বন্ধু

হ্যালো.. নাহিদ !!
-হ্যালো.. কে বলছেন ?
-শালা আমারেই ভুইলা গেলি !
-তুই কল্লোল না !
-হুম ভুলেই তো গেছিস..
-আরে গত মাসে ফোনটা হারিয়ে গেসে সাথে সিমটাও তাই কারো খবরই নিতে পারি নাই..
-কই তুই ?
-আগের বাসাতেই..
-ঐ যে মালিবাগের ঐটাতেই !
-হুম তুই কি ঢাকায় নাকি ?
-হ আসলাম আর কি ! দোস্ত একটা হেল্প কর..
-মাসের শেষে কারো কাছেই টাকা থাকে না রে আমিও খালি..
-শালা খালি টাকার চিন্তা। টাকা লাগলে বলিস কিছু আছে …
-তো ?
-নতুন ল্যাপটপ কিনছি। মুভি লাগবো তোর কাছে না শাহরুখ খানের কালেকশন আছে ?
-হ আছে তো। কি ল্যাপটপ কিনলি ? ট্রিট দিবি কবে ?
-আয় মগবাজার রেললাইনের পাশে যে দেয়ালটায় বসতাম, ঐখানে আয়। দেখবে নে…
-তুই বাসায় আয় না..
-আরে নাহ তোর ল্যাপটপটা নিয়া আসিস..
-আচ্ছা
-বিকালে থাকিস
-দোস্ত টাকা আনিস কিছু
-কতো
-কতো আছে ?
-পাঁচ হাজারে চলবে ?
-হবে মানে! হয়ে বেশি তুই আনিস আর সামনের সাত তারিখেই পেয়ে যাবি…
-আরে ব্যাপার না
-থ্যাংকস দোস্ত…
আধঘন্টা বসে থাকার পর কল্লোল এলো। শীতকালের বিকেলগুলো এমনিই ছোট তারওপর এতোক্ষণ লেট ! যাক প্রায় বছরখানেক পর দেখা তাই ঝগড়ায় গেলো না নাহিদ….
-দেখ কোনটা কোনটা নিবি!
-ওহ দোস্ত টাকাটা রাখ। পরে আবার ভুলে যাবো…
-থ্যাংকস দোস্ত
-সাত তারিখ যেন পাই। এইডাও আরেকজনের ধারের টাকা
-গ্যারান্টিড
-হুম..
ওরা যে জায়গাটায় বসেছে ওটা একটা অধভাঙা দেয়াল। রেললাইনের বস্তিগুলো থেকে একটু দূরে। মোটামুটি জনশূন্যই বলা চলে। তারওপর সন্ধ্যা হয়ে আসায় লোকজন আরো কম
-কল্লোল দোস্ত অন্ধকার হয়ে আসছে..
-হুম চল উঠি এলাকাটা ভালো না..
-দাড়া সিগারেটটা শেষ করে যাই
-শালা লাস্ট টানটা দিতে…
হঠাত্‍ আশপাশ থেকে পাঁচ ছয়জন ষন্ডামার্কা লোক এসে ওদের ঘিরে ধরলো। একজনের হাতে ছুরি আর বাকিদের হাতে হকিস্টিক। চেহারায় একটা নির্দয় ভাব স্পষ্ট বুঝতে পারলো কল্লোল
-ঐ খা*কির পোলারা..মরতে না চাইলে সব দিয়া দে..
-দোস্ত নাহিদ দিয়া দেই
-খাড়া দেখতেছি দ্যাখেন ভাই আপনারা কিন্তু …
-ঐ শালা বেশি কথা কয়… মার ওরে..
ধুপ… আহ মা গো !
-ভাই ভাই ওরে ছেড়ে দিন। নিয়ে যান সবকিছু। ঐ..ই যা আছে সব ব্যাগে নে ..
মগবাজারের একটা ক্লিনিকে বসে আসে ওরা দুজন। নাহিদের কপালে আর হাতে ব্যান্ডেজ।
-দোস্ত শুধু শুধু ঝামেলা করতে গেলি। সব তো গেলোই খালি খালি মারটাও খাইলি
-আমি শেষ রে। ল্যাপটপ ফোন তোর টাকা সবই নিয়া গেছে রে
-কাকে কি বলোস ! আমার নতুন ল্যাপটপ ফোন গেছে দোস্ত টাকাটা কিন্তু সাত তারিখ লাগবো
-দেখি রে…
ফার্মগেটের নোংরা একটা হোটেলে বসে আছে সেই লোকগুলো। তাদের সাথে যোগ হয়েছে আরো একজন তাদের লিডার কল্লোল শিকদার…ল
-হাহা হা ওস্তাদ হালার চেহারাডা দেখছিলেন !
-হুম কতো উঠছে টাকা ?
-পাঁচ হাজার তিনশ টাকা একটা নুকিয়া সেট আর ল্যাপটপটা।
-ল্যাপটপ আর ফোনটা বিক্রির ব্যবস্থা কর আর টাকাটা দে
-ওস্তাদ আপনের বন্ধুডা কিন্তু আসলেই একটা জিনিস ! কৈ থিকা যে জুটাইছিলেন এগুলারে
-হারামজাদা এগুলার জন্যই দুই বেলা খাইতে পারোস
-যাই কন ওস্তাদ
-যা বাড়ি যা আর শোন সামনের সপ্তাহে আরেকটা কাজ আছে রেডি থাকিস…
কাল সকালে একবার নাহিদকে দেখতে যাবে কল্লোল। সেই ছুঁতোয় টাকার কথাটা আরেকবার মনে করিয়ে দিবে…

দুঃখিত!