বাচ্চা ভুত

দীপুর মেজাজ আজ খুব খারাপ। দিব্যি  দিনগুলো কাটছিল। কীসের থেকে কী হলো, স্কুল থেকে পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিল। বিশ দিন পর ক্লাস ফোরের ফাইনাল পরীক্ষা। জীবন থেকে সব আনন্দ উধাও। সব সময় পড়ার টেবিলে বসে থাকতে হবে। পড়ায় একটুও মন নেই তবুও। কী আর করা! পড়ুক আর না পড়ুক, টেবিলে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
“ক্লাস ফোরের একটা ছেলেকে তুমি আর কত চাপ দেবে?” কথাটা দীপুর বাবা দীপুর মাকে বললো। কিন্তু পরোক্ষভাবে যেন দীপুকে একটু আদর করলো! “এটা তোমাদের যুগ না।

এই যুগটা অনেক কঠিন। পড়াশোনায় চাপ না দিলে সব গোল্লায় যাবে!” বাস্তবতাটা বুঝিয়ে দিল দীপুর মা। সবই বোঝে দীপু। কিন্তু মন মানে না। ইচ্ছে করে বিকাল হলেই বাইরে গিয়ে ফুটবল খেলে। ফেরার সময় আইস্ক্রিম খায়। কিন্তু কার সাথে খেলবে? সবার পরীক্ষা। আর কোথায় খেলবে? মাঠ কোথায়?
অংক পরীক্ষা দিতে বসেছে দীপু। আসল পরীক্ষা না। নকল পরীক্ষা। মা প্রশ্ন করে দিয়েছে। সেই প্রশ্নে তিন ঘন্টার পরীক্ষা দিতে হবে। ওর মা স্কুল টিচার হওয়ায় ওর হয়েছে আরও বেশি বিপদ। এত কঠিন প্রশ্ন করেছে! মেজাজ খুব খারাপ হচ্ছে দীপুর।

এত কঠিন অংক জীবনেও আসবে না পরীক্ষায়! তারপরেও ওকে এইসব অংক করতে হবে! রাগে গজ গজ করতে থাকে দীপু। চোখের সামনে রাখা টেবিল ঘড়িটা জানিয়ে দিল ওর তিন ঘন্টা দুই ঘন্টা শেষ! দিশেহারা হয়ে গেল দীপু। কী করবে এখন?
হঠাত ওর বয়েসী একটা ছেলে ওর ঘরে ঢুকলো। ছেলেটাকে চেনেনা ও।
দীপুঃ তুমি কে?
ছেলেটাঃ আমি যা তাকে তোমরা বল ভুত।
দীপুঃ “আমাকে আর পাঁচটা বাচ্চা ছেলে পাওনি। ভুতের নাম শুনেই ভয়ে আদমরা হয়ে যাব।

তুমি কোথাকার ভুত? আর বাসায় ঢুকেছ কীভাবে? নিশ্চই দরজা খোলা ছিল। বাবা, মা কেউ বাসায় নেই সেই সুযোগে ঢুকে পড়েছ? বেরোও। দেখছো না আমি পড়ছি?”
ছেলেটাঃ “আহহা, এভাবে বলছো কেন? তোমাকে ভয় পাওয়াতে আসিনিতো।
দীপুঃ “তাহলে কী করতে এসেছ?”
ছেলেটাঃ “বাবা, মা’র কাছ থেকে একটু পারমিশন নিয়ে আসছি। তবে তোমার কাছে যে আসছি এইটা বাবা,মা জানে না। জীবিত মানুষদের সাথে যোগাযোগ করা আমাদের নিষিদ্ধ।

মাঝে মাঝে যে অনেক মানুষ ভুত দেখে, ওই কারনে আমাদের অনেকের শাস্তি হয়। আমি তবুও আসলাম। আমি কোন জীবিত মানুষদের সাথে কথা বলিনিতো। তাই।”

দীপুঃ “ও তাই না? ফাজলামি করার জায়গা পাও না। শোন, এত মিথ্যা কথা বলা কোথায় শিখছো? নিজে মিথ্যা বলে নিজেই কেমন ধরা পড়ে গেলে দেখলে?”
ছেলেটাঃ কী মিথ্যা বললাম? আর কী ধরা পড়লাম?
দীপুঃ তুমি ভুত? অথচ তুমি কোনদিন জীবিত লোকের সাথে কথাই বলনি? তাহলে তুমি ভুত হলে কীভাবে? না মরলে কেউ ভুত হয়?
ছেলেটাঃ এইটা তোমাদের একটা ভুল ধারনা। আমার বাবা-মা দুই জনই ভুত। কিন্তু তারা আগে মানুষ ছিল। কিন্তু আমি একেবারে আসল ভুত। আমার জন্মই হয়েছে ভুত হিসেবে!
দীপুঃ আরে ধুর। শুধু আমার ঝামেলা করছে। দেখছো অংকগুলো পারছি না। তোমার এইসব ফাজলামি শোনার  সময় আমার নাই। আর ভুত বলে কিচ্ছু নেই। আমি ওইগুলো কোনদিন বিশ্বাস করি না। তুমি যাও এখন।
ছেলেটাঃ কী করলে বিশ্বাস করবা যে আমি ভুত?
দীপুঃ কোনকিছু করলেই বিশ্বাস করব না…………হায় হায় আমার সময়তো শেষ! একটা অংকও করতে পারলাম না! সব দোষ তোমার। তোমার জন্যই পারলাম না। এখনই মা আসবে । কী বলব আমি?
ছেলেটাঃ ওই অংকগুলো তুমি এমনিতেও পারতে না। যাইহোক। আমার সময়ও প্রায় শেষ। আমি যাব। কিন্তু তার আগে তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে আমি ভুত।
দীপুঃ উফফ…এখনি আমার সামনে উড়ে দেখাও। আর আমার এই অংকগুলো এখনই করে দাও। আর আমকে আইস্ক্রিম খাওয়াও।
ছেলেটাঃ ওরে বাবারে!! আচ্ছা তুমি আমার সাথে বাইরে আস। তোমাকে আমি উড়ে দেখাব। শুধু ঘরের সামনে আস।
দীপুঃ আচ্ছা, তাই। চলো।
ঘরের সামনে এসে ছেলেটা একটা লাফ দিল এবং অবধারিতভাবে পড়ে গেল! দীপু প্রচন্ড রেগে যেয়ে বলল,” এই মুহুর্তে এখান থেকে চলে যাও। আমার এতটা সময় নষ্ট করেছ। যাও! দূর হও!!”।

ছেলেটা ভীষন লজ্জা পেয়েছে। মুখটুখ কাচুমুচু করে বলল,” আহ হা। আমি এখনও ছোটতো। ঠিক মত শিখতে পারিনি। রাগ করছ কেন?” দীপু এবার সত্যিই রেগে গেছে। “আমাকে গাধা পেয়েছ না? তখন থেকে ফাজলামি। যাও এক্ষণি যাও এখান থেকে।” ছেলেটা বলল, “আহা বললামইতো আমার সময়ও শেষ। আমাকে এখনি যেতে হবে।

তবে তুমি রাজি থাকলে আমি আবার আসব। বল আমি আবার আসব?”  দীপু আবার একটা ধমক দিয়ে বলল,”পাগল নাকি? আবার আসবে মানে? খবরদার আর এমুখো হবে না। যাও!” ছেলেটা মন খারাপ করল। তবুও বলল, “সত্যি আর আসব না? তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছিল।

তুমি বললে আমি বাবা মা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার আসতাম”।   “বললাম না যাও!” বলেই ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিল দীপু। “কী আর করা” বলে চলে গেল ছেলেটা।
নীজের ঘরে ফিরে আসল দীপু। এসেই চক্ষু চড়কগাছ! ওর খাতায় প্রতিটা অংক করা! আর টেবিলের উপর ওর ফেভারিট বাটি আইস্ক্রিম রাখা!!!!!!!!!
ছুটে বাইরে গেল দীপু। কিন্তু ছেলেটাকে আর দেখতে পেল না!!!!!!!!!!!!!!

(গল্পটা খুব ছোটবেলায় পড়া একটা বিদেশী গল্পের অনুকরণে লেখা। তাই অন্য কোন গল্পের সাথে কিছুটা মিলে যেতে পারে।)

 

দুঃখিত!