বাংলোর রহস্য–ভূতের গল্প

নির্জন বাংলোটায় ঢুকেই শির শির করে উঠল আসিফের শরীর ।পুরনো পুরনো একটা গন্ধ সর্বত্র ।
চারদিকে দেখলেই বুঝা যায় বহুদিনের পড়ে থাকা বাংলোটা পরিষ্কার করার কোন ত্রুটি করেনি কর্মচারিরা ।তাও এর গায়ে  পুরনো পুরনো ভাবটা  থেকেই গেছে ।
আসিফ ।ছোট্ট একটা কাজে এসেছে এখানে ।সপ্তাহখানেক অবশ্য তাকে থাকতে হবে । কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া গেছে এলাকাটায় ।খুরাখুরির কাজ চলছে ।সেগুলোর তদারকির জন্যই তাঁর এখানে আসা ।

বাংলোটা একেবারে খুব একটা বড় নয় আবার ছোটও নয় ।মাঝামাঝি আকারের ।একটা হলরুম  ।পুরো নিচতলা জুড়ে হলরুম ।একপাশে একটা কাঠের সিঁড়ি উঠে গেছে দু তলায় ।
মালপত্র নিয়ে আগে আগে চলেছে রোগা পটকা বৃদ্ধ একটা লোক ।বাংলোর কেয়ারটেকার ।উদ্ভুট একটা নাম লোকটার ।হাবিরা ।উপজাতি নাম ।
ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে উপরে উঠে গেল হাবিরা ।সম্বিত্ পেয়ে ওঁর অনুসরন করল আসিফ ।
দুতলা নিচতলার তুলনায় একটু ছোট ।একটা বেডরুম সাথে বাথরুম ।সাথে লাগোয়া ল্যান ।
মালপত্র ঘরে রেখে নিচে নেমে গেল হাবিরা ।
ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে এসে ঢুকল আসিফ ।আধুনিক ষ্টাইলের বাথরুম । সম্ভবত পরবর্তিতে তৈরী করা হয়েছে এটা ।
***
: আচ্ছা হাবিরা ! শুনেছি বাংলোতে নাকি ভুত আছে ?
খেতে প্রশ্লটা করল আসিফ ।এখানে আসার আগে এই কথাটা তাকে অনেকবার শুনতে হয়েছে ।
বাবা ,মা এমনি ওর ছোট বোন তিতলীও আসার সময় এ ব্যাপারে ওকে জানিয়েছে ।
ভুতে অবশ্য আসিফের বিশ্বাস নেই ।
: কেউ কেউ তো বলে স্যার !
পাশে লন্ঠন না নামিয়ে রাখল হাবিরা ।
উপজাতি হলেও লোকটা তো দেখছি বেশ ভালই বাংলা বলতে পারে ।ভাবল আসিফ ।
: লোকে বলে বলতে তুমি কখনও দেখোনি ?
একটু অবাক দেখাল আসিফের মুখ ।
: ঠিক দেখিও নি যে তাও নয় স্যার ।তবে এসবে আমার বিশ্বাস নেই ।কিন্তু তাও একটা ঘটনা আমাকে  খুবই অবাক করেছে ..

বড় বড় শব্দগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলতে লাগল হাবিরা ।
: কি ঘটনা ?
প্লেট থেকে হাত তুলে রাখল আসিফ ।একটা ইন্টারেস্টিং ভৌতিক গল্প শুনার জন্য সজাগ হয়ে উঠল ওর স্নায়ু ।

: তেমন কিছু না স্যার ।তবে ..
: ভৌতিক কিছু নাকি ?
: ঠিক ভৌতিক কিনা বলতে পারবনা স্যার ।তবে বেশ রহস্যময় বলে মনে হয়েছে আমার ।
: রহস্য !
না চাইতেও শব্দটা বেরিয়ে এল ওর মুখ থেকে ।
: জ্বি স্যার ।সেটা প্রায় বছর দেড়েক আগের কথা ।সবেমাত্র বাংলো মেরামতের কাজ চলছে ।
আমিও তখন চাকরিতে নতুন মাত্র যোগ দিয়েছি ..
বলতে লাগল হাবিরা ।নিশ্চুম রাত ।বিরান ভুমির বাংলোটায় লন্ঠনের মৃধু মৃধু আলোয় পরিবেশটা অন্যরকম হয়ে উঠেছে তখন ।
: সময়টা ছিল বর্ষাকাল ।এই আকাশ ফর্সা এই মেঘাচ্ছন্ন ।
আমি অবশ্য রাতের বেলায় তখন বাংলোতে থাকতাম না ।
থাকতাম দূরের একটা হোটেলে ।কিন্তু একদিন বেশকিছু দামি জিনিসপত্র এখানে আনার কারনে আমাকে এখানে পাহাড়ার জন্য থেকে যেতে হল ।
৮টার দিকে আমাকে চাবি বুঝিয়ে  দিয়ে কর্মচারীরা বিদায় নিল ।
সদর দরজা বন্ধ করে যেই ঘুরে দাড়িয়েছি অমনি একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল আমার ।
মনে হল কেউ উপর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।

: ইন্টারেস্টিং ! ভয় ভয় নিশ্চয় লাগছিল তোমার ?
নাক গলানোর মত করে বলল আসিফ ।
: ভয় ভয় অবশ্য লাগছিল তবে পাত্তা দিলাম না ।
হলরুমের এক কোনায় বিছানা করে শুয়ে পড়লাম ।ঠিক সেসময় শুরু হল দমকা বাতাস আর বৃষ্টি ।কখন যে চোখটা বুঝে এসেছে বুঝতেই পারিনি ।
মাঝরাতে হঠাত্ ঘুম ভেঙ্গে গেল ।পাশে থাকা লন্ডনটাও দেখলাম নিভে গেছে ।বৃষ্টি ততখনে থেমে গেছে ।থেমে গেছে বাতাসও ।বাইরে অজ্ঞাত কিছু প্রাণীর ছোটখাট হাক ডাক ছাড়া একেবারেই নিশ্চুপ ।
হঠাত্ করেই আমার মনে হল কেউ সিড়িতে হাটছে ।ক্যাচ ক্যাচ আওয়াজ ।স্পষ্ট শুনলাম ।একবার দু বার অনেকবার ।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল আমার ।এতরাতে সিঁড়িতে কে হাঁটে ।চোর নয়তো ?
কেন জানি নিজের যুক্তি নিজের কাছেই বিঃশ্বাস হলনা আমার ।

একটু থামল হাবিরা ।আসিফ হাত ধুঁয়ে নিচে মেজেতে এসে হাবিরার মুখোমুখি বসল ।

: তারপর !
: আমি সাহস করে উঠে বসলাম ।ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম সিঁড়ির দিকে ।একটা ছায়ামূর্তির মত কিছু একটা চোখে পড়ল ।সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস করলামঃ কে ? কে ওখানে ।
ছায়ামূর্তিটা একটুও নড়লনা ।কোন উত্তরও করলনা ।
একটা ভয় ঢুকে গেল আমার মনে ।চোর নয় এটা ।চোর হলে দাড়িয়ে থাকত না ।পালিয়ে যেত ।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলামঃ কে ? কে আপনি ?
কিছুটা ভয়মিশ্রিত গলা এবার ।
উত্তর এলঃ আমি ।
ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল আমার মেরুদন্ড দিয়ে ।
অনেক কষ্টে জিজ্ঞেস করলামঃ আমি আমিকে ?
হঠাত্ একটা তীব্র আলোকছটা আমার চোখ ধাধীয়ে চলে গেল ।এলিয়ে পড়লাম আমি ।

: ও ! ইশ লন্ঠনের আলোটা থাকলেই তুমি ভুতের মুখটা দেখতে পেতে ।
অবিশ্বাস আর রসিকথার সুরে বলল আসিফ ।

: বিশ্বাস করেন আর নাই করেন স্যার ঘটনা কিন্তু সত্যি !
: তারপর কি হল ?
বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন এড়িয়ে গেল ও ।
: সকালে জেগে উঠলাম আমি ।তবে একটা দৃশ্য দেখে চমকে উঠলাম আমি !

: কি দৃশ্য !
একটু কৌতুহল অনুভব করল আসিফ ।
: দেখলাম একটা গলা কাটা লাশ পড়ে আছে মেঝেতে ।
: ও !
প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে আসিফের !
: একটু একটু করে লাশটার কাছে এগিয়ে গেলাম ।আর জানেন স্যার তখন কি দেখলাম ?
: কি ?
: এইযে ?
আসিফ বিস্মরিত চোখে হাবিরার দিকে তাকিয়ে রইল ।লোকটার মাথাটা ভয়ঙ্কর ভাবে গলা থেকে কেঁটে আলাদা করা ।কাঁটা মাথাটা সে বলের মত লুফালুফি করছে !

দুঃখিত!