
ভেনিস!!!! অবাক চোখে চারিদিকে তাকাল তিতির। যতদূর দেখা যায় শুধু জল আর জল । কাল সারারাত ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়েছে তাই আজ সকালে গ্রামের এই হাল। ঘুম থেকে উঠে জানলা খুলে বাইরে তাকাতেই অবাক তিতির। ”একি, এতো একদম ইতালির ভেনিসের মত ঠিক যেমনটা সে বইয়ে পড়েছে ! চারিদিকে জল আর মাঝখানে মাঝখানে শুধু পাকা বাড়ি গুলো দেখা যাচ্ছে—-একদম ছবির মতন। এমনকি তাদের বাড়ির সামনে যে শীতলা মন্দিরটা আছে সেটাও তো প্রায় ডুবে রয়েছে। বন্যা ? তবে কি বন্যা হল গ্রামে! ভেবে খুব আনন্দ পেল তিতির। ছুট্টে ডাইনিং এ গেল সে । দেখল বাবা চাদরমুড়ি দিয়ে বসে চা খাচ্ছেন আর মা একটা বাটিতে মুসুরির ডাল ঢালছেন। এমনকি মায়ের গায়েও শাড়ির আঁচলটা ভালো করে জড়ান । চারিদিকের পরিবেশটা এমন যেন ভরা আষাঢ়ে চুপিচুপি শীত এসে পড়েছে ।
কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে তিতির বলে উঠল—মা, বন্যা হয়েছে?’ মেয়ের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস দেখে মা অবাক হয়ে উত্তর দিলেন– ‘ হুমম। কিন্তু তোর তো মনে হচ্ছে খুব আনন্দ হয়েছে ! জানিস বন্যা হলে কত ক্ষয়ক্ষতি হয় ? ‘ মায়ের কথায় চুপ হয়ে গেল তিতির। মনে মনে ভাবল সত্যিই তো , মা তো ভুল কিছু বলেননি। এইতো সেবার সকালবেলা তিতিরদের বাড়ির সামনের পুকুরের জলটা বারবার ওঠানামা করছিল— সমুদ্রের ঢেউ এলে যেমন দেখতে লাগে অনেকটা ঠিক সেইরকম। হাঁসগুলোও সব প্যাঁক প্যাঁক করে ডাকছিল । গ্রামের সবাই ভিড় জমিয়েছিল সেই দৃশ্য দেখবার জন্য। এমনকি কেউ কেউ বিরল ঘটনা ভেবে ক্যামেরাবন্দীও করছিল । তিতিরও খুব আনন্দ পেয়েছিল। কিন্তু পরে টিভিতে খবর দেখে জানতে পারল যে ওটা ‘সুনামি’আর এর জন্য বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে। সবটা জেনে খুব কষ্ট হয়েছিল তার । মেয়েকে এতক্ষণ চুপ থাকতে দেখে মা অবাক হলেন ।
বললেন— ‘কি রে একেবারে চুপ হয়ে গেলি যে ! যা দাঁত মেজে নে। দুধ গরম করছি।’ সক্কাল সক্কাল দুধ!! ম্যাগো নাম শুনলেই গা গুলিয়ে ওঠে । চোখেমুখে জল দেবার জন্য ছাতা নিয়ে কলতলায় যায় তিতির । ওরে বাবা কলতলাতে তো দুটো কেঁচো সার্কাস দেখাচ্ছে! কেঁচোকে খুব ভয় পায় সে । বৃষ্টি হলেই এইসব প্রাণীগুলো কোথা থেকে যে উদয় হয় , একটা দুটো জোঁকও তো বর্ষাকালে মাঝেমধ্যে ঢুকে পড়ে ওদের বাড়ির বারান্দায় । বাবা নুন ছড়িয়ে তাড়ায় সেগুলোকে । ভয়ে ভয়ে মুখ ধুয়ে, দাঁত মেজে বাবার পাশের চেয়ারে এসে বসে তিতির। ইতিমধ্যেই মা একগ্লাস দুধ নিয়ে হাজির হয়েছেন। ভয়ানক বিরক্তি মুখ করে দুধের গ্লাসে চুমুক দিতেই এত্তটা সর জিভে ঠেকল –‘ ছিঃ’ ।
মেয়ের ‘ ছিঃ’ শুনে বাবা অবাক হয়ে তাকান মেয়ের দিকে। থতমত হয়ে যায় তিতির, জানে বাবা জানলে খুব বকুনি দেবেন । চুপিচুপি সরটা টেবিলের নিচের দিকে চালান করতে গিয়ে ধরা পড়ল বাবার কাছে। বাবা ধমক দিলেন— ‘ নতুন টেবিলটা এইভাবে সর লাগিয়ে নষ্ট করছিস তুই ?’ বাবা অনেক শখ করে গতমাসেই সানমাইকা লাগানো এই টেবিলটা কিনেছেন । মেয়েকে তাতে সর লাগাতে দেখে খুব রেগে গেলেন। বাবার চোখমুখে রাগ দেখে কাঁদকাঁদ হয়ে গেল ছোট্ট তিতির। মা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বকুনি দিলেন, ‘ এত এত পাচ্ছিস তো তাই নষ্ট করছিস। যদি খেতে না পেতিস তখন বুঝতিস ।’ মা বাবার ধমক খেয়ে চুপচাপ এক নিঃশ্বাসে বাকি দুধটুকু সাবার করে দেয় সে। দুধ খাওয়া শেষ করে পড়ার জন্য ঘরে যায় তিতির। ঘরটা বেশ অন্ধকার ।’ আকাশ মেঘলা বলে হয়ত ‘ মনে মনে ভাবে সে । টক করে লাইটের সুইচটা দেয় কিন্তু একি লোডশেডিং তো । এমনিতেই একটু ঝড় দিলেই গ্রামে কারেন্ট থাকে না তারপর কাল তো ঝড় বৃষ্টি দুটোই হয়েছে, কতদিন কারেন্ট থাকবে না কে জানে! বিছানায় উঠে জানালা দিয়ে ছোট্ট মুখটা বের করে দেয় । তখনও ঝিরঝির করে বৃষ্টি পরছে। রাস্তায় একহাঁটু জল দাঁড়িয়ে । কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে আবার কেউ কেউ পেকে মাথায় দিয়ে জল দেখতে বেড়িয়েছে ।’ আচ্ছা রচনা বইয়ে তো পড়েছি বন্যা হলে, ঝড় হলে অনেক কাঁচা বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে যায়—তাহলে তো গ্রামেরও অনেকের বাড়ি ভেঙ্গে গেছে ! আহা রে!’ মনে মনে ভেবে খুব কষ্ট পায় তিতির। ‘দিদিভাই যাবি নাকি জল দেখতে?’ চমকে ওঠে তিতির।
তাকিয়ে দেখে পাশের বাড়ির ছোটদাদু পেকে মাথায় দিয়ে রাস্তা থেকে তাকে ডাকছেন । ‘ দাড়াও দাদু মাকে একবার জিজ্ঞেস করি’। একছুটে রান্নাঘরে গিয়ে হাজির হয় তিতির । মা তখন গরম তেলে বেগুন ছাড়ছেন । দুপুরে আজকের মেনু বোধহয় খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা । কিন্তু সবটা শুনে মা বাধ সাধলেন। বললেন—- ‘ না, এখন পড়তে বস। দুপুরে স্নানের আগে বাবার সাথে যাবি ‘। ‘কিন্তু মা– ‘ তিতির শেষ করার আগেই মা ধমক দিলেন—– ‘ কোন কিন্তু না। পড়তে বস। একা আজ একদম বাইরে বেড়বি না। তোর বাবার মুখে শুনলাম জলের প্রচুর স্রোত । ঘরে যা । ‘ তিতির বুঝল যে অর্থাৎ ইতিমধ্যেই বাবা ঘুম থেকে উঠেই জল দেখে এসেছেন । অভিমানে মুখ গোমড়া হয়ে গেল তার। মা যে কি ভাবেন না, ও কি আর ছোট আছে যে জলে ভেসে যাবে! সে এখন ক্লাস সিক্সে পড়ে। ছোট তো তোতন। তার কাকাইয়ের ছেলে। তিতির তো তোতনের দিদি । দিদিরা কি কখনও ছোট হয়! অথচ মা সবসময় তাকে ছোট ভাবেন। তিতির বেশ কয়েকবার এর প্রতিবাদ করাতে মা কখনও হো হো করে হেসেছেন। কখনও বা বলেছেন, ‘ তুই যখন ইসকুলের দিদিমনি হয়ে যাবি তখনও আমার কাছে তুই আমার ছোট্ট মেয়েটিই থাকবি।’ ছোট্ট তিতির বুঝতে পারেনা মায়ের এসব কথার মানে। বড় তো সবার কাছে বড়ই হয়, বড় কি আবার কারোর কাছে ছোট হয়! ‘না গো ছোটদাদু আমি পরে যাবো। এখন পড়তে বসব’
ঘরে এসে ছোটদাদুকে জানিয়ে দেয় । ‘আচ্ছা দিদিভাই পড়, আমি আসছি’ হাসিমুখে উত্তর দিয়ে চলে যায় ছোটদাদু। ইস ছোটদাদুর সাথে যেতে পারলে কত ভাল হত। বেলা হতে হতে যদি জল কমে যায় ! এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চার্জারটা জ্বেলে পড়তে বসে সে । ‘কি গো শুনছ , আমাকে কিছু চাল আর আলু দাও দিকি’ বাবার গলার আওয়াজে পড়া থামায় তিতির। বাবা মায়ের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারে যে গ্রামে অনেকের বাড়ি ভেঙ্গে গেছে আর তাদের থাকবার জন্য প্রাইমারি স্কুলটা খুলে দেওয়া হয়েছে। গ্রামে যারা তিতিরদের মত মোটামুটি অবস্থাবান তারা সবাই যে যার বাড়ি থেকে বন্যা দুর্গতদের জন্য চাল , আলু আর খুদ দিচ্ছে। দুপুরবেলা বৃষ্টি একটু থামতে স্নানের আগে বাবার সাথে জল দেখতে বের হয় তিতির। তিতিরদের গ্রামটা খুব সুন্দর। চারিদিকে গাছপালা আর জমি দিয়ে ঘেরা। এখানে সারাবছর প্রচুর ধান আর আলুর চাষ হয়।
এখনও তো আমন ধান রোয়ার সময় কিন্তু সব জমি- পুকুর- ডোবা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কোনকিছুকেই আর আলাদা করে চেনা যাচ্ছেনা । চক্রবর্তী পাড়ায় গিয়ে তিতির দেখল সেখানে প্রায় সব বাড়িই ভেঙ্গে পড়ে আছে। তবুও তারই মধ্যে যাদের ইটের পাঁচিল তাদের বাড়িগুলো না ভাঙ্গলেও খরের ছাউনিগুলো সব উড়ে গেছে। গোয়ালবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে আছে আর গরুগুলো ঠাণ্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছে । গরুগুলোকে দেখে খুব মায়া হয় তার। বাবাকে প্রশ্ন করে—‘ আচ্ছা বাবা গরুগুলোর জন্যও একটা ঘর খুলে দিলে হয় না?’ মেয়ের কথায় বাবা হেসে বললেন —‘ হ্যাঁ সে তো তুই দিতেই পারিস । তুই আর তোর মা না হয় তোদের ঘরটা ছেড়ে দিস । ‘ বাবার কথা সত্যি ভেবে তিতির বলে উঠল –‘ তাহলে আমি আর মা কোথায় শোবো ? ‘ ‘সে তুই জানিস। বারান্দায় শুয়ে নিবি না হয়’। তিতির এবার বুঝল যে বাবা তার সাথে এতক্ষন ঠাট্টা করছিল। আর কিছু বলল না সে কিন্তু অনুমান করল চক্রবর্তী পাড়ারই যদি এই হাল হয় তাহলে মুচি পাড়া, নায়েক পাড়ার কি দুর্দশা হয়েছে। তিতিরদের পাড়ার পড়েই চক্রবর্তী পাড়া পেড়িয়েই নায়েক পাড়া পড়ে । এই এলাকাটা সবথেকে নিচু তাই এখানে জলও অনেকবেশি দাঁড়িয়েছে —প্রায় তিতিরের বুক অবধি ।
বাবা বললেন — ‘ তিতির আমার হাতটা শক্ত করে ধর, এখানে জলের খুব স্রোত ‘। তিতির দেখল বাবা ভুল বলেননি, সত্যিই জলের টানে তারাও অনেকদুর এগিয়ে গেছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তায় এইভাবে পা ডুবিয়ে হাঁটতে পেরে মনে মনে ভীষণ মজা পেল সে। ‘আচ্ছা বাবা এই জলে মাছ পাওয়া যাবে না?’ ‘হুমমম পাওয়া যেতেই পারে। পাকড়ে , মজুমদার সব পুকুরের মাছই তো বেরিয়ে গেছে। হয়ত দেখবি তোর হাতের নাগালের মধ্যে দিয়েই একটা মাছ চলে গেল।’ ‘ তাহলে তো দারুন হবে’ তিতির বলে উঠল। তারপর আর একটু এগিয়ে যেতেই দেখল রাস্তাতেই কিছু লোক ছাকনিজাল দিয়ে মাছ ধরছে, কোথাও কোথাও আবার ফাঁস জাল লাগানো —- -যেন গোটা রাস্তাটাই একটা আস্ত পুকুর। নায়েক পাড়া পেরিয়েই গ্রামের প্রাইমারি স্কুল। বাইরে থেকে সেখানে দেখা গেল রীতিমত মোচ্ছব বসে গেছে। স্কুলের মিড ডে মিলের রান্না যেখানে হয় সেখানে একটা বড় কড়াইয়ে রান্না হচ্ছে। স্কুলের বারান্দায় বড় আলনা খাটানো হয়েছে আর তাতে সবাই যে যার গামছা, লুঙ্গি, কাপড়জামা মেলে দিয়েছে। তিতির দেখল স্কুলের সঙ্গে লাগোয়া যে মাঠটা যেখানে প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুদের সাথে সে ঘানি, বুড়িব বসন্ত খেলে সেই মাঠটাতেও একগলা জল। সেখানে কেউ কেউ গামছা পড়ে নিমকাঠি দিয়ে দাঁত মাজছে আর গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে জলের মধ্যে হেঁটে চলেছে আবার মাঝেমাঝে কানে আঙ্গুল দিয়ে ঢুস ঢুস করে ডুব দিচ্ছে। চারিদিকের পরিবেশটাই যেন অন্যরকম–কারোর যেন কোন তারা নেই। আর একটু এগিয়ে গিয়েই তিতির দেখতে পেল তাদের গ্রামের সকলের সাধের ‘পঞ্চার চায়ের দোকান’টাও ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে। অবশ্য দোকানের সঙ্গে লাগোয়া পেরেক আর নারকেল দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা বাঁশের মাচাটা ডুবু ডুবু হলেও অক্ষত আছে। তিতির দেখল শুধু সে একা নয় তার মতো আরও অনেকেই বাবার হাত ধরে জল দেখতে বেড়িয়েছে ।
এমনকি পাশের গ্রামের দত্তদের ছেলেপুলেরাও এসেছে । তারা আবার জলে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে মিলে হাসিমুখে বিভিন্ন পোজ দিয়ে ফোটো তুলছে —যেন দিঘার সমুদ্রে স্নান করতে এসেছে। তিতিরের বাবাকে দেখে একজন দূর থেকে বলে উঠল –‘ কাকু পাহাড়পুরের বন্যা দেখতে এলাম’। তিতিরের বাবা হাসিমুখে ছেলেটিকে হাত নেড়ে সম্মতি দিলেন। আসলে আশেপাশের গ্রামগুলোর থেকে তিতিরদের গ্রামটাই সবথেকে নিচু এলাকায় তাই এখানে জলও অনেকবেশি দাঁড়িয়েছে আর সেটা দেখতেই পাশের গ্রামের অনেকে ভিড় জমিয়েছে। সব দেখেশুনে বিস্মিত তিতির প্রশ্ন করে— ‘আচ্ছা বাবা বন্যা হলে তো সকলে দুঃখ পায় কিন্তু এখানে তো সবাই আনন্দ করছে’। ‘ ঠিক বলেছিস রে মা , আসলে যাদের একটু টাকাপয়সা আছে তারা সবাই আনন্দ করে নিচ্ছে। এই যেমন তুই। তোদের বাড়িটা ভেঙ্গে পড়েনি বলেই তো তুই আমার সাথে হাত ধরে মজা করে জল দেখতে বেড়িয়েছিস ‘ ।
বাবার কথা শুনে তিতির বিজ্ঞের মত ভাবে সত্যিই তো বর্ষা , কাবেরি, দীপক এদের কেওই তো জল দেখতে বেড়য়নি। ওরা তিনজনেই মুচিপাড়ায় থাকে। তাহলে কি ওদের সবার বাড়ি ভেঙে গেছে! ওরা সবাই কি এখন স্কুল ঘরে! ‘ বাবা চল না একবার ইসকুলে যাই ‘ তিতির আবদার করে। স্কুলের ভিতরে গিয়ে দেখল সত্যি সত্যিই সেখানে বর্ষা , কাবেরি,দীপক সবাই রয়েছে। বর্ষা বটিতে আলু কাটছিল , তিতিরকে দেখে বলল —‘কি রে তিতির তুই এখানে?’ তিতির কোন উত্তর দিল না শুধু বর্ষার পাশে এসে বসল । তারপর তিনজনের মুখেই শুনল কিভাবে কাল রাতে ওদের বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। এমনকি কাল রাতে কাবেরির প্রিয় ছাগল ‘দুষ্টু’ও টালি চাপা পড়ে মারা গেছে।
সে বুঝতে পারল ওদের কারোর কাছেই এক দানা খাবারও নেই, কাল রাত থেকে ওরা কিছু খায়ওনি । কথায় আছে কারোর সর্বনাশ তো কারোর পৌষমাস — গ্রামে জল ঢুকেছে বলে কেউ কেউ ক্যামেরায় সেটাকে বন্দী করে রাখছে আবার কারোর কারোর ক্যামেরার প্রয়োজন হয়না, মনের ক্যানভাসে এমনিই বন্দি হয়ে যায় সর্বস্ব হারানোর ছবিটা । বন্ধুদের ঘর হারানো ,স্বজন হারানোর যন্ত্রণা এক লহমায় তিতিরের মনের সমস্ত পুলককে স্তিমিত করে দেয় । চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে তার । কানে মায়ের সেই কথাগুলোই বারবার বাজতে থাকে–‘ এত এত পাচ্ছিস তো তাই নষ্ট করছিস……।’ কোন কথা না বলে বাবার হাত ধরে ধীরেধীরে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় সে । পাশে কড়াইয়ে তখনও টগবগ করে ফুটছে খুদ মেশানো চালের খিচুড়ি ।।