
ঘটনাগুলো ঘটে ‘চেজ ভল্ট’ (Chase vault) নামে এক বিশেষ শবাগারে। এটি একটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সমাধিক্ষেত্র বা সিমেট্রিতে অবস্থিত। ব্রিজটাউন থেকে সাত মাইল দূরে অবস্থিত বিশাল এই ভল্ট বা কফিন রাখার জায়গা নির্মাণ করা হয়েছিল চেজ পরিবার ও তাদের বন্ধুদের জন্য। ১৮০৭ সালের জুলাই মাসে থমাসিনা গডডার্ড মারা গেলে তার দেহ একটি সাধারণ কাঠের কফিনে ঢুকিয়ে এই ভল্টে রেখে দেয়া হয়। এর কয়েক বছর পরেই মাত্র ২ বছর বয়স্ক মেরি অ্যান চেজকে এই ভল্টে সমাহিত করা হয় আরেকটি কফিনে। ১৮১২ সালের ৬ জুলাই মেরির বড় বোন ডকরাস চেজ মারা যায়, তাকেও ভল্টে ঢোকানো হয়। কেউ কেউ বলেন, বাবার সাথে ঝগড়া করে হতাশায় ডকরাস খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেন আর এতেই তার মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পরেই মেরি আর ডকরাসের বাবা থমাস চেজও মারা যান, যিনি ছিলেন বারবাডোজের সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি। যখন থমাসকে সমাহিত করার জন্য সেই বিশেষ ভল্ট খোলা হলো, শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আগত সবার মাথায় যেন বজ্রপাত হলো। এর আগে যে কফিনগুলো ভল্টের ভেতরে যে অবস্থানে রাখা হয়েছিল , সেগুলোর আর কোনটিই সেই অবস্থানে নেই! সবার ধারণা হলো, কোন ডাকাতদল ভল্টে মূল্যবান কিছু আছে ভেবে লুট করার উদ্দেশ্যে ঢুকেছিল আর খোঁজাখুঁজির সময় কফিনগুলো নাড়াচাড়া করেছিল।
সমস্যা হচ্ছে, ভল্টের ছিল একটিমাত্র প্রবেশদ্বার যেটির মুখে বিরাট এক পাথরের স্ল্যাব বসানো ছিল। আর এটি এতোটাই ভারী ছিল যে প্রতিবার এটি সরানোর জন্য প্রচুর লোকজনের দরকার হতো। সেই সময় এটাও ধারণা করা হয়েছিল যে, কোনভাবে হয়তো কবর খননকারীরদের কারণে কফিনগুলো নড়ে গিয়েছিল। যাই হোক, এরপর সরে যাওয়া কফিনগুলোকে আবার জায়গামতো রেখে দেয়া হলো। আর নতুন যুক্ত হলো থমাসের কফিন। এরপর ভল্টের মুখ আবার আগের মতো বন্ধ করে দেয়া হলো। ১৮১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ভল্ট এবার খোলা হলো ১১ বছর বয়স্ক চার্লস ব্রিউস্টার এমিসকে সমাহিত করার জন্য। এবং যথারীতি একই কান্ড। প্রতিটি কফিনকে যেন জায়গা থেকে তুলে দূরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি থমাসকে বহনকারী কফিনের ওজন ছিল ২৪০ পাউন্ড, সেটাকেও তার অবস্থান থেকে পাওয়া গেল অনেক দূরে! হতভম্ব অবস্থায় সবাই কফিনগুলোকে আবার যথাস্থানে বসিয়ে দিল। ৫২ দিন পর, এবার স্যামুয়েল ব্রিউস্টারকে সমাহিত করার জন্য ভল্ট খোলা হলো। এবার সেই জায়গাটি লোকে লোকারণ্য। সবার সামনে পাথরের স্ল্যাব খুলে ভল্টের একমাত্র প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করা হলো। যথারীতি কফিনগুলো আবারো তাদের নিজেদের জায়গায় নয়, অন্য জায়গায় পাওয়া গেল। এছাড়া ভল্টের প্রথম সদস্যা মিসেস থমাসিনা গডডার্ডের কাঠের কফিনটি পাওয়া গেল ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায়। এটাকে তার দিয়ে বেঁধে রাখা হলো। বেশ কয়েকজন তদন্তকারী যাদের মাঝে রেভারেন্ড থমাস ওডারসনও ছিলেন, ভল্টের ভেতর ও কফিনগুলো পরীক্ষা করে দেখলেন। অস্বাভাবিক কিছু না পাওয়াতে ভল্ট পরিষ্কার করে আবার বন্ধ করে দেয়া হয়।
১৮১৯ সালের ১৭ জুলাই। আরো একবার ভল্ট খোলা হলো ও যথারীতি কফিনগুলোকে এলোমেলো অবস্থায় পাওয়া গেল। শুধুমাত্র মিসেস থমাসিনার ভগ্নপ্রায় কফিনটি নিজের জায়গাতে ছিল। দ্বীপের গভর্নর লর্ড কম্বারমেয়ারের নির্দেশে তদনকারীরা তদন্ত করলো। কফিনগুলোকে আবার নিজেদের জায়গায় আনা হলো আর ভল্টের মেঝেতে বালি ছড়িয়ে দেয়া হলো। কে কফিনগুলো নাড়াচ্ছে তার পায়ের ছাপ নেয়ার জন্য। ১৮২০ সালের ১৮ এপ্রিল। এবার সরকারি নির্দেশে ভল্ট খোলা হলো। এবার দেখা গেলো, কফিনগুলো জায়গা থেকে শুধু নড়েই যায় নি, বেশ কয়েকটি কফিন পুরো উলটে গিয়েছে! আর মেঝেতে যে বালি ফেলা হয়েছিল, তাতে কারো পায়ের ছাপ নেই! এরপর কফিনগুলো দ্রুত সরিয়ে অন্যত্র সমাধিস্থ করা হলো। গত ২০০ বছর ধরে এই ভল্ট খালি পড়ে আছে। কেউ কেউ মনে করেন, ইতিহাসের এই ঘটনাগুলো গুজব। কিন্তু ইতিহাস বলছে, সেই সময়ে বারবাডোজে চেজ পরিবারের অস্তিত্ব ছিল। আর সবচেয়ে বড় প্রমাণ, এই ভয়াবহ ভল্ট এখনো দাঁড়িয়ে আছে অনেক অজানা প্রশ্ন নিয়ে।