ফোরামিক বোরহান…..

আমাদের প্রিয় ফোরামিক বোরহান…..
তিনি একদিন রাস্তায় একা একা হাঁটছিলেন…… কেন জানি তার মনটা অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশী ভাল ছিল ……
একা একা রাস্তায় মনের সুখে গান গাচ্ছেন…….
হ জানি হ জানি
আমি খাব বোরহানি
ছেঁড়ি আমার মাস্তানি
আমি খাব বোরহানি
নাচতে নাচতে আমাদের বোরহান ভাইয়া গান গেয়ে রাস্তায় একা একা…….. চারদিকে সুনসান । তাই না ভেবে গান গাচ্ছে মনে মনে ……..
হঠাৎই বেখেয়ালে রাস্তায় পড়ে থাকা কলার খোসায় পা পিছলে পড়ে গেলেন…..
কষ্ট করে উঠে….. সব দিকে চোখ বুলিয়ে আবারো গানে মনোযোগ
দেখেনি দেখেনি
কেউ আমারে দেখেনি
খাব আজ বোরহানি
কোথায় পাই একটু পানি
ও হৃদয়ের রানী
খাওয়াব আজ বোরহানি……..
অত:পর বোরহান মনে মনে ভাবতে লাগলেন । দেশে এসব কি হচ্ছে । মানুষগুলো দিন দিন এমন উদ্ভট হয়ে যাচ্ছে । কান্ডজ্ঞান হারাচ্ছে । বাঙালীরা এমন হলে দেশ চলব কেমনে । না পারছে বাংলা বানান ঠিক করতে না পারছে বদ স্বভাব পাল্টাতে । এরা ড় আর র এর পার্থক্য বুঝে না,
বুঝে না এরা বুঝে না
বানানের মাহিত্য খুঁজে না….. (গানের সুরে)
আহারে বাঙালী তোমার সদলবলে শিক্ষিত হবা কবে । ণ দিয়ে মন লিখা শুরু করবো এইবার । যাক বাবা, এদের নিয়া আর পারি না । যাই নিজের কামে যাই । আবারো গান গাইতে গাইতে বোরহান রওয়ানা দিলেন….
ও রানী ও রানী
তুমি কোথায় আছ জানি?
খাব আজ বোরহানী
আমি মহাজ্ঞ্যানী
খাওয়াব আজ বোরহানী ।

একটু পরেই এই পথ ধরে অমিত যাচ্ছে ……. তার জীর্ণ শীর্ণ দেহের কথা চিন্তা করতে করতে অস্থির । রাস্তায়, চলা ফেরায় একই ভাবনা …… এমন সময় সে দৈব বাণী শুনতে পেল..
কেউ একজন তাকে প্রশ্ন করছে …..
এত সুন্দর নারী কণ্ঠ কে হে তুমি আমার সাথে করে চলেছ ছলনা
আমি তোমার মনের গহীন সাগরের অতল গহবর হতে শস্য রাণী বলছিলাম
কি জানতে চাও হে রমণী
? তুমি এত শুটকি কেন?
-কাঁচা মাছের চেয়ে শুটকি মাছ বেশীদিন ঠিকে থাকে তাই ।
? তোমার কণ্ঠ এত কর্কশ কেন?
– তোমার মত সুন্দরীদের সাথে সারাদিন ঝগড়া কইরা
? আচ্ছা তোমার বডিটা ধরে যদি মার্বেল পাথর ফ্লোরে আছাড় দেই ? বলতো মেঝে ফাটবে না তুমি ফাটবে?
-মেঝে ফাটবে । কারণ আমি শুটকি…….কিছুই হবে না ।
? এক হাত দিয়ে কি তুমি হাতি উঠাতে পারবে?
-এক হাত দিয়ে হাতি উঠানোর মত হাতি এনে দাও পারব
? কোন জিনিসটি দেখতে ঠিক তোমার মত
-শুটকি
? কোন নারী তোমাকে ভালবাসতে পারে না
-ডিকশনারী
? তুমি নাকি এক সাথে তিনটি নারীর সাথে প্রেম করছ? শুটকি বডি নিয়া কিভাবে সম্ভব
-সবই সম্ভব বাংলাদেশে । আমার বডি শুটকি কিন্তু চাপা শুটকি না । চাপাবাজি করে প্রেম করছি ।
? তিনজনের একজন জানতে পারলে তো তোমার শুটকি বডিটাও ইন্তেকাল ফরমাইবে?
– আরে ব্যাপার না । তিনজনের মধ্যে একজন মাস্তানী…… ইয়া মোটা । সে বলছে তোমারে কেউ কিছুই কইলে আমারে কইও তার জান কবছ করে নিব । অই তো তার ভরসাতেই প্রেম করে চলেছি নিরবধি ।
এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে কখন যে অমিত রাস্তার মাঝে এসে পৌঁছল বুঝতেই পারেনি । পড়ে ধপাস করল আচমকা………. সেখান থেকে উঠতে অনেকখানি সময় লাগল তার । আহারে আমার এমন শুটকি বডি নিয়া এভাবে কলার খোসায় পড়লাম ।
কে কে কে সে । এমন কান্ড ঘটাইল..সে যদি রমনী হইয়া থাকে ।
তাহলে তার সাথে প্রেম করেই ছাড়ব এই কইয়া দিলাম । এই বলে অমিতের প্রস্থান……

পিছন পিছন অমিতকে ডাকতে ডাকতে ফারহানের আগমন সেই রাস্তায় …….
অমিতের কোন সাড়া না পেয়ে ফারু গান ধরছে
কইরব ডান্স কইরব ডান্স
চাই কইরতে একটু রোমান্স
ছুন্দরি রে ছুন্দরি
একটু দেনা চান্স ……..
গান গাইতে গাইতে রাস্তার মাঝে উপস্থিত । সেই আগেকার অবস্থায় । খোসায় পড়ে ফারু মিয়ার অবস্থা তো দেখার মত না ……
কেহে ভাইচা তুমি এমন কাম সাড়িলাইচ
আমার লিকলিকে দেহের বারোটা বাজিয়ে কাম সাইরছ …….
তখন ফারু মনের খেদে……. জোরে জোরে বলতে লাগল……
না না দেশের রাস্তা নিয়া এমন ***ুর বুদুর চইত নো
হেতেরা দেশটারে নিজেগো কইরা হালাইছে ….. আরে দিয়া এই দেশের রাস্তায় ঘাটে রোমান্স হইত নো …….রোমান্সের হাঁকনা ধানে ছংগা কিল্লাই দেয় হেতারা । হেগো কোয়ালে মারি হিছার বাড়ি । কইতরের লাহান জান লইয়া রাস্তাঘাটো চলন যাইব না । আই হাইত্তান্ন হেগো লগে । হাঙ্গাও কইরত্তানো রোমান্স কইরা । পেরেমে হইড়ত্তান্ন আর । খন্নাসের দল….. আঁর রোমান্সের বারটা বাজাই দিল…….. ফারুর প্রস্থান ……………

এবার এক ভাবুক কবি উদাসীন ভাব ভাব এমন ব্যক্তির আগমন ………
কাঁদেতে ঝুলানো ব্যাগ,
মাথায় রুমাল বাঁধা
ক্যামেরাটা গলায় ঝুলিয়ে
খুঁজতে বাইর হইছি রাধা…….
এমন ভাব নিয়ে তিনি রাস্তায় একা একা হেঁটে আসছেন
আর এক উর্বসীর কথা ভাবছেন আর কবিতা মুখে আউড়াচ্ছেন …..
ফুল ঝরে
উর্বসীর উপরে
রূপে ভরা হিয়া….
আমি না করলে তোমায়
কে করিব বিয়া…….
এমন সময় তিনি কলায় ছিলকায় পিছলা খাইয়া……. ওহ কেউ দেখেনি তো……
না কেহই দেখিতে পায়নি আমায়…..
কে হে এই অসভ্য ছোকড়ার দল
এহেন কম্ম সাধন করিয়াছে
কলার ছিলকা এভাবে রাস্তায় পড়িয়া থাকার ফলে উহার উপর পড়িয়া আমার মাজা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে……..
কবিতা ছেড়ে মনের দু:খে গান গাইতে গাইতে সে জায়গা প্রস্থান করিলেন …..
উর্বসীরে উর্বসী
তোরে ভালবাসি
মাজা ভাইঙ্গা গেছে
কেমনে যাব নেচে নেচে
ওরে উর্বসী
তুই আমার মাসি
আস্ত একটা খাসি
দিমু ভালবাসার ফাঁসি
মাজা ব্যথায় মুখে আসে না হাসি
ও জান উর্বশী
তুই বাংলাদেশী
আমায় ছাইড়া
মন কাইড়্যা
গেছস বাংলাদেশে
আমি পাগল বেশে
কলার ছিলকায় গেছি ফেঁসে ।
আর হবো না তোর জন্য উদাসীন
আমি এক সাদা বেসীন……।
(প্রস্থান)

এই পথ ধরে আরেকজনের আগমন ঘটতে চলেছে…….. তিনি হলে বনে জঙ্গলের আরণ্যক…
আরণ্যক পশু প্রেমিক ….. বাঘ, সিংহ, শিয়াল, গরু, কুমিরের খামার আছে তার ।
পশু প্রেমিকের এবারের দায়িত্ব ছিল কোরবানীর গরু কিনতে । অবশ্য কিছু দিন আগে তিনি নিজেই একজনের কাছে কোরবানী হয়ে আছেন …
কোরবানীর গরু কিনে তিনি বাসায় ফিরছিলেন………হঠাত করে গরু দড়ি ছিঁড়ে ……. পশু প্রেমিককে দিল দৌড়ানি……. আহ্হারে সেকি দৌড়….. বাঁচাও বাঁচাও বলে পশু প্রেমিক যাকে পাচ্ছেন তাকেই বলছেন দড়ি ধরেন আমারে বাঁচান । ভাইরে আমি গরুর প্রেমিক……কিন্তু বেচারা গরু প্রেমিকের এহেন অবস্থায় পথচারীরা হাসতে হাসতে নাজেহাল ……. কি আর করা তিনি দৌড়াইতে দৌড়াইতে রাস্তার মাঝে এসে কলার ছিলকায় ধপাস করে পা পিছলাইয়া পড়িয়া গেলেন……… আর ভাবিতে লাগিলেন আহারে এরা মানির মান চিনলো না…..এরা আমার ইমেজের ফটো তুইল্যা দিলো ………
তিনি কবিতার মত করে বলতে লাগলেন ……
শুন হে, জ্ঞানী গুনিরা..
আমি পশু প্রেমিক
আমি বীর
পশু পাখির সামনে আমার উন্নত শির
আমি এক মহান পশু পীর
পশুর দুধে বানাই ক্ষীর
আমি সত্যিই বীর………..

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!