বনি ইসরাইলদের চল্লিশ বছর তীহ ময়দানে অবস্থান—পর্ব ২

বনি ইসরাইলদের চল্লিশ বছর তীহ ময়দানে অবস্থান—পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এর মধ্যে সিরিয়া সফরকারি বারজন নেতার মধ্যে দুইজন নেতা ইউসা ও কালুত ছাড়া বাকি দশ জনে নিজ নিজ ওয়াদা ভঙ্গ করে গোত্রের নিকট সিরিয়ার বিপদের খবর জানিয়ে দিলেন। তখন বনি ইসরাইল প্রায় সকল মানুষের মনে ভীষণ ভৃতির সৃষ্টি  হল। তারা নবীর সাথে সিরিয়া যেতে অস্বীকার করল। হযরত মুছা (আঃ) এ খবর জানতে পেরে তাদের বার বার আল্লাহ তায়ালার  বিজয়ের অঙ্গীকার শুনাতে লাগলেন। বিশেষ করে ইউসা ও কালুত সর্বত্র ঘুরে ঘুরে মানুষ কে অভয় দিতে লাগলেন। সারাদিন পথ চলার পরে রাত্রির বিরতির জন্য নবী সকল কে নিয়ে এক পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান নিলেন। রাত্রি বেলা বনি ইসরাইল এর লোকেরা সিরিয়া যাত্রা করার বদলে মিশর অভিমুকে রওয়ানা করল। গভীর রাত পর্যন্ত হেটে তারা তিয়া নামক এক স্থানে উপস্থিত হল। তিয়া নামক যায়গাটি ছিল ফিলিস্তিনি, জর্ডান, ও মিশরের মাঝখানে অবস্থিত। এর দের্ঘ্য ছিল একশ কিলোমিটার  এবং প্রস্থ ছিল ৬০ কিলোমিটার। বনি ইসরাইলরা এ ময়দানে এসে আর সম্মুখে  অগ্রসর হতে পারল না। কেমন যেন অবস্থা হল। 

যেখান থেকে হাটা আরম্ভ করল কয়েক ঘণ্টা পরে সেখানেই এসে পৌঁছাল। মিশর যাত্রার উদ্দেশ্য তারা দিবারাত্র হাটতে লাগল। কিন্তু ঘুরে ফিরে তারা একই যায়গায় এসে পৌঁছায়। সম্মুখে  পিছনে তারা কোন দিকে যেতে পারে না। শুধু তিয়া ময়দানের  মধ্যে দিবারাত্র ঘুরতে থাকে। অনেকে মনে করল এটা হযরত মুছা (আঃ) এর বদ দোয়ার ফল। অতএব হযরত মুছা (আঃ) এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া কোন উপায় নেই।

হযরত মুছা (আঃ) বনি ইসরাইলদেরকে বাধা প্রদান করে কোন রকমে জেহাদের জন্য সিরিয়া যাত্রায় রাজি করাতে পারল না। অবশেষে তিনি হযরত হারুন (আঃ) ইউসা ও কালুতকে নিয়ে সিরিয়া যাত্রা করলেন।  বাকি সমস্ত লোকেরা মিশর ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্য তিয়া ময়দানে উপস্থিত হল। হযরত মুছা (আঃ) প্রথমে সিরিয়া পৌঁছায়ে প্রথমেই উজ  বিন-ওনকের নিকট গেলেন এবং তাকে বললেন, আমি  আল্লাহর নবী মুছা।  আমি তোমাকে দিনের দাওয়াত দিতে এসেছি। তুমি এখন কলেমা পাঠ করে আল্লাহর উপর ঈমান আন।

 অন্যথায় আমি তোমার সাথে জিহাদ করব।  উজ হযরত মুছা (আঃ) এর কথা শুনে বলল, তুমি সেই নবী যে ফেরাউনের নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছ? তবে আমাকে মারা এত সহজ সাধ্য নয়। তুমি তোমার আল্লাহকে নিয়ে দেশে যাও। আমাকে বিরক্ত কর না। বেশি বাড়া বাড়ি করলে পাহাড় চাপা দিয়ে পিশে মেরে দেব।  হযরত মুছা (আঃ) উজের কথা শুনে নিজ হাতের লাঠির উপর ভর করে পা দিয়ে উঠে লাঠি ঘুরিয়ে তাকে আঘাত করল। এ আঘাত টি মাটি থেকে একশত বিশগজ উপরে লাগে। তাতে উজের হাঁটুর গিয়ে আঘাত পড়ে। উজ এ আঘাতে ভীষণ যন্ত্রণা বোধ করে। এবং অধিক ক্রোধান্বিত হয়ে পার্ত্য এলাকার দিকে দৌঁড় দেয়। অল্প ক্ষনের মধ্যে সে বিশাল পর্বত উপড়িয়ে মাথায় তুলে  হযরত মুছা (আঃ) এর দিকে ফিরে আসতে থাকে। পথি মধ্য আসমান থেকে দুটো বড় পাখি এসে উজের মাথার উপরের পর্বতের চূড়ার উপর ঠকর দিয়ে ছিদ্র করতে থাকে।

  পাখির  বিরাট বিরাট ঠোট দ্বারা ক্রমগত আঘাত এর পর আঘাত করতে থাকায় একটু পরে বিরাট এক গর্ত হয়ে উজের মাথা পর্যন্ত এসে যায়। গর্তটি মাথার অতি নিকটবতী হঠাত একটি শব্দ করে পাহাড়টি তার মাথায় পড়ে যায়। তার কাধে এসে পাহাড় টি ঠেকে পড়ে। উজের মাথা চোখ মুখ শবই পর্বতের  মধ্যে চলে যায়। এখন সে আর কিছুই দেখতে পায় না। পর্বত টি মাথার উপর দিয়ে উঠিয়ে ফেলে দেওয়ার জন্য প্রাণ পণ  চেষ্টা করল।

 কিন্তু পর্বতটি এমন ভাবে আটকে গেল যে, বহু  চেষ্টা করে সে পর্বতি উঠাতে পারল না। তখন সে মনে মনে ভাবল এটাকে আর এক পাহাড়ের সাথে আঘাত দিয়ে ভেঙে চুরমার করে ফেলতে হবে। এ ভাবে ভাবনা চিন্তা করে  আসতে  আসতে সে সম্মুখে দিকে অগ্রসর হতে থাকে। হটাত একটি নদির  ভাঙ্গন পাড়ে পা দিতেই সে উপুর হয়ে নদীতে  পড়ে যায়। তখন তার মাথা পর্বতের ভারে পানির মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পা দুটো উপরে উঠে যায়। বহু চেষ্টা চালিয়ে  সে উঠটে পারল না।  প্রাই দুই ঘন্টা সে ওখানে ছটফট করে অবশেষে মৃত্যু বরন করে।

 হযরত মুছা (আঃ) হযরত হারুন (আঃ) কালুত ও ইউসা বহুদুরে বসে উজের অন্তিম অবস্থা  দেখে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে। অতপর তারা সম্মুখ দিকে আর অগ্রসর না হয়ে বনি ইসরাইলদের নিকট চলে আসে। বনি ইসরাইলদের নিকট এসে দেখেন তারা তিয়া ময়দান প্রদক্ষীন করে চলেছে। কেউ এই ময়দানের  বাইরে যেতে পারছে না। হযরত মুছা (আঃ) তাদের কে বললেন, তোমরা দানব আকৃতির যে উজের ভয়ে মিশর ফিরে আসছিলে সে উজ মৃত্যু বরন করেছে। এখন আর তোমাদের ভয় নেই। এখন আমার সাথে সিরিয়া চল। কিন্তু বনি  ইসরাইলরা রাজি হল না। তারা বলল, আমরা দুঃখ কষ্ট ভোগ  করলেও সিরিয়া যাব না।  যদি আমাদের মৃত্যু বরন করতে হয় তাতে আমরা সম্মত আছি। কিন্তু সিরিয়া যেতে রাজি নই। হযরত মুছা (আঃ) তখন আর কি করবে নিরুপায় হয়ে বনি ইসরাইলদের মায়ায় তিনিও সেখানে থেকে গেলেন।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

বনি ইসরাইলদের চল্লিশ বছর তীহ ময়দানে অবস্থান—পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।