বার বছর বয়সী এক বালকের ঘটনা
এক বুজুর্গ বর্ণনা করেন, এক বছর হজ্জের মৌসুমে বেশ গরম পড়েছিল। হেজাজের পথ অতিক্রমের সময় আমি কাফেলা হতে পৃথক হয়ে এক স্থানে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
হঠাত ঘুম থেকে জেগে দেখতে পেলাম, কোথা থেকে এক বালক এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বালকের রূপ লাবণ্য ছিল পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। আমি তাকে সালাম
দিলাম। বলক সালামের জবাব দিয়ে সাথে সাথে বলে উঠল, ইব্রাহীম! আমি তোমার অবস্থা দেখে অবাক না হয়ে পারছি না।
আমি অবাক হয়ে বললাম, সুবহানাল্লাহ! তুমি কেমন ক্রে আমার নাম জানলে? বালক বলল, ইব্রাহীম! যেই দিন আমি তোমাকে চিনেছি এরপর আর কখনো
তোমাকে ভূলিনি। তোমার স্বাক্ষাত পাওয়ার পর আর কখনো তোমা হতে পৃথক হয়নি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, বেটা! তুমি এই প্রচন্ড গরমের ভেতর এই বিরান
ভূমিতে কোথা থেকে এলে? সে সরাসরি আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, আমি আল্লাহকে ব্যতীত অপর কারো সাথে দোস্তী করিনি।
যথা সম্ভব সকল থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার খানা-পিনার আয়োজন হয় কোথা থেকে? সে বললো, আমার
দোস্তই তার আয়োজন করেন। আমি বললাম, বেটা! আমি প্রচন্ড রোদের কারণে তোমার জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছি। জবাবে সে কয়েকটি আয়াত পাঠ
করল। যার অর্থ হল –
“হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমাকে সফরে নানান কষ্ট হতে সতর্ক করেছ, অথচ আমি আমার দোস্তের সাথে স্বাক্ষাতের উদ্দেশ্যে সফর করছি। আল্লাহর বন্ধুকে ভয় দেখানো
মানুষের পক্ষে শোভন নয়। আল্লাহর জিকির আমার ক্ষুধা নিবারণ করে; তার শুকর আমার পিপাসা মিটায়। আমি দূর্বল হলে কি হবে, আল্লাহর মহব্বত আমাকে হেজাজ
থেকে খোরাসানে টেনে নিয়ে যাবে। এর পরও কি তুমি আমাকে ছোট্ট বলে অবহেলা করবে? ঐ বুজুর্গ বলেন, অতঃপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বেটা! তুমি
আল্লাহর নামে শপথ করে বল, তোমার বয়স কত? সে বলল, আমি শপথ করে বলছি, আমার বয়স ১২। কিন্তু বয়সের তুলনায় আল্লাহ পাক আমাকে অনেক
ফজিলত দান করেছেন।
অতঃপর সে নীচের দিকে মাথা ঝুকিয়ে রাখার পর আমাকে বলল, হে ইবরাহীম! ঐ ব্যক্তিই পৃথক হয়ে গিয়েছে যাকে তার বন্ধু ত্যাগ করেছে। আর ঐ ব্যক্তিই
মিলিত হয়েছে যে, আল্লাহর ফরমাররদারী করেছে, কিন্তু তুমি এই উভয় কাফেলা হতে পৃথক হয়ে গেছ। আমি বললাম, তুমি সত্য বলেছ, আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া
কর আমার জন্য যেন, আমি আমার কাফেলার সাথীদের সাথে গিয়ে মিলিত হতে পারি। বালক আকাশের দিকে মুখ তুলি ঠোট নেড়ে কি যেন বলল। সাথে সাথে
আমার চোখে প্রচণ্ড ঘুম নেমে এল। জাগ্রত হওয়ার পর দেখলাম, আমি আমার কাফেলার উঠের উপর বসে ঝিমাচ্ছি। উটের চালক আমাকে সর্তক করে বলছে,
ইবরাহীম! খবরদার! ভাল করে বস। অন্যথায় সওয়ারী হতে পড়ে যাবে। আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলাম, সেই ছেটেটি আশেপাশে কোথাও নাই।
ইবরাহীম বলেন, যথা সময়ে আমাদের কাফেলা মক্কা শরীফ পৌঁছালো। একদিন হঠাত আমি দেখতে পেলাম, একটি বালক কাবার গিলাফ ধরে কাঁদছে। কিছুক্ষণ পরে সে
সিজদায় পড়ে গেল। এভাবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমি নিকটে গিয়ে তার গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম, ইতোমধ্যেই সে প্রাণ ত্যাগ করেছে। আমি তার
কাফন-দাফনের আয়োজনে বের হলাম। কিন্তু ফিরে এসে সেখানে বলকের লাশের চিহ্নমাত্র পেলাম না, খোজ নিয়ে জানতে পারলাম, আমি ব্যতীত অপর কেউ তার
লাশও দেখতে পায়নি। রাতে সেই বালককে স্বপ্নে দেখলাম। বালক এক বিরাট জামাতের আগে আগে চলছে। তার নূরানী চেহারা ও পরিধেয় বস্ত্রের সৌন্দর্য বর্ণনা করা
আমার সাধ্যাতীত। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে বলক তুমি কি আমার বন্ধু নও?
সে উত্তর দিল হ্যা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কি মৃত্যুবরণ করনি? সে বললো, আমি মৃত্যুবরণ করেছি।