের জন্য তুলনাদন্ড স্থাপন করব না।”
আজ দুনিয়ায় এমন অনেক মালিক আছে, যারা চাকর-নওকর, সেবক পরিচালকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, মারপিট করে, তাদের বেগার খাটায়। আবার এমনও অনেক লোক রয়েছে, যারা ধনী, পয়সাওয়ালা, নিজের ধণাঢ্যতা এবং পদমর্যাদার কারণে সাধারণ মানুষদের কথায় কথায় লাথি ঘুষি মারে, খারাপ ব্যবহার করে, কিন্তু কেয়ামতের দিন এসব আচরণের সঠিক ফয়সালা এবং সত্যিকারের ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে। সেখানে অনেক চাকর-নওকর এবং নিচু মানের লোক উচ্চ মর্যাদায় আসীন হবে, আর অহংকারকারী ও সম্পদশালী যারা আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করেছে, তারা নিচুস্থানে চলে যাবে। তাদের ওপর লাঞ্ছনা সওয়ার হবে এবং তারা জাহান্নামের রাস্তা দেখবে। কি অবস্থা হবে যারা অহংকার প্রদর্শনের জন্য নির্বাচনের পরে নির্বাচনে লড়ে যায় এবং বড়ত্ব প্রকাশের জন্য একের পর এক আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে থাকে!

নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন   কেয়ামতের দিন নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “সেদিন তোমাদের নেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।”
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন- ‘নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন নেয়ামতসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম সুস্বাস্থ্য এবং ঠাণ্ডা পানি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। জিজ্ঞাসা করা হবে, আমি কি তোমার শরীর সুস্থ রাখিনি! আমি কি ঠাণ্ডা পানি দ্বারা তোমার তৃষ্ণা মিটাইনি?’ [তিরমিযি শরিফ]
মহান আল্লাহ বান্দাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে তাদের কোন প্রকার অধিকার ছাড়াই দিয়েছেন। তাই আল্লাহ তাআলার এ অধিকার অবশ্যই রয়েছে, তিনি তাঁর নেয়ামতের ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন এবং এই বলে পাকড়াও করতে পারেন, তুমি আমার নেয়ামতের মধ্যে ডুবে ছিলে, বল তুমি আমার নেয়ামতের কি হক আদায় করেছ? নিজেকে কি পরিমাণ আমার এবাদতে লাগিয়েছ? আমার দেয়া নেয়ামতের পরিবর্তে কি নিয়ে এসেছ?
এ প্রশ্নগুলো খুবই কঠিনভাবে হবে, মুবারকবাদ তাদের জন্য যারা আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়ায় আমলে সালেহ (নেক আমল) করছে এবং আখেরাতের প্রশ্নের ভয়ে দুনিয়ার জীবনে প্রকম্পিত হচ্ছে। বদনসীব তাদের, যারা আল্লাহর নেয়ামতের মধ্যে ডুবে থেকেও তার শুকরিয়া আদায় করছে না, আল্লাহর এবাদতের প্রতি কোন খেয়ালই তাদের নেই। এ ভয়ও করছে না, একদিন আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে। আল্লাহর অগণিত নেয়ামত  সম্পর্কে কুরআন করিমে এরশাদ হয়েছেÑ “যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করতে চাও তাহলে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না।
  এর সাথে সাথেই আল্লাহ পাক এরশাদ করেনÑ “নিশ্চয়ই মানুষ অত্যাচারী অকৃতজ্ঞ।”
নিশ্চয়ই এটা মানুষের বড় অজ্ঞতা এবং সীমালংঘন। যেখানে তারা অন্য মানুষের সামান্য উপকার পেলেও তার শুকরিয়া আদায় করে, যার কাছ থেকেই কিছু পায় তার কাছে নত হয়, তার সামনে ভদ্রতার সাথে দাঁড়ায়, অথচ উক্ত দাতা কোন স্বার্থ ছাড়া কিছু দেয় না। কোন কাজের বিনিময়ে বা সামান্য কোন কাজে আসবে এ আশায়ই দেয়। মহান আল্লাহ গনি (ধনী) এবং মুগনী (সম্পদ দানকারী)। তিনি কোন বিনিময় ছাড়াই দান করেন, অথচ মানুষ তাঁর আহকাম মেনে চলতে, তাঁর সামনে মাথা নত করতে অস্বীকার করে। এটা বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয়। মানুষ আল্লাহর নেয়ামত গণনা করে শেষ করতে পরবে না। তাঁর প্রতিটি নেয়ামতেরই সে মুখাপেক্ষী। শুধু শরীর সুস্থ এবং ভাল থাকাটাই কত বড় নেয়ামত। যখন পিপাসা লাগে তখন ঘটঘট করে ঠাণ্ডা পানি পান করা হয়। এ পানি কে সৃষ্টি করেছেন? সেই সৃষ্টিকারীর নিয়ম কানুন মেনে চলার এবং তাঁর শোকরগুজার বান্দা হওয়ার চিন্তা আছে কিনা? এটাই দেখার বিষয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন- ‘কেয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মানুষ হিসাবের জায়গা থেকে পা সরাতে পারবে না।
১.বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে, তা কোন কাজে শেষ করেছ?
২. যৌবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোথায় অতিবাহিত করেছে?
৩. সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোথা থেকে উপার্জন করেছ?
৪. সম্পদ কোথায় ব্যায় করেছে?
৫. জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে (দ্বীন এবং দ্বীনিয়াতের) জ্ঞানে কি আমল করেছ? [তিরমিযি শরিফ]
হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেছেন, কেয়ামতের দিন মানুষের তিনটি দফতর (ফাইল) হবে। একটিতে তার নেক আমল আর দ্বিতীয় দফতরে তার গুনাহসমূহ লিপিবদ্ধ থাকবে। তৃতীয় দফতরে আল্লাহর সেসব নেয়ামত লিপিবদ্ধ থাকবে যা আল্লাহ তাকে দুনিয়ার জীবনে দান করেছেন। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দাকে দেয়া সবচেয়ে ছোট নেয়ামতকে বলবেন, তোমার দাম তার নেক আমল থেকে নিয়ে নাও। সুতরাং ছোট নেয়ামতই তার সব নেক আমল নিজের দাম হিসাবে নিয়ে নিবে। তারপর আরজ করবে, হে রব! আপনার ইজ্জতের কসম, এখনও আমি আমার পূর্ণ দাম উসুল করতে পারিনি। এখন বাকী রইল শুধু গুনাহ এবং নেয়ামত (যার মূল্য দেয়া হয়নি)। নেক আমল যা ছিল তা তো ছোট নেয়ামতের দাম দিতেই শেষ হয়ে গেছে। যখন আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর রহম করতে (মাগফেরাত করে জান্নাত দানের) ইচ্ছা করবেন, তখন বলবেন, হে আমার বান্দা! আমি তোমার নেকী বৃদ্ধি এবং গুনাহসমূহ মাফ করে দিলাম। হাদিস বর্ণনাকারী হযরত আনাস রা. বলেন, সম্ভবত হুজুর সা. এখানে আল্লাহ পাকের এ বাণী বলেছেনÑ “আমি তোমাকে আমার এ নেয়ামতও বিনিময় ছাড়া দান করলাম।” [তারগিব ওয়া তারহিব]
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সা. এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন মানুষকে বকরীর বাচ্চার ন্যায় আনা হবে এবং আল্লাহ পাকের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ পাক বলবেন, আমি তোমাকে দান করেছিলাম, নেয়ামত দ্বারা একাকার করে দিয়েছিলাম, তুমি কি করেছ?
সে জওয়াব দিবে, হে রব! আমি মাল-সম্পদ জমা করেছি এবং লাভের পর লাভ করে শুরুতে যা ছিল তার চেয়ে অনেক বৃদ্ধি করে দুনিয়াতে রেখে এসেছি। তাই এখন আপনি আমাকে অনুমতি দিন আমি সেগুলো আপনার দরবারে হাজির করি। বলা হবে (এখান থেকে ফিরে যাওয়ার কানুন নেই), যা পূর্বে এখানে পাঠিয়েছ তা দেখাও।
সে জওয়াবে পূর্বের কথাই বলবে, হে রব! আমি সম্পদ জমা করেছি। লাভের পর লাভ করে শুরুতে যা ছিল তার চেয়ে অনেক গুণ বাড়িয়ে দুনিয়াতে রেখে এসেছি। এখন আপনি আমাকে পাঠিয়ে দিন, আমি সেগুলো আপনার দরবারে এনে হাজির করি।
এবারও তাকে সে জওয়াবই দেয়া হবে। যেহেতু সে পূর্বে (দুনিয়াতে থাকতে) কিছুই পাঠায়নি, তাই তাকে জাহান্নামের পথে রওয়ানা করে দেয়া হবে। [তিরমিযি শরিফ]
হযর নূহ আ. -এর উম্মত এবং অন্য উম্মতের বিরুদ্ধে উম্মতে মুহাম্মদীর সাক্ষ্য
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন হযরত নূহ আ.-কে আনা হবে এবং তাঁকে প্রশ্ন করা হবে, আপনি কি তাবলিগ করেছেন (দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন)? তিনি আরজ করবেন, হে রব! আমি সত্যিকারই তাবলিগ করেছি। অতঃপর তাঁর উম্মতকে প্রশ্ন করা হবে, বল, নূহ কি তোমাদের নিকট আমার আহকাম পৌঁছে দিয়েছিলেন? তারা বলবে, না! আমাদের কাছে কোন নাযির (ভীতি প্রদর্শনকারী) আসেনি। এরপর হযরত নূহ আ.-কে জিজ্ঞাসা করা হবে, আপনি যে দাওয়াত দিয়েছেন এর সত্যায়ন করার মতো কোন সাক্ষী আছে কি? তিনি জওয়াব দিবেন, হযরত মুহাম্মদ সা. এবং তাঁর উম্মত আছেন। এ পর্যন্ত বলে হুজুর সা. নিজ উম্মতের উদ্দেশ্যে এরশাদ করেন, এরপর তোমাদের আনা হবে এবং তোমরা সাক্ষ্য দিবে- “নিশ্চয়ই হযরত নূহ আ. নিজের উম্মতের মধ্যে তাবলিগ করেছেন।” এরপর হুজুর সা. এ আয়াত তেলাওয়াত করেনÑ “আর আমি তোমাদের এমন এক উম্মত বানিয়েছি যারা সাক্ষী হবে অন্যান্য উম্মতের লোকদের বিরুদ্ধে, আর তোমাদের জন্য সাক্ষী হবেন রাসুল সা. ।
এটা বুখারি শরিফের রেওয়ায়াত। মুসনাদে ইমাম আহমাদের এক বর্ণনায় রয়েছে, হযরত নূহ আ. ছাড়াও আরো অনেক নবীর উম্মত তাদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে নবীদের আসার কথা অস্বীকার করবে এবং বলবে, আমাদের কাছে দীনের দাওয়াত দেয়া হয়নি। তখন নবীদের প্রশ্ন করা হবে, তোমরা কি তাদের দীনের দাওয়াত দিয়েছ? তখন নবীগণ জওয়াব দিবেন, হ্যাঁ! দিয়েছিলাম। ফলে তাঁদের কাছে সাক্ষী চাওয়া হবে। তাঁরা হযরত মুহাম্মাদ সা. এবং তাঁর উম্মতদের সাক্ষী হিসেবে পেশ করবেন। অতএব হযরত মুহাম্মাদ সা. এবং তাঁর উম্মতদের প্রশ্ন করা হবে, তোমরা এদের ব্যাপারে কি বল? জওয়াবে বলা হবে, “হ্যাঁ! আমরা নবী রাসুলদের দাওয়াতের সত্যায়ন করছি। উম্মতে মুহাম্মদ সা.  থেকে জানতে চাওয়া হবে, তোমরা তাদের ব্যাপারে কীভাবে জানলে? তারা জওয়াব দিবে, আমাদের নবী সা. আমাদের কাছে তাশরিফ এনেছেন এবং তিনি আমাদের জানিয়েছেন, প্রত্যেক নবীই তাঁদের উম্মতের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছেন। -“যাতে করে তোমরা মানুষের সাক্ষী হতে পারÑ” আয়াত দ্বারাই বুঝা যায়, হযরত নূহ আ. ব্যতীত অন্য উম্মতের বিরুদ্ধেও উম্মতে মুহাম্মাদি সাক্ষ্য দিবে।
এখানে প্রশ্ন জাগতে পারে, উম্মতে মুহাম্মাদী তো নবীদের থেকে বেশি সত্যবাদী হতে পারে না। তাহলে উম্মতে মুহাম্মাদীকে কীভাবে নবীদের সত্যায়িত করার জন্য সাক্ষী হিসাবে গ্রহণ করা হবে?
এর জওয়াব হল, অবশ্যই নবীগণ উম্মতে মুহাম্মাদী থেকে অনেক অনেক উঁচু দরজার, সত্যবাদী, নির্ভরযোগ্য, কিন্তু এখানে একটি মামলার প্রয়োজনে উম্মতে মোহাম্মাদীকে সাক্ষী হিসাবে নেয়া হবে। যদিও তারা আম্বিয়ায়ে কেরাম থেকে নিচু দরজার। আর তাদের এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ঘোষণা রাসুলুল্লাহ সা. দিবেন। যেমন কোন তহসিলদার যে নিজেই এজলাসের মালিক, এ তহসিলদারই যদি কোন মামলায় বেয়াদব চাপরাশির প্রতিপক্ষ হয়, তাহলে আদালতের বিচারক তহসিলদার থেকে সাক্ষী চাইবেন। যদিও সে সম্মানের দিক থেকে তহসিলদার থেকে নিম্নস্তরের হয়ে থাকে। সাক্ষ্যের আলোকেই বিচারক সংশ্লিষ্ট মামলার ফয়সালা করেন।
এখানে আরেকটি প্রশ্নের জওয়াব হয়ে যায়। নবীদের নবুওয়াত রেসালাত এবং তাবলিগ অস্বীকারকারীরা বলতে পারেন, যখন আমরা নবীদেরই সত্য বলে মানি না, তখন উম্মতে মুহাম্মাদীকে কি করে মানতে পারি? জওয়াব হল, এরূপ বলার অধিকারই তাদের থাকবে না। কেননা, বাদী যখন সাক্ষী পেশ করবে তখন যদি বিবাদী তাদের মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাহলে সাক্ষী বাতিল হয়ে যায়। সাক্ষী পেশ হওয়ার পর বিবাদীর পক্ষ থেকে এতটুকু বলাই যথেষ্ট হবে না, আমি তাদের সত্যবাদী বলে মানি না। আর এও অনস্বীকার্য সত্য, বিবাদী বাদী পক্ষের সাক্ষীকে সত্য বলে মানুক বা না মানুক সত্যবাদিতাই রায় ঘোষণার জন্য যথেষ্ট।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!