বাইল্লাচুলীর গল্প –চতুর্থ পর্ব

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

আর সাথেই সাথেই জিনিসটা কিলবিল কইরা আইসা বুড়ির হাতে ধাক্কা দেয়, পিদিম পইড়া নিভভা যায় বুড়ির হাত থিকা। সন্ধ্যা তখনো পুরাপুরি হয় নাই। সবাই দেখে তখন জামাই বাবাজিরে। বিরাট অজগর একটা! কিলবিল কইরা পাকাইতে পাকাইতে উঠতে থাকে উঠানে পোতা বাঁশটা বাইয়া। বুড়ি জামাই দেইখাই চোখ উল্টাইয়া ভিরমি খায়। দুলির চোখ ঠিকরাইয়া বাইরাইয়া আসতে চায়, তাব্ধা খাইয়া বইসা থাকে। পুরুতে আঁ আঁ করতাছিল, সাপে আবার দেয় ধমক,

“মন্ত্র পড় ঠাকুর, নাইলে তোরে খাইসি!”

ঠাকুরে মন্ত্র পড়ে তড়িঘড়ি কইরা। বর-বউয়ের মাথায় আশীর্বাদ কইরা নমঃ নমঃ কইরা কোনমতে বিয়া সাইড়া-ই উইঠা দেয় দৌড়! সাপে দুলিরে দেখে কিছুক্ষণ, তারপর আস্তে আস্তে ঘরের দিকে যায়। দুলি পিঁড়িতে বইসাই থাকে এক ঠায়। বুড়ি তখনো অজ্ঞান। অই রাতটা মায়ে ঝিয়ে বাইরেই কাটায়।

সকাল হইলে বুড়ির চেতনা হয়। দুলি ঘুমায় নাই সারা রাত। বুড়ি উইঠাই কয়,

“মা’রে, সাপটা কো! গেছে? গেছে? এইটা আমি কি করলাম! হায় হায় হায়! সোনার লোভে মাইয়ার এতো বড় সর্বনাশ করলাম! হায় হায় হায়! এইটা তো একটা কথাকওইন্না সাপ! নিশ্চয়ই কোন অপদেবতা! এইটা আমি কী করলাম!..”

ভয়ে ভয়ে মায়-ঝিয়ে ঘরের দিকে যায়। বুড়ি একটা লাঠি কুড়াইয়া হাত লয়, তখন ঘরের থিকা অজগরে কয়, “বুড়ি কালকে কিন্তু তোর মাইয়ার লগে আমার বিয়া হইছে, সাবধান কইয়া দিলাম! আমারে কথা দিসস, কথার বরখেলাপ করলে তোরেও খামু তোর মাইয়ারেও খামু।”

সাপের মুখে কথা শুইনা আবারো তাব্ধা খায় মায়ে-ঝিয়ে। এইটা তো যাদু! কিছুই বুঝতে পারে না কেউ। সাপে আবারো কয়, “ক্ষুধা লাগসে, আমি খাইতে গেলাম, রাত্রে আমু আবার” – কইয়া সরসর শব্দ কইরা বাইরাইয়া যায়গা।

এই কইরাই দিন যায়। বুড়ি সারাদিন হা-হুতাশ করে। দুলি চুপচাপ ঘরেই বইসা থাকে। বুড়ি কাইন্দা হাঁপাইয়া গেলে কিছু রান্ধে, নিজের আর মাইয়ার মুখে কিছু গোঁজার চেষ্টা করে। রাত্র হইলেই দুইজনের ভয় বাড়তে থাকে। দুলি বিছানায় পইড়া থাকে মরার মত, কিন্তু শব্দ পায়। সরসর শব্দ কইরা ঘরে ঢুকে অজগরে। দুলিরে ডাকে হিসহিস কইরা, ‘বউ ঘুমাইলি, অ বউ, বউ!’ দুলি সাড়া দেয় না। একসময় মাটিতেই শুইয়া থাকে সাপটা। দুলি একবার তাকাইয়াও দেখে না।

কিন্তু দুলির বিয়ার খবর চাপা থাকে না। কেমনে কেমনে জানি গ্রামের সবাই জাইনা যায়। বুড়ির বাড়ির আশে পাশে উঁকি ঝুঁকি মারে সবাই। বুড়ি সেইদিনের পর থিকা সবাইরে লুকাইয়া চলে। সবাই কয়, ‘কী বুড়ি মাইয়া বিয়া দিসস বলে? কাউরে কইলিও না..’ বুড়ি কয়, ‘অমা, বিয়া দিমু আর তোরা জানবি না?’ মাঝেমাঝে ভাবে সব কইয়া দেয়। তারপর লোকজন আইনা পিটায়া মারে সাপটারে। কিন্তু সাহসে কলায় না। যদি দেও হয়? দেওএর লগে মাইনষে পারে?

কিন্তু মানুষের সন্দেহ যায় না, বুড়ির বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করে। বুড়ির বাড়িতে ঢুইকা দেখতে চায়।

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!