বাদুড়তালার বাগানে

এক টানা অনেকটা পথ হেটে আসার পর অমল বুঝতে পারল,পথ গুলিয়ে গেছে।ব্যাপার টা খেয়াল হতে পরিস্থিতি অনুধাবন করে বেজায় ও।ষোল বছর বয়স হলেও বেড়াতে কম যায়নি।হাজারি বাগ আর বেতলার জঙ্গলে গেছে।গেছে গরু মারা,জলদাপাড়াতেও।তাই জঙ্গলের ঘোরার অভিজ্ঞতা নেই,বলা যায় না।কিন্তু মামার বাড়ির গ্রামের পাশে এই বাদুড়তলার বাগানে জুড়ি একটুও পায়নি।হাজার কয়েক একর জমি নিয়ে এই বাগানে সারা বছর রমরমা।তাই হয়ত এই নাম,।আম জাম কাঠাল থেকে শুরু করে বেল,ঝাকড়া আসশ্যওড়া।বড় বড় তাল,খেজুর নারকেল গাছ।কী নেই এই বাগানে!মামাদের গোটা কয়েক ভিটে আছে এখানে।সেই ভিটের খাঁড়া কাঠালগাছ আর গোলাপখাস আমের স্বাদই আলাদা।প্রতি বছর গরমের ছুটি পড়লে তাই ওর মামাদের বাড়ীতে একবার আশা চাই,এবার অবশ্য আম কাঠালের সময় নয়।পুজোয় এবার পুরি বড়াতে যাওয়ার কথা ছিল।বাড়ির সবাই মিলে দিন পণের থাকা হবে সেখানে।হলিডে হোম বুক,ট্রেনের রিজার্ভেশন,সব হয়ে গেছে।কিন্তু অফিসে জরুরি কাজের কারনে বাবার ছুটি শেষ মুহুর্তে ক্যানলেস হয়ে যাওয়ায় সব ভেস্তে গেছে।এবার পুজো তাই মটেই ভাল কাটেনি অমলের মন খারাপ।শেষে কালি পুজার দিন মা বললেন,যা অমু ছুটি শেষ হতে তো অনেক দিন বাকি আছে।মামা বাড়ি থেকে ঘুরে আয়।ওরা যাবার জন্য অনেক করে চিঠি লিখেছে।
ব্যাপার টা অজানা নয় অমলের।মামার বাড়িতে এবার মানতের কালি পুজো।যাবার কথা ওদের সবার।কিন্তু বাবার ছুটি নেই বলে মার যাবার উপায় নেই।এ ব্যাপারে অমলের যে খুব ইচ্ছে ছিল এমন নয়।তবু আসতেই হয়েছে।নইলে মামারা দুঃখ পাবেন। ছোটমামার সাহচর্যে দিন কয়েক কিন্তু মন্দ কাটেনি।মামার বাড়িতে এলে বেশি ভাগ সময় তাকে পাওয়া যায়না।ছোটমামা বাইরে থেকে পড়া শুনা করে।গরমের ছিটি নেই ওদের।আসতে পারে না।এবার বাড়িতে পূজো।তাই কালি পুজার কয়েক দিন আগে চলে এসেছে।ডাকাবকা স্বভাবের মানুষ এই ছোটমামা।অমলের একেবারে মনের মতো।বাড়ির কাছেই নদী।বর্ষার পরে বেশ জল রয়েছে এখনও।স্রোতের টানও রয়েছে।মামার সঙ্গে নদীতে ঝাপিয়ে স্নান।বিকালে নৌকা চড়ে দুই এক ঘণ্টা ঘুরে আসা।এর মধ্যে মেইল কেয়েক দূরে বিলে বড়শি ফেলে মাছ ধরতে গেছে।বিলের ধানখেতের মাঝে কোথায় মাছ রয়েছে,মামার নখদর্পনে।টোপ ফেলতেই টপাটপ চমৎকার সাইজের বড়-বড় পাবদা আর ট্যাংরা মাছ।সেই মাছের স্বাদই আলাদা।তবে ধরার আনন্দ আরও বেশি।অমল পেটুক মানুষ।আম কাঠালের সময় না হলেও দিনগুলো তাই কাটছিল ভালই।আজ অবশ্য মাছ ধরতে যাওয়া হয়নি।একদিন পরেই আমাদের কালি পুজো।সেই দৌলতে বাড়ি কাজ বেড়েছে।বিকালের মালপত্র মেলাতে গিয়ে খেয়াল হল,বাকি সব চলে এল কদমা,ফেনিবাতাসা আসেনি,অথচ যদু-ময়রার কাছে যথসময়ে অর্ডার দেওয়া হয়েছে।বড় মামা নিজেই হয়ত ছুটছেন।কিন্তু ছোট মামা বলল চল অমল আমরাই খোঁজ নিয়ে আসি।ময়রার ঠেক অন্য গ্রামে হলেও বাদুড়তলার গ্রামের ভিতর দিয়ে গেলে বেশি সময় লাগে না।ওদিকে একটু ঘুরে আসতে পারবি।বাড়িতে পুজোর কাজে ব্যস্ত থাকার ছোটমামা আজ আর ওকে নিয়ে ঘুরতে পারেনি।তাই বাদুড়তলার বাগানের নামে নেচে উঠেছিল।আম কাঠালের সময় যদিও এখনও নয়,তবু অন্য ফলের কোন অভাব নেই বাগানে।চটপট তৈরি হয়ে ছোট মামার সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল এরপর।
গ্রামের চৌদ্দি পার হতেই বাদুড়তলার বাগান।ভিতরে ঢুকে একটু অবাক হয়ে গেল অমল।মাত্র মাস কয়েক আগে ঘুরে গেছে।কিন্তু একেবারেই এখন অন্য রকম।গাছপালার আর ঘন ঝোপঝাড়ে আর চেনার উপায় নেই।বিকেলে বাইরে অনেক আলো থাকলে ভিতরে বেশ অন্ধকার।কৌতুহলে প্রশ্ন করতে ছোটমামা বললেন,গ্রাম বাংলার এই সব বাগান সারাবছর এই রকম থাকে না।বর্ষা চলে গেলে ঝোপঝাড় শুকিয়ে কমে আসে।জ্বালানীর জন্য গ্রামের মানুষ কেটে নিয়ে যায়।গরমের দিনে তাই বাগান অনেক হালকা দেখায়।বাবা মায়ের সঙ্গে বেশ কেয়ক জঙ্গল ঘোরা হয়ে গেছে অমলের।আজ বাদুড়তলা বাগানে ঢুকে ওর মনে হল,সে সব জঙ্গল এর চেয়ে বেশি ঘন নয়।ও বলল,এ তো বাঘ থাকার মতো জঙ্গল।উত্তরে ছোটমামা বলল,তবে শোন বলি।বড়দেড় কাছে শুনেছি,একসময় এই বাদুড়তলা বাগানে এই সময় প্রায় বাঘ এসে আস্তানা নিত।গ্রামের কয়েক জনের কাছে বাঘ মারার জন্য বন্ধুক থাকত।সেসব দিন আর নেই।শেয়াল আর খাটাসের আস্তানা।তবে-।ছোটমামা কিবলতে গিয়ে থেমে গেলেন।তবে তা নিয়ে তেমন কৌতূহল দেখাল না অমল।আসলে তখন ওর চোখ আটকে গিয়েছিল অন্যদিকে।বাগানের ভিতর দিয়ে সরু পায়ে চলার পথ।তাঁরই অদুরে এক ঝাকড়া পেয়ারা গাছ।গাছ ভরতি ডাশা ডাশা পেয়ারা ফলে রয়েছে।ওকে জুলজুল চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছোট মামা বলল,কি রে পেয়ারা খাঁবি?
ঘাড় নেড়ে অমল ততক্ষণে গাছের কাছে।গাছে ভালই উঠতে পারে ও।তবে ছোটমামা সে সুযোগ দিল না।নিজে গাছে উঠে গোটা কেয়েল ডাশা পেয়ারা পেড়ে এনে ওর হাতে দিল।চমৎকার পেয়ারাগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাকি পথটা তেমন কোনও কথা আর হল না।পাশের গ্রামে যদু-ময়রার ঠেক বেশি দূরে নয়,ভিতরে সমস্ত উনুনে চিনি গুড় জ্বাল হচ্ছে।গন্ধে ম-ম করছে চারপাশ।এক ঝাক মাছির সঙ্গে গোটা কয়েক বোতলাও গুড় চিনির গন্ধে ভন-ভন করে উড়ে বেড়াচ্ছে।ওদের দেখেই প্রৌঢ় যদুময়রা ছুটে এল।মুখ কাচু মাচু করে বলে,আজ্ঞে ছোটবাবু কর্মচারিটী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় কদমা আর ফেনি বাতাসা পুরোটা এখনও তৈঁরি করা যায়নি।নিশ্চিত থাকুন,বাকিটা তৈরি করে আগামি কালের মধ্যেই পৌঁছে দিয়ে আসব।
ওরা ফেরার পথ ধরবে হঠাৎ ছোটমামা বলল,দাড়া অমল,এদিকে যখন এলাম,একবার প্রাশান্তর সঙ্গে দেখা করে যাই।আগের বার দেখা করা হয়নি ওর সঙ্গে।পুজোর রাতে আসবে নিশ্চয়।তবে কি আর আড্ডা হয়!আজ হাতে সময় যখন আছে,
ওর বাড়িতে একবার ঘুরে যাই।ছোট মামার কথায় অমল প্রমাদ গনল।মানুষটার সবই ভাল।বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসলে আর হুশ থাকে না।এই অবস্থায় ছোট মামার সঙ্গে যাওয়া মানে বিকেলটা বরবাদ।তাঁর উপর অন্য মতলবও রয়েছে।ও বলল আমি তাহলে একাই চলে যাই।অসুবিধা হবে না।ওর কথায় ছোট মামা আপত্তি করল না।আসলে বন্ধুদের সাথে আড্ডার সময় ছোটদের কেউ সঙ্গে থাকলে কিছুটা মুশকিল হয়।তাই বলল,যেতে চাইছিস যখন,দেরি করার দরকার নেই।গ্রামের ভিতর দিয়ে যেতে সময় একটু লাগবে।অমল মাথা ঝাকিয়ে বলল,গ্রামের ভিতর দিয়ে যাব কেন?সেই পথেই যাব।একদম নয়।অমলের কথায় প্রায় হ্যাঁ-হ্যাঁ করে হেসে উঠল ছোটমামা,আলো পাড়ে আসছে।এখন ও দিক দিয়ে যাবার দরকার নেই।পথ হারিয়ে ফেলবি।কি যে বোল ছোটমামা!অমল হেসে উঠল,পথ হারিয়ে ফেলব,বললেই হল।তবে এই অবেলায় কি দরকার বাগানের পথে যাবার?সাপ-খোপ রয়েছে।বিপদ হতে কতক্ষণ?ছোটমামা ভুল বেলেনি কিন্তু অমল নিরুপায়।আসলে ওর ইচ্ছা ছিল বাগান দিয়ে ফেরার পথে আরাও কয়েকটা ডাঁসা পেয়ারা পেড়ে নিয়ে যাবে।কিন্তু মামার কথায় অন্য গন্ধ পেয়ে বলল,সাই নিয়ে ভয় নেই আমার।সামলে নিতে পারব।অন্য কিছু নেই তো?অমলের সেই প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে ছোটমামা বলল,জেদ যখন ধরেছিস,চল খানিক এগিয়ে দিয়ে আসি।আসলে ছোটমামা তাঁর এই ভাগনেটিকে বিলক্ষণ চেনে।তাই আর আপত্তি করল না।অমল কিন্তু থামল না।ছোট মামা তখন ওকে নিয়ে বাদুরতলার বাগানের দিকে এগেতে শুরু করেছেন।হঠাৎ বলল,তখন কি বলতে গিয়ে থেমে গেলে মামা।ছোটমামা তৎক্ষণাৎ কোন জবাব দিল না।আশা ছিল পথে হয়ত কাউকে পেয়ে যাব।সঙ্গে ধরিয়ে দিলে বাগান পার করে দিতে পারবে।কিন্তু বাগানের ভিতর হেটে এসেও যখন কাউকে পাওয়া গেল না।নিশ্চিত হয়ে বলল,ভাল করে শোন অমল।এই পথ ধরে নাক বরাবর চলে যাবি।মিনিট পাচেক চলার পর একটা বেল গাছ পার হলেই দেখতে বা হাতে একটা পথ বেরিয়েছে।সেই পথ ধরে আরও –।বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেল ছোট মামা।আসলে ভাগনার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিল,তাঁর কোন কথায় সম্ভত শ্রোতার কানে পৌঁছাছেনা।
ছোটমামার বুঝতে ভুল হয়নি।আসলে সামান্য ব্যাপারে এত উদবেগের কোনও কারণই খুঁজে পাচ্ছিল না অমল।বাগানের এই পথে আগে অনেক বার গেছে।যদিও সঙ্গে অন্য কেউ ছিল।তবু ভুল হবার কথা নয়।
ও বলল,তুমি অযথাই ভয় পাচ্ছ মামা।ঠিক চিনে যেতে পারব।একদম চিন্তা করো না,ছোটমামা আর আপত্তি করল না।হ্যাঁ যে প্রশ্ন করে ছিল তখন,গ্রামে এক গেছো-পাগল আছে।বদ্ধ উন্মাদ।প্রায়বাদুড়তলার বাগানে এসে গাছে উঠে বসে থাকে।হঠাৎ যদি সামনে পড়ে যায় ভয় পাসনি আবার।তাই বল,ছোটমামার কথায় হেসে ফেলল অমল।ছোট মামা ফের একবার ওকে সাবধান করে বিদায় নিতে নিশ্চিত মণেই চলতে শুরু করেছিল।তাঁর পর যা হল,সে তো শুরুতেই বলা হয়েছে।প্রথম টনক পড়ল,প্রায় মিনিট পচিশের মতো হেটে আসার পর।বেশ জোরেই পা চালিয়ে চলেছে,কিন্তু পেয়ারা গাছটার তখনও দেখা নেই।তবে কি পথ ভুল হল!ফের ঘড়ির দিকে তাকাল ও আসার সময় এই পথটা পার হতে মিনিট পণেরোর বেশি লাগেনি।পথ ভুল হয়নি তো?সন্দেহটা মাথা চাড়া দিলেও দমে না গিয়ে আরও কিছুদূর এগিয়ে গেল।
কিন্তু প্রায় মিনিট পাঁচেক চলার পর পেয়ারা গাছটার সন্ধান মিলল না।সুতরাং দাড়াতে হল।পথ যে ভুল হয়েছে।তাতে কিন্তু মাত্র সন্দেহ নেই!কোলকাতার ছেলে অমল বরাবরি একটু ডানপিটে গোছের।স্কুলে,পাড়ায় এর সুনাম দুরনাম দুটোই আছে।তাই ছোট মামার কথাটা কে একেবারে পাত্তা দেয়নি।বিশেষ করে বাদুড়তলার এই বাগান ওর কাছে কিছুমাত্র নতুন নয়।মামা কিংবা অন্যদেড় সঙ্গে অনেকবার এখানে এসেছে।ওর এই চৌদ্দ বছর বয়সের মধ্যে বহু যায়গায় অনেক বার একাই ঘুরে এসেছে,যেখানে আগে কখনও যায়নি।কিন্তু দুটো এক জিনিস নয়,এখন সে বেশ বুঝতে পারল।সে সব যায়গার পথে মানুষ থাকে।সমস্যায় পড়লে তাদের সাহায্য নেওয়া যায়।কিন্তু প্রায় জঙ্গলের মতো নির্জন বাগানে,সেই সুবিধা কোথায়?এতটা পথ হেতে এল,একটা মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি।আর ভিতরে পায়ের চলা পথ তো একটা নয়।মাকড়সার জালের মতো অসখ্যক।সবই এই রকম দেখতে।সব মিলিয়ে প্রায় গোলক ধাঁদার রাজ্য।তাঁর উপরে সূর্য পায় দিগন্তের কাছে।কার্তিক মাসে সুর্যের আবার তেজ থাকে না।আর এই ঘন গাছপালায় ঘেরা বাগানের মধ্যে রোদের ছিটেফুটা নেই।আলো অনেকটা কমে এসেছে।কোথাও রিতিমতো অন্ধকার।সন্দেহ নেই,ছোটমামা এমনটা অনুমান করে বলেছিল এই পথেই আসতে।ভাবতে গিয়ে মাথাটা অঠাৎ ঝিমঝিম করে উঠল,তবে সে টা সামাল দিতে সময় লাগে না।ও বুঝতে পারল,এই অবস্থায় আন্দাজে পথ হেটে একেবারে লাভ হল না।বিপদ আরও বাড়বে।এই শেষ বিকালের পথে দাঁড়িয়ে কারও জন্য অপেক্ষা করে লাভ নেই।বরং নাক বরাবরর কোন দিকে হেটে বাগানের বাইরে চলে যাওয়া নিরাপদ।একবার বাইরে বেরহতে পারলেই কোন মানুষের সন্ধান নিশ্চয় পাওয়া যাবে।কিন্তু শিরে যে তখন খাড়া ঝুলছে,বুঝতে সময় লাগল না অমলের।পায়ে চলার পথ কোনটাই সোজা বরাবর নয়।খানিক গিয়েই ডান নয়তো বা দিকে বেঁকে গেছে।তারপর ফের হয়তো যথাদিকে ঘুরছে,কিন্তু পথের গোলকধাধার ভিতরে তাঁর রাখাই মুশকিল।আরও প্রায় আধ ঘণ্টার মতো ঘোরাঘুরিই সার হল।বাগান থেকে বের হবার রাস্তা পাওয়া গেল না।এদিকে আলো কমে এসেছে।অন্ধকার ক্রমশ জমাট বাধতে শুরু করেছে।অমল বেশ বুঝতে পারল ইতিমধ্যে ও দিক ও হারিয়ে ফেলেছে।বেচারা এমন বিপদে আজ পর্যন্ত কখনও পড়েনি।গোঁয়ারতুমি করতে গিয়ে ভাল শিক্ষাপেল আজ।আর কিছুক্ষন পরেই সন্ধ্যা নেমে আসবে বাগানের পথে বিকেলে কোন মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি।আর রাতে যে এমন কাউকে দেখা যাবে,সেই আশা না করা ভাল।ভাবতে গিয়ে এই বিপদের কথা অমলের মুখ লাল হয়ে উঠল।গোঁয়ারতুমি করতে গিয়ে অযাথাই বিব্রত করা হল মামার বাড়ির সবাইকে।আড্ডা শেষ করে একসময় বাড়ি ফিরবে।তাঁর পর শুরু হবে হইচই।হ্যাঁজাঁক-বাতি জ্বেলে গ্রামের মানুষ কে ডেকে ওকে খুজতে বের করা হবে।হেনস্তার একশেষ-ছি-ছি।অমল এ পর্যন্ত মাথা মোটামুটি ঠান্ডা রেখেছিল।কিন্তু আর পারল না।আধো অন্ধকারে বাগানের ভিতর পথের মাঝে দাঁড়িয়ে কুলকুল করে ঘামতে লাগল।ঠিক সেই সময় ওর নজর গিয়ে পড়ল গাব গাছের মাথার উপর।কি কাণ্ড!সেই গেছ পাগলটা জুলজুল করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ছোটমামা সাবধান করে বলেছিল,লোকটা নাকি বদ্ধ উন্মাদ।কিন্তু হঠাৎ মানুষে কে দেখে বুক থেকে যেন পাথর নেমে গেল অমলের।হোক মদ্ধ উন্মাদ,কিন্তু বিপদের মুখে হাতের কাছে খড় কুটো পাওয়া অনেক দাম।গলাটা সামান্য ঝেড়ে নিয়ে অমল শান্ত গলায় বলে এই যে ভাই,একটু আসবেন এখানে।উত্তরে লোকটা কোন সাড়া দিল না।তবে মাথা শর্বস্ব লিকলিকে খড়ি-ওঠা শরীরটা নেড়ে উঠল সামান্য।চোখ দৃষ্টিটা আরও খরখরে হয়ে উঠল।তাঁর পর ধারাল দুটি দাঁত বের করে খিক করে হাসল।সেই হাসি দেখে একটু দমে গেল অমল।কামড়ে দেব নাকি।তবে সাহস হারাল না।কলকাতার গলিতে একবার হঠাৎ এক পাগল কুকুর ধেয়ে এসেছিল।সেই বিপদ যখন সামলাতে পেরেছি।এ তো একটা মানুষ।সেখাই যাক।লোকটার অবশ্য তখনও নামবার লক্ষণ নেই।অমল ফের ডাকল তাকে,একটু আসুন না ভাই।বড্ড বিপদে পড়েছি।গাছের উপরে লোকট
া এবার নড়ে উঠল সামান্য।তাঁর পর গাছ বেয়ে সড়াৎ করে প্রায় চোখের পলকে নেমে পড়ল।লিকলিকে বেঢপ আকারের ঢ্যাঙা লোকটা এরপর কাছে এসে ঝুকে পড়ে ফাটা শঙ্কের মতো আওয়াজে বলল,কি বলতেচো গাঁ?লোকটার কথায় ধড়ে প্রান এল অমলের।ছোটমামা উন্মাদ বদ্ধ পাগল বেলেছিল।কিন্তু তেমন তো দেখা যাচ্ছে না।আশায় বুক বেঁধে মোলায়েম গলায় বলল,দেখুন না ভাই,বড্ড বিপদে পড়েই ডাকতে হল আপনাকে।ভাল রে ভাল।দু,পাটি দাঁত বের করে খিল করে হাসল লোকটা,বিপদে পড়ে মোকেই ডাকতেচো!লোকটা সেই কথার মাথা মুন্ড তেমন বুঝতে না পেরে গাঁ করল না অমল।পাগলের কথা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।ও তাড়াতাড়ি বলল,বাগানে পথ হারিয়ে ফেলেছি ভাই।একটু দেখিয়ে দেবেন।কাদের বাড়ির ছেলে গো তুমি?ভাটার মতো দুই চোখ পাকিয়ে খরখরে গলায় বলল লোকটা।অমল অবশ্য তা নিয়ে মাথা ঘামাল না।তাড়াতাড়ি বড় মামার নাম বলে গ্রামের নাম বলতে যাবে,তাঁর আগেই লোকটা বলল,অ কত্তাবাবুদের বাড়ির ছেলে!লোকটার ভাটার মতো জ্বলে ওঠা চোখ দুটো হঠাৎ যেন অনেকটাই নরম হয়ে বলল,তা চলেন,পৌঁছে দে আসি।লোকটা বড় বড় পা ফেলে চলতে শুরু করল।পিছনে অমল।কিছুক্ষনের মধ্যেই বাগান থেকে বের হেয়ে ওকে নিয়ে যেখানে এসে হাজির হল তাঁর পাশেই এক সরষে খেত।আলের কোনায় বড়সড় একটা বাবলা গাছ।সেদিকে তাকিয়ে পায় যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল অমলের।এই তো সে বাগানে ঢোকার রাস্তা।বিকলের সূর্য বিদায় নিলেও,ভালই আলো রয়েছে এখনও।মামাদের গ্রামটা দেখা যাচ্ছে।ওফ!ছোটমামার কথায় কান না দিয়ে কি বিপদে যে পড়েছিল!ভাগ্যিস পাগল লোকটার মুড আজ ভাল ছিল।নইলে হেনস্তার শেষ থাকত না।কি গো বাপু এবার যেতে পারবেন তো?
খুব পারব।একিগাল হেসে অমল বলল কি বলে যে ধন্যবাদ দেব।খুব উপকার করেছেন।ও ঠিক আছে।লোকটা বলল এবার,একটা কথা বলি বাপু। কত্তাবাড়িতে তো কালকে গেলে পরশু কালি পূজো।জোড়া পাঠা বলি দেব। তা এত মানুষের নেমতন্ন হল,মদের কথা মনে পড়েনি!মোদের খেতে ইচ্ছে করে না, হ্যাঁ কি না?লোকটার সেই কথায় অমলের মুখ লাল হয়ে গেল।যদিও ব্যাপারটা ওর এক্তিয়ারে পড়ে না,তবু বলল,ঠিক আছে ভাই।ভুল হয়ে গেছে ক্ততাবাবুদের।আমি তাদের হয়ে ক্ষ্মমা চাইছি।আর নেমতন্ন করে যাচ্ছি।যাবেন কিন্তু। বাড়িতে ফিরে অমল তখনই ব্যাপারটা ভাবে নি।রাতে ছোটমামা ফিরেই খোঁজ নীল ওর।তাঁর পর বলল কি রে পথ চিনে আসতে সমস্যা হয়নি তো?
হয়নি আবার!দুটো চোখ বিস্ফারিত করে বলল অমল।বাপরে!পথ তো নয়,যেন গোলকধাদা!কি যে ঝামেলায় পড়েছিলাম ছোট মামা।তারপর?অমলের ওঁই কথায় প্রায় দম বন্ধ করে ছোটমামা বলল।তাঁরপর আর কি!মুশকিল আশাম হল ঐ গেছ পাগলের দৌলাতে।হঠাৎ দেখা হতে রিকোয়েস্ট করলাম।সেই পথ দেখিয়ে–।
কথা শেষ করতে পারল না অমল।তাঁর আগেই ডাকাবুকো দু বার হেঁচকি তুলে গো-গো শব্দে চিতপাত।ফিটের ব্যামের মতো অবস্থা।এরপর বাড়ি শুদ্ধ মামুষের ছুটোছুটি।ডাক্তার বদ্যি।ছোটমামা অবশ্য সুস্থ হতে সময় নয়নী।তবে ব্যাপারটা সহজে মেটেনি।কালি পুজোয় জুড়া পাঠা নয় পুরো তিন জোড়া পাঠা এনেছিলেন বড় মামা,পুজোর রাতে পাত পেড়ে এলাহি ভোজ দিয়েছিলেন।সেই ভোজে নাকি ইনেক অপিরিচিত মুখ নাখি দেখা গিয়েছিল।গ্রামের মানুষ কোন দিন দেখেনি তাদের।এমন কি খাওয় শেষ করে তাদের কে আর দ্বিতীয়বার দেখা যায়নি।তাই নিয়ে পরের কয়েক দিন গ্রামে নানা ফিসফাস।তবে কেউ তেমন গাঁ না করায় বিষয়টা তেমন জমতে পায়নি।

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!