গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
কয়,”বড় ঘরে বিয়া হইতাসে রে তোর দুলি! কপাল খুইলা গেল রে তোর! নিশ্চয়ই এইটা কোন জমিদারের পোলা।” সোনার কলস ধরাধরি কইরা বাড়ি নিয়া আসে মায়ে ঝিয়ে।
পরদিন থিকা বুড়ির বাড়িতে হৈ হৈ কান্ড! কেউ ইট টানে, কেউ সুড়কি আনে, কেউ আনে বালি। নতুন বাড়ি বানানের কাজে লাইগা যায় কত লোক। সকাল সকাল গিয়া বুড়ি যোগাড় কইরা নিয়া আসে সবাইরে। বুড়ির পুরান ছনের ঘর ভাইঙ্গা চুইরা সেখানে নতুন বাড়ি উঠতে থাকে। পাড়া প্রতিবেশীরা চারদিক থিকা তামশা দেখার জন্য ছুইটা আসে আর হা কইরা দেখে। বুড়ির অবস্থা দেইখা সবার চক্ষু টাটায়। সুবল নামে বুড়ির জামাইয়ের এক দুঃসম্পর্কের ভাই থাকতো গ্রামের ভিতরে। কোনদিন বুড়ির খবরও নিয়া দেখে নাই, সে আইসা বুড়ির লগে খাতির জমানোর চেষ্টা করতে থাকে, জিগায় – ‘কেম্নে কীরে বুড়ি!’ বুড়ি একগাল হাইসা গল্প বানাইয়া খাওয়াইয়াও দেয় সুবলরে, কয় – বনের ধারে এক জমিদারের পোলা, সে দুলিরে দেইখা পছন্দ করছে, এক কলস সোনার মোহর দিয়া কইসে সব যোগাড়যন্ত করতে, এক সপ্তাহ পরেই বিয়া। বুড়ির কথার আগামাথা কিছুই বুঝে না সুবলে। শুধু বুড়ির বাড়ি বানানি দেইখা তার গা জ্বালাপোড়া করতে থাকে।
এমনে কইরা বুড়ি তিন মাসের মধ্যেই তার পুরান বাড়ি ভাইঙ্গা সেখানে সুন্দর একটা দালান-বাড়ি বানায়া ফেললো, চাইরদিকে সুন্দর পাঁচিল তুললো। বাড়ির পিছনে দুলি সুন্দর ফুলের বাগান বানাইলো।
দুলির লেইগা দুজন দাসী-বান্দী রাখলো বুড়ি। তারা প্রতিদিন দুলিরে স্নান করাইয়া সুন্দর কইরা সাজাইয়া গুছায়া দেয়, ত্যাল দিয়া চুল বাইন্ধা দেয়। কে কইবো এই মাইয়াই আছিলো ছাগল-রাখুনী বাইল্লাচুলী? দুলিরে আর চিনাই যায় না, দেখতে একদম পরীগো মত লাগে।
এতদিনের অভাবের পরে সবকিছু দুলির কাছে স্বপ্নের মত লাগে, তার মুখেও হাসি ফুটে। বুড়ি বিছানায় বইসা মাইয়ারে দেখে আর চক্ষু জুড়ায়। একসময় বুড়ির মনে পড়ে তার অনেক কাজ, কালকেই তিনমাস শেষ হইবো। পুরুত ঠাকুরের খোঁজে বাইর হয় বুড়ি ।
পরদিন সকাল থিকা বুড়ি আয়োজন করে, দূরের এক গ্রাম থিকা পুরুতরে নিয়া আসে বাড়িতে, কিন্তু কাউরে জানায় না, নিমন্তন্ন করে না। সকাল থিকা দাসী বান্দীগো খেদাইয়া দেয় বুড়ি।
দুলিরে নিজে সাজাইয়া গুছাইয়া তৈরী করে, পুরুতঠাকুর উঠানে বিয়ার আয়োজন করে। বুড়ি উঠানে বাঁশ গাড়ার কথা ভুলে না। কিন্তু দুলির মন খারাপ। বুড়ি দুলিরে মানায়, ভুলাইয়া পিঁড়িতে নিয়া বসায়।
সন্ধ্যা হয় হয়, লগ্নের সময় যায়গা, পুরুতে তাড়া দেয়, কয় “কই গো, বর কই!” । বুড়ি উছপিছ করে। একটু পরেই, বাড়ির পিছে গাছ-লতা-পাতার মধ্যে কীসের যেন খুস-খাস শব্দ পাওয়া যায়। সর-সর শব্দে কি জানি এই মুখেই আইতে থাকে। ভয় পাইয়া আঁতকাইয়া উঠে দুলি। বুড়ি কি হইসে দেখার লেইগা পিদিম উঁচা করতেই হিসহিস কইরা খুব কাছ থিকা কেউ একটা ধমক দেয়,
“আলো সরা বুড়ি!”