বধূমাতা–তারাপদ রায়

সারাদিন অফিসে বিস্তর খাটাখাটির পর সন্ধেবেলায় বিশ্রামের জন্য ঘরে ফিরে তরুণ গৃহকর্তা দেখলেন—সর্বনাশ! বাড়িতে তুলকালাম চলছে। শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়া!

মা পায়ের কাছে একটা পুরোনো সুটকেস নিয়ে বসে আছেন। ছেলেকে দেখেই লাফিয়ে উঠলেন,
— “তুই আমাকে একটা বৃদ্ধাবাসে রেখে আয়, আমি আর তোর বাসায় থাকব না!”

ব্যাপার আজ গুরুতর। অনেক চেষ্টার পর মায়ের কাছ থেকে তরুণটি জানতে পারল, বউ মায়ের কাঁচের ফুলদানি ভেঙে দিয়েছে। মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
— “তিরিশ বছরের পুরোনো বিলিতি ফুলদানি, আমার বিয়েতে রাঙা মামা উপহার দিয়েছিলেন!”

কিন্তু ফুলদানি ভাঙল কী করে?

অনেক চেষ্টা করে যুবকটি জানতে পারল, বউয়ের খুব একটা দোষ নেই।
শাশুড়ি ঠাকরুণ উত্তেজনার মাথায় বউমার দিকে ফুলদানিটা ছুঁড়ে মেরেছিলেন। তরুণী নববধূ মোক্ষম মুহূর্তে লাফিয়ে সরে যাওয়ায় ফুলদানিটা তার গায়ে না লেগে দেওয়ালে লেগে ভেঙে যায়।

ফুলদানি ভাঙার অল্প কিছুদিন পরেই শাশুড়ি ঠাকরুণের মনোবাসনা পূর্ণ হতে চলল।

একদিন দুপুরবেলা—তখন ছেলে অফিসে—কোথাকার এক বৃদ্ধাবাস থেকে কয়েকজন উদ্যোক্তা পাড়ার মধ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরছিলেন আশ্রমের জন্য জিনিসপত্র ও রসদ সংগ্রহ করতে।

বাসায় কড়া নাড়লে দরজা খুলে তাঁদের কথা শোনার পর ভিতরের ঘরে গিয়ে বউমা ঘুমন্ত শাশুড়িকে টেনে আনলেন—বৃদ্ধাবাসে দান করবেন বলে!

সেদিন নাকি বহু কষ্টে পরিত্রাণ পেয়েছিলেন শাশুড়ি ঠাকরুণ।

অতঃপর… অনুনয়ের কণ্ঠে স্বামী বেচারা বলল,
— “দ্যাখো, আমাদের বাড়ির ওই কুকুর-বেড়াল, ভুলো আর হুলো—ওরা দু’জন দু’জগতের জানোয়ার হয়েও কেমন মিলেমিশে সহাবস্থান করছে। তুমি আর মা দু’জনে কি সে ভাবে থাকতে পারো না?”

বউ বলল,
— “তুমি বেড়ালের লেজটা কুকুরের লেজের সঙ্গে গিঁট বেঁধে দাও, তারপর দেখো ভুলো আর হুলো কেমন সহাবস্থান করে!”

[রম্যরচনা ৩৬৫ – তারাপদ রায়]

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!