বারন উমার রোলফ ভন এহ্রেনফেলস
বারন উমার রোলফ ভন এহ্রেনফেলস (২৮ এপ্রিল ১৯০১ – ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০):
বারন উমার রোলফ এহ্রেনফেলস, বা তার পরবর্তী নাম অনুযায়ী উমার রোলফ এহ্রেনফেলস, ১৯০১ সালের ২৮ এপ্রিল প্রাগ, বোহেমিয়া, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ নাম ছিল রোলফ ওয়ার্নার লিওপোল্ড ভন এহ্রেনফেলস। তার পিতা ছিলেন রোমান ক্যাথলিক বারন ক্রিশ্চিয়ান ভন এহ্রেনফেলস (১৮৫৯-১৯৩২), যিনি প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান অংশে দর্শনের অধ্যাপক ছিলেন এবং গেশটাল্ট তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। তার মা ছিলেন এমা ভন এহ্রেনফেলস (১৮৬২-১৯৪৬; আর্নে আন্দ্রে), যিনি ব্রাটিস্লাভার স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। তার পরিবারের মধ্যে জার্মান এবং হাঙ্গেরিয়ান ভাষা প্রচলিত ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তার মা রেড ক্রসের জন্য কাজ করেছিলেন এবং হাঙ্গেরিয়ান আহত সৈন্যদের সেবা করেছিলেন। তার পিতা ক্রিশ্চিয়ান ফ্রাইহের ভন এহ্রেনফেলসের একমাত্র পুত্র হিসেবে তিনি বারনের উপাধি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন, কিন্তু ১৯২০ সালে নতুন অস্ট্রিয়ান আইনের কারণে তাকে সেই উপাধি ত্যাগ করতে হয়। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তিনি নাম হিসেবে উমার গ্রহণ করেন এবং রোলফ নামটি রেখে অন্য নামগুলো বাদ দেন। ১৯৩২-৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক নৃতত্ত্ব (Völkerkunde) এর ছাত্র ছিলেন এবং সেখান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৮ সালের ১৩ মার্চ নাৎসিদের দ্বারা অস্ট্রিয়া দখলের (আনশ্লুস) সময়, তিনি ভারতে অভিবাসন করেন। সেখানে তিনি ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বসবাস করেন এবং ১৯৪৯ সাল থেকে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক নৃতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। উমার রোলফ এহ্রেনফেলস ৭৮ বছর বয়সে ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি নেকারগেমুন্ড, জার্মানিতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হেইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন এবং ১৯৬১-৭১ সাল পর্যন্ত সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
ইসলাম গ্রহণ এবং তার পরবর্তী সময়:
বারন উমার রোলফ ভন এহ্রেনফেলসের ইসলাম গ্রহণ তার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসে। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি তার নাম পরিবর্তন করে “উমার” রাখেন এবং বাকি উপাধিগুলি ত্যাগ করেন। তিনি কবে এবং কীভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন তা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও ধারণা করা হয়, তার জীবনের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান এবং ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের ফলে তিনি এই ধর্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর, তিনি তার জীবনধারায় ইসলামিক মূল্যবোধ এবং আদর্শকে ধারণ করতে শুরু করেন।
ইসলাম গ্রহণের পর এবং নাৎসিদের দ্বারা অস্ট্রিয়া দখলের সময় (আনশ্লুস) ১৯৩৮ সালে, তিনি ভারতে চলে আসেন। ভারতে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করেন এবং মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক নৃতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। তার জীবনধারায় ইসলামের প্রভাব স্পষ্ট ছিল, এবং তিনি ইসলামের প্রসারে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতিতে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তার একাডেমিক ও গবেষণামূলক কাজের ক্ষেত্রেও ইসলামী নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রভাব পড়ে। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সমাজ, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং এসব বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি আরও সমাজসেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন এবং মুসলিম সমাজে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। ভারতে থাকার সময় তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার ইসলাম গ্রহণ কেবল তার ব্যক্তিগত জীবনকেই প্রভাবিত করেনি, বরং তার কর্মজীবন এবং গবেষণায়ও এর প্রতিফলন ছিল।
ইসলামিক জীবনে তার অবদান:
উমার রোলফ ভন এহ্রেনফেলসের ইসলামিক জীবনে অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে তার ইসলাম গ্রহণের পর তিনি মুসলিম সমাজে বিভিন্ন দিক থেকে অবদান রেখেছিলেন। উমার রোলফ ভন এহ্রেনফেলস তার একাডেমিক ও গবেষণা জীবনে ইসলামের ওপর ব্যাপক কাজ করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সমাজ, সংস্কৃতি, ও ধর্মীয় ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক নৃতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে তিনি মুসলিম সমাজের কাঠামো, সামাজিক প্রথা, এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেছেন। ইসলামের ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ধারা নিয়ে তার গবেষণা এই বিষয়ে জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। ভারতে থাকার সময় তিনি মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি মুসলিম যুবকদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নতির জন্য সচেতন করে তুলেছিলেন এবং ইসলামী মূল্যবোধের ওপর জোর দিয়েছিলেন। ইসলামের সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবতার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তার কাজের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। উমার রোলফ ভন এহ্রেনফেলস ইসলামের শান্তির বার্তা প্রচারের জন্য কাজ করেছেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার জীবনধারায় ইসলামী শিক্ষা ও নৈতিকতা ছিল কেন্দ্রীয় স্থানীয়, যা তিনি তার আশপাশের মানুষদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে গভীর গবেষণা চালিয়েছিলেন। এর ফলে মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং ঐতিহ্য আরও সুসংগঠিত হয়েছিল। ইসলামী সংস্কৃতি, জীবনধারা, এবং ঐতিহ্যকে সম্মান জানানোর গুরুত্ব তিনি তার কাজ ও শিক্ষার মাধ্যমে প্রচার করেছেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলেও ইসলামের শান্তি ও মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ বা ভুল ধারণা দূর করার লক্ষ্যে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন।উমার রোলফ ভন এহ্রেনফেলসের জীবন ও কাজ তার ইসলামিক মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করেছে এবং তিনি তার সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম চিন্তাবিদ ও সমাজসেবক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
মৃত্যু:
উমার রোলফ ভন এহ্রেনফেলস ১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি নেকারগেমুন্ড, জার্মানিতে মৃত্যুবরণ করেন, তাই বর্তমানে তার জীবনের সরাসরি অবদান আর নেই। তবে তার কাজ এবং গবেষণা, বিশেষ করে মুসলিম সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মের ওপর তার গবেষণা, এখনো শিক্ষার্থীদের এবং গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।