বনি ইসরাইলদের চল্লিশ বছর তীহ ময়দানে অবস্থান—পর্ব ১
আল্লাহ তায়ালা হযরত মুছা (আঃ) কে শাম ও সিরিয়া রাজ্য দান করার আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। সে মর্মে আল্লাহ তায়ালা জেহাদে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে আদেশ দিলেন এবং জিহাদে অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে বনি ইসরাইলদের বার গোত্রের বারজন নেতা বাছাই করে সেখানে প্রেরণ করতে বললেন। তারা সেখানে গিয়ে জেহাদের স্থান, অবস্থান ও পরিবেশ সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করবে।
হযরত মুছা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার আদেশ অনুসারে বনি ইসরাইলদের বার গোত্র থেকে বার জন লোক বাছাই করে তাদের কে সিরিয়া প্রেরণ করলেন। সেখানে গিয়ে তারা বিরাটময় লোকের সাথে সাক্ষাত পেল। বিরাট বিরাট ফলমূল দেখল।
যা তারা কোন দিন কল্পনা করতে পারি নি। কথিত আছে তখন সেখানে যে আঙ্গুর উৎপন্ন হত তার এক একটি আঙ্গুর মিশর এর দশ জন এর খাদ্যর জন্য যথেষ্ট ছিল। উহার অজন ছিল প্রায় কয়েক মন। একটি আনারসের খোসার ভিতরে মিশরের দশ জন লোক বসবাস করতে পারত। একটি কলার ওজন ছিল আট নয় মন। তা দশ জনের কম লোকে উঠাতে পারত না। সেখানে মানুষ ও ছিল অত্যাধিক দীর্ঘকায়। তার মধ্যে আওজ বিন ওনক নামের এক ব্যক্তি ছিল সর্বাধিক লম্বা। সে নাকি ৩০০০ গজ লম্বা ছিল।
সমুদ্রে তার হাটু পরিমাণ পানির বেশি কোথাও দেখা যায়নি। আওজ বিন-ওনক ছিল হযরত আদম (আঃ) এর গৌত্র। সে তিন হাজার পাচশত বছর বেঁচে ছিল। বনি ইসরাইলের বার জন নেতা উজের কাছে গিয়ে তাকে দেখা মাত্র ভয়ে দাতে খিল লেগে গেল। এত দীর্ঘ মানুষ হতে পারে তারা কল্পনা করতে পারি নি। ওজ ওদের কে দেখে জিজ্ঞাসা করল। তোমরা কারা। কি জন্য এসেছ? তখন তারা বলল, আমরা বনি ইসরাইলদের লোক।
আমাদের নবী হযরত মুছা (আঃ) আমাদেরকে এখানকার অবস্থা জানার জন্য প্রেরণ করেছে। আমরা তোমাদের সাথে জেহাদ করার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে আদেশ পেয়েছি। তাই জেহাদের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতেই আমরা এসেছি। তখন উজ তার বিরাট দাত বের করে একটা অট্ট হাসি দিল। অতপর বার জন বনি ইসরাইলেকে নিয়ে পকেটে পুরে নিল। ঐ বার জন বনি ইসরাইল কে নিয়ে উজ বাড়ি চলে গেল। তার স্ত্রীর নিকট গিয়ে তাদের কে পকেট থেকে বের করে মাটিতে রাখে এবং তাদের পিপীলিকার ন্যায় পিশে মারার কথা বলে। তখন তার স্ত্রী বলে এই দূর্বল মানুষ মেরে কোন সুনাম হবে না।
এ কাজে আল্লাহ তায়ালা নারাজ হতে পারেন। তার চেয়ে এদের ছেড়ে দিয়ে সত্বর দেশ ত্যাগ করার কথা বল। উজ তার স্ত্রীর কথা অনুসারে সকল কে ছেড়ে দিল এবং বলল, এখনই এই দেশ ছেড়ে চলে যা। আর কোন দিন যেন এখানে না দেখি। বনি ইসরাইলের বার জন নেতার মধ্যে ইউসা ও কালুত নামের দুই জন ছাড়া সকলে অত্যন্ত ভীত হল। সকলে দ্রুত দৌড়া-দৌড়ী করে দেশে ফিরল। তারা দেশে ফিরে সকলেই একমত হয়েছিল যে, সিরিয়ার প্রকৃত ঘটনা হযরত মুছা (আঃ) ও হযরত হারুন (আঃ) ছাড়া অন্য কার সাথে বলা যাবে না।
এমনিতে তারা জেহাদে যেতে অনিচ্ছুক। তার পরে যদি এই বৃহদাকারের মানুষের কথা তারা অবগত হয় তাহলে কেউ আর এই পথে পা বাড়াবে না। এ সিধান্তের পর তারা পাঁচদিন যাবত বিশ্রাম নিল। তার পরে হযরত মুছা (আঃ) এর নিকট সমস্ত ঘটনা বলল, হযরত মুছা (আঃ) ঘটনা শুনে বিস্মিত হলেন। তবুও আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ তাকে অবশই কার্যকরী করতে হবে। তাই তিনি সকল বনি ইসরাইলকে সিরিয়া যাত্রার নির্দেশ দিলেন। হযরত মুছা (আঃ) এর কথা অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কার নেই। তাই তারা প্রস্তুত হয়ে রওয়ানা করল। বনি ইসরাইলের বারটি গোত্র প্রায় ছয়লক্ষ লোক সিরিয়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করল।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
বনি ইসরাইলদের চল্লিশ বছর তীহ ময়দানে অবস্থান—পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন