
আজ আমি যে ঘটনা শেয়ার করতে যাচ্ছি , তা বেশ কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া ।
এর আগে কারো সাথে এই ঘটনা শেয়ার করি নি । আজই প্রথম……… ঘটনাটি আমার নানুবাড়িতে ঘটা । জায়গাটি মুন্সীগঞ্জে । আমি তখন ক্লাস নাইনে উঠব ।
এইটের বার্ষিক পরীক্ষা শেষের ছুটিতে বেড়াতে নানুবাড়িতে গিয়েছি । আমার নানুবাড়ি সম্বন্ধে আগেও বেশ কিছু ঘটনা শুনেছিলাম ।
ওই পুরো ভিটে জুড়েই নাকি বেশ রহস্যময় ঘটনা ঘটতে দেখেছে মানুষজন । তবে এখন নাকি আগের মত আর দেখা যায় না ।
যাই হোক , সেবার ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে বেশ ভালই শীত পড়েছিল । আমরা সব খালাতো ভাই বোন খালা মামারা একত্রিত , শীতের ছুটিতে । সীমাহীন আনন্দ ।
তাদের মধ্যে আমাদের দুজন খালার নতুন বিয়ে হয়েছে । সুতরাং , নতুন কম বয়সী খালুরাও আমদের মজা মাস্তিতে শামিল । সবাই দারূণ সময় কাটাচ্ছি ।
কিন্তু , আমাদের কিছু কম বয়সীদের তাতেও যেন মন ভরছিল না । বুঝতেই পারছেন , উঠতি বয়স ।
রক্তে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা ! সাত-আট দিন না যেতেই আমাদের আর সময় কাটে না । করার মত সব কাজ শেষ । এরপরই এল সেই দিন । আজও বারবার পস্তাই ।
কেন যে সবার মাথায় সেই দুঃসাহসের ভূত চাপিয়েছিলাম । যদি আমাকে আজ কেউ সুযোগ দিত , তবে অবশ্যই ওই দিনের ঘটনা বদলে দিতাম………… গ্রামে সবাই একটু আগেই ঘুমুতে যায় ।
তাই আমরা কাজিনদেরও আগে ভাগে বিছানায় যেতে হত । তাই বলে অবশ্য ঘুমিইয়ে পড়ার মত সুবোধ বালক আমরা কেউ ছিলাম না ।
রাত ভর গল্প-গুজব, তাস খেলা, কিছু বড় ভাইদের (এতও বড় নয় অবশ্য ) সিগারেট খাওয়া চলত অনেকক্ষণ । তবে সেদিন রাতে কিছুই ভাল লাগছিল না । রাত তখন ১০ টার মত বাজে ।
কথায় কথায় সেদিন আলোচনাতে ভূত প্রসঙ্গ এল । সেখান থেকে এসে পড়ল আমাদের নানুবাড়ির প্রসঙ্গ ।
সবার ভিন্ন মতামত থাকলেও আমি একেবারেই গাঁজাখুঁড়ি গল্প বলে সব উড়িয়ে দিতাম । সেদিনও তার ব্যতিক্রম হল না ।
এক পর্যায়ে তর্ক-বিতর্ক থেকে সাহসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেললাম ।
অস্বীকার করব না , আমি ওখানে সবার ছোট হওয়ার পরও একটু বেশিই বেপরোয়া প্রকৃতির ছিলাম ।
তাই , সবাইকে এক কথায় ‘ভীতুর ডিম’ বলতে লাগলাম । তখন দুজন ভাইয়া কিছু না মনে করলেও, বাকি দুজনের আঁতে কিছুটা ঘাঁ লাগল ।
তারা আমাকে বলতে লাগল আমিই বা কী এমন করেছি ! আমার তখন গরম অবস্থা । সাথে সাথে বলে বসলাম, ” ঠিক আছে ! হয়ে যাক বাজি ।
প্রমাণ হয়ে যাবে, কার বুকের পাঁটা কত বড় ?” তারা তৎক্ষনাৎ রাজি । বাকি দুই ভাই একটু আপত্তি জানালেও, তাদের আপত্তি ধোপে টিকল না ।
আমি নিজেই ঠিক করলাম বাজির বিষয় । আমাদের নানুবাড়ির পারিবারিক গোরস্থান ছিল বাড়ির বেশ কাছেই ।
গোরস্থানটি ছিল রাস্তার ধার ঘেষে । গোরস্থানের পাশ দিয়ে রাস্তা গিয়ে সেই রাস্তাতে পড়েছে ।
সবাই চলাচলের জন্য সেই রাস্তা ব্যবহার করে ।
আমি বাজি ঠিক করলাম , ওই গোরস্তানের মধ্যে দিয়ে কোন আলো ছাড়া পার হয়ে উলটো দিকের রাস্তায় উঠতে হবে ।
বাজির বিষয় শুনে সবাই একটু থতমত খেয়ে গেল ।
তারা আশা করেনি , আমি এই ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস ।
আসলে , সত্যি হল আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল , এরকম কিছু একটা করে দেখার, দেখানোর ।
সেদিন আর এমন মোক্ষম সুযোগ ছাড়লাম না । “যেমন কথা তেমন কাজ । রাত তখন প্রায় ১০ টার মত বাজে । আমরা ৫ জন দুটো টর্চ নিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লাম ।
বাড়ির কেউ জানলে আর কষ্ট করে ভূতের খপ্পরে পড়তে হবে না । আমার আম্মাজানই আমাদের জ্যান্ত কবর দিবেন ।
যাই হোক, হাঁটা চলতে লাগল । চাঁদের বেশ আলো ছিল সেদিন । হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছে গেলাম গোরস্থানের উলটো ধারের ফটকের কাছে ।
সেখান থেকে আমাদের দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা । বাজিটা মূলত ছিল আমার, মাসুম ভাই আর রুম্মান ভাইয়ের মাঝে ।
সাথে ছিল আমার আপন বড় ভাই নিশাত আর আমার আরেক খালাতো ভাই সনেট ( যিনি আমাদের মাঝে সবার বড় ) ।
ঠিক করা হয়েছিল – সেখান থেকে নিশাত আর রুম্মান ভাইয়া চলে যাবে উলটা পাশে , রাস্তার পাশের মূল ফটকের কাছে । প্রথমে , আমি এপাশ থেকে ওপাশে যাব ।
আমি পৌছলে সেখান থেকে রুম্মান ভাইয়া আসবে এপাশে । তারপর সবার শেষে মাসুম ভাই চলে যাবে অন্য পাশে ।
শুধু তো ভূত নয় , এত রাতে রাস্তার ধারে চোর-ডাকাতেরও ভয় ছিল ।
তাই , কোনো পাশেই যেন কাউকে একা পড়তে না হয় , তাই আমার মস্তিষ্কপ্রসূত এই বুদ্ধি . . . . . . কথা মত রুম্মান আর নিশাত ভাইয়া চলে গেলেন রাস্তা ধরে অন্য পাশের গেটে ।
তাদের যাওয়ার ১০ মিনিট পরে আমি রওয়ানা হব । সময় হল ।
ভাইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে আমি ঢুকে পড়লাম গোরস্থানের ভিতরে । চারিদিকে সুনসান নীরবতা ।
শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক । কবরখানাটি ছিল লম্বাটে আকৃতির । মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা চলে গেছে । দুপাশ ঘেঁষে সারি দিয়ে কবর ।
ভয়ের বিষয় গাছ আর বাঁশঝাঁড়ের জন্য আলো আসছিল না সেখানে । তার উপর বাজির শর্ত অনুযায়ী আমাকে আলো ছাড়াই পুরোটা পাড় হতে হবে ।
অস্বীকার করব না , শুরুতে আমার একটু ভয় লাগছিল না এমন নয় । তবে একটু বাদেই সব আজেবাজে ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম ।
মনে মনে এটা নিশ্চিত করলাম – ভূত-ফূত কিছু যদি আসেও , আমি মরার আগে ওকে দু-চার ঘাঁ না দিয়ে মরব না ।
দোয়া দূরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে এগুনো শুরু করলাম । অন্ধকারে কোথায় পা ফেলছি দেখতে পাচ্ছি না ।
তাতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেতে পারি – ভেবে বাধ্য হয়ে কবরগুলোর পাকা ধার গুলো ধরে হাতড়ে হাতড়ে এগুতে থাকলাম । তেমন কোন সমস্যা হচ্ছিল না ।
হঠাৎ কিছু একটা ব্যাপার অদ্ভুত ঠেকতে লাগল । বুঝতে পারলাম না ব্যাপারটা কি ? সাবধানে ঘাড় ঘুড়িয়ে চারপাশে খেয়াল করলাম । নাহ ! আশ্চর্যজনক কিছুই চোখে পড়ল না ।
কিন্তু , আমি নিশ্চিত ছিলাম – কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে । কোন কিছু দেখতে না পেয়ে , ভাবলাম – নিজের মনের ভুলই হবে হয়তো ।
পরে বুঝতে পেরেছিলাম কোন ভুল হয় নি আমার । তখন একটি ঘটনা ঘটেছিল । যা তখন বুঝতে না পারলেও, পরে ধরতে পেরেছিলাম ।
যা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে । যাই হোক , তখন কি হয়েছিল , পরেই বলব ।
ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে যেতে একসময় উলটো ধারের গেটের কাছেও পৌছে গেলাম । কোন বিপদ আপদ ঘটল না ।
কিন্তু খুব আশ্চর্যজনক কারণে আমি পুরো গুম মেরে গিয়েছিলাম । কিছু একটা অস্বাভাবিক কিছু আমার স্নায়ুর উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল ।
কেন যেন মনে হতে লাগল – খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে । আমি উলটো পাশে পৌছে যাওয়াতে , নিশাত – আমার আপন ভাই , যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ।
তবে রুম্মান ভাইয়ের তো আরো মাথায় জেদ চেপে গেল । আমি যখন সবার ছোট হয়ে বাজিমাত করেছি , উনার এখন পার হওয়াটা যেন কর্তব্য ।
একবার ভাবলাম , ভাইকে মানা করি । কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম , এখন মানা করে কোন লাভ হবে না। উনারা কেউই হার মানার ছেলে না ।
তো রুম্মান ভাইও চলে গেলেন গোরস্থানের ভেতর দিয়ে । এপাশে রয়ে গেলাম আমি আর নিশাত ।
নিশাত খেয়াল করল , বাজি জেতার উচ্ছলতা নেই আমার মাঝে , বরং কেমন যেন বেমানান রকমের চুপচাপ ছিলাম আমি । ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে ? অস্বীকার করলাম না ।
ভেতর দিয়ে আসার সময়কার সেই অনুভূতির কথা । ও বলল , এটা তেমন কিছু না ।
অতিরিক্ত উত্তেজনা থেকে হয়ে থাকবে হয়তো । ও বরং এই বাজির বিষয় ভালয় ভালয় শেষ হলে খুশি । সময় যেতে লাগল ।
কে জানে রুম্মান ভাইয়া পৌছতে পেরেছে কিনা ? রুম্মান ভাইয়া তখন কিভাবে কি করল – পরে তা উনার মুখে শুনেছি ।
ভেতরে ঢোকার পর আমার মত উনারও একই আলোর সমস্যা হয়েছিল । তবে কিছুদূর যাওয়াড় পর আমার মত উনারও আশ্চর্য কোন অনূভুতি হয়েছিল ।
কি তা উনিও বুঝতে পারে নি । কোন কারণে উনিও ভয় পেয়েছিল ।
ঠিক কি তা জানে না, জানার প্রয়োজনও বোধ করেন নি ।
সোজা দোয়া দূরুদ জপতে জপতে হেঁটে গেছেন এবং অবশেষে অন্যপ্রান্তে পৌছেও গেছেন ।
তবে একটা গুমোট চাপা আতংক ভর করেছিল উনার মাঝে । উনি পরে স্বীকার করেছিলেন ।
পরবর্তীতে ওপাশ থেকে মাসুম ভাইয়াও রওয়ানা দেন ।
ইতোমধ্যে আমি আর নিশাত এদিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম , কখন মাসুম ভাইয়া আসবে ; কখন এইসব শেষ হবে ! হঠাৎ করেই পিছনে শব্দ ! পুরোপুরি জমে গেলাম আমরা দুজন ।
শব্দটা আমাদের কাছে আসতে লাগল । তাকিয়ে দেখলাম আলো । আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে । কাছে আসতেই হাঁফ ছেড়ে বাচলাম । আমাদের ইনু নানা ।
উনি তখন মসজিদের দায়িত্বে ছিলেন । রাতে অনেকক্ষণ ওখানে থেকে উনি বাড়িতে ফিরতেন । পরহেযগার মানুষ ।
আমাদের এমন সময়ে এমন জায়গায় দেখে উনার তো চক্ষুচড়কগাছ । জিজ্ঞেস করলেন কি করছি ওখানে । আমরা সত্য-মিথ্যা দুই-ই বললাম ।
কারণ , জানতাম উনি আমাদের বাড়িতে না নিয়ে ফিরবেন না ; আর আমরাও মাসুম ভাইকে ফেলে যেতে পারি না ।
তাই বললাম, মাসুম একটু সাহস দেখিয়ে কবরস্থানের ভিতরে গিয়েছে, এখনি চলে আসবে । উনি তখনই আমাদের বকাঝকা শুরু করলেন ।
ঠিক তখনই গগন বিদারি চিৎকার ভেসে আসল ভিতর থেকে । মাসুম ভাইয়ের গলা চিনতে ভুল করলাম না কেউই ।
সাথে সাথে নানু আমাদের বাইরে থাকতে বলে ভিতরে ঢুকে গেলেন । আমরা যেতে চাচ্ছিলাম ।
কিন্তু উনার চাউনি দেখে আর সাহস করলাম না …. নানা ভিতরে ঢুকে গেলেন । একটু পরেই ভিতর থেকে এক ধরনের হুটোপুঁটির শব্দ ভেসে এল ।
কিছুক্ষণ পরে নানুজান টলতে টলতে বের হয়ে আসছেন , সাথে মাসুম ভাই । থরথর করে কাঁপছেন । কি হয়েছে – জিজ্ঞেস করার মত পরিস্থিতি কারো ছিল না ।
নানুকে দেখলাম কেমন যেন উদভ্রান্ত দেখাচ্ছিল । উনাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “নানু, কি হয়েছে ? ” উনি বলল ,তেমন কিছু না । মাসুম ভাই মনে হয় এমনিই ভয় পেয়েছে ।
আমার স্পষ্ট মনে হল উনি কিছু এড়িয়ে গেলেন । মাসুম ভাইকে আমরা শক্ত করে ধরলাম । তবে সামনে হাঁটতে গিয়েই উনি মূর্ছা গেলেন । দিন দুয়েক বাদে , সব শান্ত হয়েছিল ।
আমরা মাসুম ভাইকে ধরাধরি করে অন্যপাশে নিয়ে এসেছিলাম । ওখানে রুম্মান আর সনেট ভাইকে দেখে নানু বুঝতে পেরেছিলেন আমরা মিথ্যা বলেছি ।
লজ্জায় আমরা উনার দিকে তাকাই নি আর । ইতোমধ্যে মাসুম ভাইয়ের চেতন ফিরেছিল । বাকি পথটুকু উনি টলতে টলতে আমাদের সাথে হেঁটে ফেরেন ।
তখন কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করার মত অবস্থা ছিল না । আমরা শুধু নানুকে অনুরোধ করি বাড়ির কাউকে না জানানোর জন্য ।
উনি কোনো জবাবই দেননি । তবে উনি কাউকে বলেন নি । আর সেদিন থেকে উনার কি যেন হয়েছিল । একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন ।
আর মাসুম ভাই প্রচণ্ড জ্বরে পড়েন । প্রায় ৩ দিন উনি জ্বরে ভোগেন । একটু ধাতস্থ হলে উনার কাছে আমরা শুনি আসল ঘটনা ।
রুম্মান ভাইয়া ফেরার পর উনি স্বাভাবিকভাবেই ভিতরে ঢোকেন । আমাদের মধ্যে উনিই ছিলেন গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা । তাই উনার এত ভয়ও ছিল না । তবে উনিও ভয় পেয়েছিলেন ।
ঠিক যেখানে আমাদের সেই আজব অনুভূতি হয়েছিল । তবে উনি সেখানে দাঁড়িয়ে পরে বোঝার চেষ্টা করেন কি হয়েছে । সাহস করে উনি হেঁটে কবরগুলোর ধারে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন ।
ঠিক তখনই উনি চমকে গিয়ে লক্ষ্য করেন একটা অংশ স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশিই অন্ধকার এবং কেমন যেন জমাট বাঁধা ।
উনি ওটার কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেই চমকে গিয়ে উনি লক্ষ্য করেন ওটা যেন ধীরে ধীরে মানুষের অবয়ব নেয়া শুরু করে ।
সাথে সাথে উনাকে অমানুষিক আতংকে পেয়ে বসে । চিৎকার করে উঠেন উনি । উলটো দিকে ঘুরেই উনি দৌড়ানো শুরু করেন ।
কিন্তু উনার মানে হয় উনি যতই আগানোর চেষ্টা করছেন , পারছেন না । ঠিক তখনই উনি সামনে কিছুর সাথে ধাক্কা খান । সে তাকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরে ।
কানের সামনে উনি আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত শুনতে পান । পরে বুঝতে পেরেছিলান ওটা নানা ছিল ।
নানা তাকে সামনে ঠেলে দিয়ে কিছু একটা থেকে আড়াল করেন ।
যাই করে থাকেন না কেন সেদিন ,নানা আসার পরেই উনি যে বেঁচে ফিরেছেন তা আমরা সবাই হারে হারে টের পেয়েছিলাম ।
কিন্তু এর ফল আমাদের অন্য ভাবে দিতে হয়েছিল । এর কিছুদিন পরেই নানা অসুস্থ হয়ে পড়েন ।
অনেক চেষ্টা করা হয় । ঢাকায় আমাদের এখানে এনে চিকিৎসা করানো হয় । কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না । আমি উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম ।
আমাকে দেখে উনি শুধু এক চিলতে হাসি দিয়েছিলেন । ওই হাসিতে কিছু একটা ছিল ।
আমার আজো ওইদিন যদি আমরা এমন কিছু না করতাম , তবে নানা আজো আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতেন ।
বড্ড তাড়াতাড়ি উনি আমদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন । আমদেরকে , মাসুম ভাইকে বাঁচিয়ে দিয়ে উনি মৃত্যুটাকে বুকে আগলে নিয়েছিলেন ।
এটাই ছিল আমার গল্প । আমার জীবনের নির্মম এক গল্প । কিছু প্রশ্ন থেকে যেতে পারে . . . . মাসুম ভাইয়া আসলে কি দেখেছিলেন ? উত্তরঃ জানি না । কখনো জানতে চাইও না ।
আর আমাদের ওই অনুভূতির কি ব্যাখ্যা ছিল ? এটা আমি পরে বুঝতে পেরেছিলাম । কারণ , বহুবার আমার দুঃস্বপ্নে ওই কালরাত ফিরে এসেছিল । উত্তরঃ ঝিঁ ঝিঁ পোকা ।
ওই বিশেষ জায়গায় যেতেই পুরো গোরস্থানে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে । এমনকি ঝিঁ ঝিঁ ডাকাও বন্ধ হয়ে যায় ।
পরে আমি অনেক জায়গায় পড়েছি এরকম অশরীরী, ভূত-প্রেত – যে যাই বলে . . . . . তারা যেখনে আসে, সেখান থেকে সকল প্রাণ পালিয়ে যায় ।
আমার আর রুম্মান ভাইয়ের অনেক সৌভাগ্য , আমরা সেদিন তার পাল্লায় পড়ি নি । পড়েছিল দুর্ভাগা মাসুম ভাই , আর জীবন গিয়েছিল আমদের সবার প্রিয় ইনু নানার ! ! !