পাড়াগ্রাম। চারপাশে পাখ-পাখালি আর সবুজে ঘেরা গ্রাম। গ্রামে ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলিম সবাই সুখে-শান্তিতে বসবাস করে। কামার-কুমার, ব্যাবসায়ী, চাকুরে সকলের সম্মিলিত বসবাস। সেই গ্রামে বাস করত এক তরুণ যুবক। নাম তার রইছউদ্দিন। করত রাখালের কাজ। অত্র গ্রামের মধ্যে গরীব কেউ থাকলে রইছ ওরফে রছু পাগলার নাম সকলের উপরে। রছু পাগলার বয়স সাত-আট বছর। প্রাগৈতিহাসিক কালে ওদের বংশের অনেকেই পাগল হওইয়ার রোগে মারা গিয়েছিলো বলে ওর নামের পরে, পাগল শব্দটা জায়গা করে নিয়েছে।
রছু পাগলা গ্রামের চেয়ারম্যানের বাড়িতে কাজ করে। গরুর দেখ-ভাল করা বাজার থেকে মশলা-আনাজপাতি আনা-নেওয়া এমনই অনেক কাজ করায় রছুরে দিয়ে। বিনিময়ে অর্ধপেট ভাত আর বছরে একবার নতুন জামা-কাপড়!
একবার গ্রামে প্রচুর অভাব-অনটন দেখা গেল। রছু পাগলার কপালে জুটতে লাগলো এঁটো করা ভাত। রছু পাগলা তবুও বেঁচে থাকার জন্য চেয়ারম্যানের বাড়িতেই পড়ে রইল। চেয়ারম্যান এরপর আরো অত্যাচার শুরু করলো রছু পাগলার উপর। কারণ, গ্রাম ছেড়ে পালালেই চেয়ারম্যান রছু পাগলার কিঞ্চিৎকর ভিটে-মাটির সম্পত্তিয়াদি আত্মসাৎ করতে পারবে। রছু পাগলা চেয়ারম্যানের মনোবাসনা সহজেই উপলব্ধি করতে পারলো। মনে মনে সে তা অল্প সম্পত্তি দিয়ে চেয়ারম্যানকে শাস্তি দেয়ার ফন্দি আঁটলো।
ভরদুপুরে রছু পাগলা কাজ শেষ করে চেয়ারম্যানের বাড়ি ফিরে যায়। তার ভাগের সম্পত্তির হিসেব জানতে চায়।চেয়ারম্যান বলতে চায়না। একপর্যায়ে রছু পাগলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে তর্ক করতে করতে বলল,
সে তার সম্পত্তি বিক্রি করতে চায়।
চেয়ারম্যান সানন্দ্যে বলল, ‘আমি তোমার জমি ক্রয় করতে চাই’
“কিছুতেই আপনি তা পারেন না।”- রছু পাগলা বলল।
“নিশ্চয়ই পারি। এসো, বাজি ধর । আমার কি টাকা-কড়ি কম আছে। দশ হাজার মুদ্রা বাজিতে আমি পুরো জমি ক্রয় করতে পারি।”
পরদিন সকালে রছু পাগলা জমি বিক্রির টাকা-কড়ি নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান তখন কণ্ঠস্বর উঁচু করে বলে-
“কী হে! জমি তো কিনলাম এখন দশ হাজার
মুদ্রা দাও আর দলিলে দস্তখত করে যাও।”
সে বলল, “আমি বলেছিলাম, আমার সম্পত্তি বিক্রি করবো, আপনি জমি কিনতে চেয়েছেন
কিন্তু জমির মাটিও যে কিনবেন এমন কথা তো আমি বলিনি। জমির মাটি খনন করে সব মাটি তুলে আনুন তারপর আমি আপনাকে আমার সম্পত্তি দিয়ে দেব।”
রছু পাগলা দশ হাজার মুদ্রাও পেল এবং গাঁয়ের মাতাব্বরদের বিচারে তার অকাট্য যুক্তিবলে জমিটাও পেয়ে গেল !
প্রাচীন বচনঃ অন্যের লাইগা কুয়া খুদলে সেই কুয়ায় নিজেরই পরতে হয়।
আমার মতেঃ অন্যকে বিপদে ফেলার আগে একবার ভেবে দেখবেন। অন্তত, ভবিষ্যৎ বিপদগ্রস্ত মানুষের স্থানে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেখবেন।
(সমাপ্ত)
গল্পটি পাঠিয়েছেন— মোঃ জাহিদুল ইসলাম
সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ থেকে।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।