বনু শাইবান গোত্রকে দাওয়াত প্রদান – শেষ পর্ব

বনু শাইবান গোত্রকে দাওয়াত প্রদান – ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

অবশ্য আরবের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অপরাধ মার্জনা করা হয় এবং তাহার ওজরও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পারস্যদেশের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অপরাধীর অপরাধ মার্জনা করা হয় না বা তাহার কোন ওজরও গ্রহণ করা হয় না। অতএব আপনি যদি চান যে, আরবের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আমরা আপনাকে সাহায্য করি তবে আমরা তাহা করিতে প্রস্তুত আছি। (কিন্তু পারস্যের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আমরা আপনার সাহায্য করিতে পারিব না।)

রাসূল (সাঃ) বলিলেন, তোমার জবাব খারাপ হয় নাই, যেহেতু তুমি সত্য কথা পরিষ্কারভাবে বলিয়া দিয়াছি। তবে আল্লাহর দ্বীন লইয়া সেই ব্যক্তিই দাঁড়াইতে পারিবে যে উহাকে সর্বদিক দিয়া হেফাজত করিতে প্রস্তুত হইবে। অতঃপর রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর হাত ধরিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন।

তারপর আমরা আওস ও খাজরাজের মজলিসে গেলাম। আমরা উক্ত মজলিস হইতে উঠিবার পূর্বেই তাহারা রাসূল (সাঃ)-এর হাতে (ইসলামের উপর) বাইআত হইলেন। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, এই গোত্রদ্বয়ের লোকেরা ছিলেন অতিশয় সত্যবাদী ও অত্যন্ত ধৈর্যশীল। রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাইন।

অপর এক রেওয়াতে আছে, রাসূল (সাঃ) বলিলেন, তবে আল্লাহর দ্বীন লইয়া সেই ব্যক্তিই দাঁড়াইতে পারিবে যে উহাকে সর্বদিক দিয়া হেফাজত করিতে প্রস্তুত। তারপর তিনি বলিলেন, আচ্ছা তোমরা বল, যদি কিছুদিনের মধ্যেই আল্লাহ তায়ালা তাহাদের (অর্থাৎ পারস্যেদের) দেশ

ও তাহাদের ধনসম্পদ তোমাদিগকে দান করেন এবং তাহাদের মেয়েদিগকে তোমাদের স্ত্রী ও দাসী বানাইয়া দেন, তবে কি তোমরা আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনা করিতে প্রস্তুত আছ? নো’মান ইবনে শারীক বলিল, হে কোরাইশী ভাই, আল্লাহর পানাহ! আপনার জন্য ইহাও কি সম্ভবপর হইবে! অতঃপর রাসূল (সাঃ) এই আয়াত তিলাওয়াত করিলেন- يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45)

وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا (46) (সূরা আহযাব আয়াতঃ ৪৫-৪৬)

অর্থঃ নিঃসন্দেহে আমি আপনাকে এমন মর্যাদাশালীরূপে প্রেরণ করিয়াছি যে, আপনি সাক্ষী হইবেন; আর আপনি সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী এবং আল্লাহর দিকে আহবানকারী তাঁহারই আদেশে এবং একটি দীপ্তিমান প্রদীপ।

অতঃপর রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর হাত ধরিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূল (সাঃ) আমাদের প্রতি চাহিয়া বলিলেন, হে আলী, জাহিলিয়াতের যুগেও আরবদের কি আখলাক! কতইনা উচ্চ আখলাকের অধিকারী তাহারা! এই উচ্চ আখলাকের দরুনই তাহারা দুনিয়ার যিন্দিগীতে একে অপরের (জান-মাল, আব্রু-ইজ্জতের) হেফাযত করিয়া থাকে।

হযরত আলী (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা আওস ও খাযরাজের মজলিসে উপস্থিত হইলাম। আমরা উক্ত মজলিসে হইতে উঠিবার পূর্বেই তাহারা নবী কারীম (সাঃ)-এর হাতে (ইসলামের উপর) বাইআত হইয়া গেল। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, তাহারা অতিশয় সত্যবাদী ও অত্যন্ত ধৈর্যশীল ছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর আরবদের বংশপরিচয় সম্পর্কিত এরূপ গভীর

জ্ঞানের দরুন রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন। এই ঘটনার কিছুদিন পরই রাসূল (সাঃ) একদিন সাহাবা (রাঃ)দের নিকট আসিয়া বলিলেন, তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা কর; কারণ বনু রাবিয়াহ গোত্র আজ পারস্যের উপর বিজয় লাভ করিয়াছে। তাহারা পারস্যদের বাদশাহগণকে কতল করিয়া দিয়াছে এবং তাহাদের সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করিয়া দিয়াছে। আর এই বনু রাবিয়াহ আমার কারণেই সাহায্যপ্রাপ্ত হইয়াছে।

অপর এক রেওয়াতে বর্ণিত হইয়াছে যে, বনু রাবিয়াহ যখন ফোরাত নদীর নিকটবর্তী কুরাকির নামক স্থানে পারস্য সৈন্যেদের মুখামুখী হইয়াছিল তখন তাঁহার মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নামকে নিজেদের মধ্যে পরিচয় সংকেত হিসাবে সাব্যস্ত করিয়াছিল। এই কারণেই তাহারা পারস্যদের বিরুদ্ধে সাহায্যপ্রাপ্ত হইয়াছিল এবং যুদ্ধজয়ের পর তাহারা সকলেই ইসলাম গ্রহণ করিয়াছিল।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

বনু শাইবান গোত্রকে দাওয়াত প্রদান – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।