বংকা স্যারের ব্যঙ্গচিত্র — শৈবাল চক্রবর্তী-চতুর্থ পর্ব

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বলছ কি তুমি? বংকিম-স্যারের মাথার চুল খাড়া হয়ে ওঠে। বলছি কি সাধে। লক্ষণ যে সব মিলে যাচ্ছে। লম্বা দাঁড়ি, পাঁচিলের ওপর বসে ফ্যালফ্যাল করে তাকানো ; রাম রাম।”

লাঠিগাছাটা টেনে নিয়ে উঠে দাঁড়ান রাজেন ভট্টচার্জ, চলি হে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ভূতেদের আবির্ভাবের পক্ষে বড় অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। আর তোমাকেও বলি, বেশি রাত কোরো না। যা হওয়ার সন্ধে সন্ধে হয়ে যাওয়া ভাল। বেশি রাত হলে তাদের ক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে । আপনি বাঁচলে বাপের নাম। দুর্গা দুৰ্গা!

মেজাজ রীতিমতো খারাপ হয়ে যায় বংকুবাবুর। কিন্তু তারপর ক্লাসে ফিরে এসে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে তিনি বোমার মতো ফেটে পড়েন। গোটা ব্ল্যাকবোর্ড জুড়ে তার ব্যঙ্গচিত্র। যেমন গোঁফ, তেমনি চুল, আর খাঁড়া নাক। হাতে বেতটিও গুঁজে দিতে ভুল হয়নি।

‘কে? কে? এ কার কাজ? কে এঁকেছে এ ছবি এমন চেঁচিয়ে ওঠেন বংকুবাবু যে তেঁতুলগাছের মগডাল থেকে দুটো বাদুড় ডানা ঝটপটিয়ে উড়ে যায় কোনদিকে কে জানে!

ক্লাসের নটি ছেলে মুখ নিচু করে ফিকফিক করে হাসে। একজনই কেবল উঠে দাঁড়িয়ে বলে, আমি স্যার ‘

‘দাঁড়া, আজ তোর একদিন কি আমারই একদিন।’ ভোম্বলের আঁকার হাত যেমন ভাল, তেমনি দৌড়াতেও সে মিলখা সিং । বংকিম-স্যার বেত নিয়ে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে একলাফে রাস্তায় নেমে দে ছুট।

ছুটতে ছুটতে একেবারে পুবপাড়া নিজের বাড়ি যাওয়ার কোনো মানে হয় না। বাপ তাহলে সন্দেহ করবে, নিশ্চয় তুই পড়া ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে এসেছিস। চল স্যারের কাছে। তার চেয়ে স্যারের বাড়ির দিকে যাওয়াই ভাল! স্যারের চাকর কেষ্টধনের সঙ্গে ভোম্বলের খাতির আছে। তাকে গিয়ে ধরলে নিশ্চয় সে একটা উপায় বাতলে দেবে। আর এতটা দৌড়ঝাঁপ করার পর স্যারের রাগ নিশ্চয় একটু পড়ে যাবে। তখন হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নিলেই চলবে। সেই সঙ্গে স্যারের দেড়েবুড়োকেও দেখা যাবে। অবশ্য যদি আজ সে হাজির থাকে ভাঙা পাঁচিলের ওপর। ভোম্বল ভূতে বিশ্বাস করে না, ভূতের ভয়ও তার নেই।

এই তো পুবপাড়া এসে গিয়েছে। মস্ত বাগানের মাঝখানে ছোট চালাঘর একটা—স্যারের বাড়ি। বাগানে গাছ যত না, ঝোপ তার চেয়ে বেশি। স্যার একা থাকেন বলে মজুর ডাকিয়ে সাফ-সুরুত করার খোয়াল থাকে না তাঁর।

অনেকটা ছুটে এসে হাঁপিয়ে গিয়েছে ভোম্বল! কেষ্টদা এখন কোথায় কে জানে। বাগানের গেট পেরিয়ে এদিকে-ওদিকে তাকায় ভোম্বল। হঠাৎ ভাঙা পাচিলটার ওপর চোখ পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গায়ে যেন কঁটা দিয়ে ওঠে। ওই তো, পেয়ারা গাছের ডালটা যেখানে পাঁচিলের গম্বুজটা ছুয়েছে সেখানে অন্ধকারে মিশে ও কে বসে? ভোম্বল সঙ্গে সঙ্গে গাবগাছটার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে ভাল করে দেখার জন্যে। ওই তো বুকসমান সাদা দাঁড়ি,পরনে কালো আলখাল্লা। এই তবে স্যারের দেড়েবুড়াঁ? রাজেন জেঠুর ব্রহ্মদৈত্য ? হঠাৎ দেখলে সত্যিই বুকের ভেতর ছাৎ করে ওঠে। অবশ্য ভূতের ঘাড়ে মশা কামড়ালে চাপড় মারে কিনা ভোম্বলের জানা নেই।

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!