বানরের ফল খাওয়া

স্বাস্থ্য রক্ষায় ফলমূলের কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত ফল খেলে যেমন স্বাস্থ্য ভাল থাকে তেমনি নানা ধরনের রোগ থেকে বাঁচা যায়। ফলের আরেক নাম ‘ব্রেন ফুয়েল’। মস্তিষ্ককে সজীব ও কর্মক্ষম রাখতে ফলের জুড়ি নেই। ফলের উপাদানের মধ্যে অন্যতম ন্যাচারাল সুগার আমাদের স্মরণ শক্তি ও চিন্তা করার ক্ষমতা বেশ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলের আরেকটি একটি বিশেষ উপাদান হচ্ছে, প্রাকৃতিক আঁশ। দিনে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ফল খেলেই শরীর তার প্রয়োজনীয় আঁশ পেতে পারে। এই আঁশের সাহায্যে মেদ, হার্টের অসুখ, রক্তের চিনি ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। শরীরের কোষকলার সঠিক বৃদ্ধি ও গঠনেও ফল ভূমিকা রাখে।

এছাড়া ফলের অন্যতম উপাদান ফোলেট রক্তের লোহিত কণিকা গঠন করে থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, মৌসুমী ফল সবচেয়ে উপকারী। কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফল না পাকিয়ে তার বদলে মৌসুমী ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান থাকে এবং খেতেও সুস্বাদু হয়। অনেকেই মনে করেন, যখন-তখন ফল খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়। ফল খাওয়া উচিত আহারের আগে। এতে করে পাকস্থলী জীবাণুমুক্ত হয় এবং শরীরে শক্তি যোগায়। এছাড়া খাদ্যদ্রব্যকে ভালভাবে পরিপাকের উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে আহারের পূর্বে ফলের গুরুত্ব অত্যাধিক।

সবফলের পুষ্টিগুণ যেমন সমান নয়, তেমনি সব ফল খাওয়ার পদ্ধতি এক রকম নয়। কোন ফলের উপরের অংশ খেতে হয়, আবার কোন ফলের ভেতরের অংশ খেতে হয়। কেউ যদি সবফল একই পদ্ধতিতে খেতে চায় তাহলে কি ধরনের বিপত্তি দেখা দেবে সে সম্পর্কেই একটি রুপকথা প্রচার করেছি রংধনু আসরে।

এক বনে বাস করত এক বানর। সে নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করতো। বনের অন্যান্য পশুদের সামনে সে নিজেকে সবজান্তা হিসেবে জাহির করতো। একবার বানরটি এলো এক তরমুজ ক্ষেতে। ক্ষেতের পাশেই একটি ষাঁড় ঘাস খাচ্ছিলো। বানরকে দেখে ষাঁড়টি বললো, তুমি হয়তো জানো না যে, তরমুজ কিভাবে খেতে হয়। এসো, আমি তোমাকে শিখিয়ে দিই। ষাঁড়ের কথা শুনে বানর বললো, আমাকে শেখানোর প্রয়োজন নেই। আমি ভাল করেই জানি-কীভাবে তরমুজ খেতে হয়।

এ কথা বলেই বানর তরমুজের খোসার ওপর কামড় বসাল। এরপর তরমুজটা মাটিতে ফেলে দিয়ে বলল, দূর! এটা কি কোন ফল হলো নাকী! কী বাজে স্বাদ রে বাবা! বানরের দূরবস্থা দেখে ষাঁড় তাকে বলল, খোসা নয়,তরমুজের ভেতরটাই খেতে হয়। এ কথা শুনে বানর বলল, ঠিক কথা। ফলের খোসা নয়, ভেতরইটা খেতে হয়। এখন থেকে আমিও সেটা জানি।

এরপর বানর গেল এক খরমুজ ক্ষেতের পাশে। একটা খরমুজ ভেঙ্গে সে ভেতর থেকে কিছু অংশ মুখে পুরে নিল। পাশ থেকে এক গাধা বলল, খরমুজের ভেতরটা নয়, আঁটিটাই খেতে হয়। একথা শুনে বানর খরমুজের সবটুকু ওয়াক-থু করে ফেলে দিল। তারপর নিজে নিজে বলল, হ্যা!, এবার বুঝেছি। আঁটিটাই খেতে হয়, ভেতরটা নয়।

এবার বানর গেল এক আখরোট গাছের কাছে। বানরকে একটা কাঁচা আখরোট হাতে তুলে নিতে দেখে ছোট্ট পাখি চিৎকার করে বলল, সাবধানে খেয়ো কিন্তু। বানর বলল, নিজের চরকায় তেল দাও । আমি জানি ফলের আঁটিটিই খেতে হয়। এ কথা বলে বানর কাঁচা আখরোটের আঁটির ওপর সজোরে কামড় বসাল। ব্যাস,আর যায় কোথায়! ভীষণ তিতায় বানরের মুখ একেবারে কাচুমাচু হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি নদীতে গিয়ে মুখ ধুয়ে এল। এসব দেখে পাখিটি বলল, আসলে আঁটি নয়, আঁটির ভেতরে যে দানা, সেটিই খেতে হয়। বানর এবার বলল, ঠিক ঠিক, তুমি একেবারে ঠিক কথাই বলেছো।

বানর এবার এল এক নাশপাতি গাছের কাছে। একটা নাশপাতি কুড়িয়ে নিয়ে ভাঙল। তারপর দানাটা বের করে মুখে পুরে নিল। কিন্তু হায়! এবারও তার মুখটা ভরে গেল বিস্বাদে। সবকিছু সে ওয়াক-থু করে ফেলে দিল। রাগে গজরাতে গজরাতে সে নাশপাতিটা গর্তে ছুঁড়ে মারল। তারপর চিৎকার করে বলতে লাগল, ফলটল মোটেই ভাল কিছু নয়। তরমুজ, খরমুজ, আখরোট, নাশপাতি-এগুলোর কোনটিরই স্বাদ নেই। সবগুলোই বাজে, তেতো। আমি আর জীবনে ফল খাব না।

বানর আসলে কোন্ ফল কিভাবে খেতে হয় তা যেমন জানতো না-তেমনি এ ব্যাপারে জানার কোন আগ্রহও তার ছিল না। ফলে যা হবার তাই হল। অর্থাৎ ফলের স্বাদ থেকে সে পুরোপুরি বঞ্চিত হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়তে পারেন...

একটি বোকা ছেলের করুণ পরিণতি

আজকে যে ঘটনাটি শেয়ার করতে যাচ্ছি তা আমার মার মুখে শোনা ঘটনা।। তখন আমার মা…

মধুমক্ষী পালন প্রকল্প

ভুলু আঙুল উঁচিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল, চপ্পল, সামনের ওই ভদ্রলোককে দ্যাখ একবার। এমন দেখেছিস কোনওদিন?…

শকুন ও শেয়াল

এক শকুন আর এক শেয়ালের মাঝে বন্ধুত্ব হয়েছিল। একদিন শেয়াল বন্ধু শকুনকে বলল: ‘দোস্ত! তুমি…