ফেরিওয়ালা বাহরাম-শেষ অংশ

পাঠক! নিশ্চয়ই মনে আছে, আগের পর্বে আমরা ফেরিওয়ালার ছেলে বাহরামকে সাপের রাজার দেওয়া সোলায়মানি আংটির গল্প শুনিয়েছিলাম। আজকের পর্বে সেই গল্পের বাকি অংশ উপস্থাপন করা হলো:

সাপের রাজা হযরত সোলায়মানের আংটিটি বাহরামকে উপহার দিয়েছিলেন। বাহরাম আংটিটি নিয়ে রাজাকে ধন্যবাদ জানায়। শাহজাদা তাকে শহর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বললেন, “এই আংটিটি ডান হাতের মধ্যমায় পরিয়ে বাম হাতটি যখনই আংটির পাথরের ওপর রাখবে, আংটির গোলাম তোমার সামনে হাজির হবে। তুমি যা চাইবে, সে তা তোমার জন্যে নিয়ে আসবে।” এই বলে শাহজাদা গুহায় ফিরে গেলেন।

বাহরাম ভীষণ ক্ষুধার্ত ছিল। সে সোলায়মানি আংটির পাথরের ওপর হাত বুলাতেই আংটির গোলাম এসে হাজির হলো। বাহরাম তাকে বলল, “আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে, আমার জন্যে কিছু পোলাও মিষ্টি আনো।” নিমিষেই সেসব খাবার এসে গেল এবং বাহরাম মজা করে খেলো। খেয়ে দেয়ে বাসায় ফিরে মাকে সব ঘটনা খুলে বলল। মাকে সে আরও বলল, “মাটির এই পুরোনো ছোট্ট ঘরটা ভেঙে একটা প্রাসাদ বানালে কেমন হয়?” মা বললেন, “না, আমার ঘরটা রেখে পাশে তুই তোর জন্যে প্রাসাদ বানাস।” মায়ের অনুমতি পেয়ে বাহরাম আংটির পাথরে ঘঁষা দিলো। আংটির গোলাম এসে হাজির হলো। বাহরাম বলল, “একটা চমৎকার প্রাসাদ বানাও। প্রাসাদে চাকর-বাকর, সাজসজ্জা সব যেন সুন্দর হয়।” চোখের পলকেই সেসব হয়ে গেল। তারপর থেকে বাহরাম রাজকীয় জীবনযাপন করতে লাগল। তবে একটাই কম ছিল, সেটা হলো সুন্দরী একটা বউ। তারও ব্যবস্থা হলো। কীভাবে হলো জানেন?

বাহরাম একদিন উন্নত এক ঘোড়ায় চড়ে রাজপ্রাসাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ তার নজরে পড়ল রাজকুমারীকে। রাজকুমারী প্রাসাদের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাকে দেখেই বাহরামের ভালো লেগে গেল। দ্রুত বাসায় ফিরে গিয়ে মাকে বলল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে। মা রাজপ্রাসাদে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই উজিরের পরামর্শে কঠিন শর্ত দিয়ে বসলেন। বললেন, “আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে সাতটি উটের পিঠ বোঝাই করা রূপা, মেয়ের মাথার মুকুটের জন্যে সাতটি ডায়মন্ড, সাতটি জার ভর্তি খাঁটি স্বর্ণ, মুক্তা দিয়ে বোনা সাতটি গালিচা নিয়ে আসতে হবে।”

মা রাজার শর্ত বাহরামকে বললেন। বাহরাম আংটির গোলামকে দিয়ে সহজেই সেসব শর্ত পূরণ করে সাতদিন সাতরাত ধরে উৎসব করে রাজকন্যাকে বিয়ে করে নিজ প্রাসাদে নিয়ে এলো। কিন্তু পাহাড়ের পেছনেই ছিল তাতারিদের এলাকা। তাতারি শাহজাদা কয়েক বছর আগে থেকেই রাজকন্যাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। তাই এক ফেরিওয়ালার ছেলে রাজকন্যাকে বিয়ে করে নিয়ে যাওয়ায় ভীষণ কষ্ট পেলেন। তিনি এক ধূর্ত বুড়িকে পাঠালেন ফেরিওয়ালার ছেলের ধনী হওয়ার রহস্য আবিষ্কার করার জন্যে। বুড়ি বাহরামের স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলল, তিনি অসহায় এক নিঃসঙ্গ মানুষ। বুড়ির কথা শুনে বাহরামের স্ত্রীর মন গলে গেল। তিনি বুড়িকে বললেন, “তুমি যতদিন খুশি এখানে থাকতে পারো, অসুবিধা নেই।” এভাবেই বুড়ি থেকে গেলেন আর সুযোগ খুঁজতে লাগলেন রহস্য উদঘাটনের।

বুড়ি একদিন বাহরামের স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি জানো তোমার স্বামী এত সম্পদের মালিক হলো কীভাবে?” তিনি বললেন, “না তো।” বুড়ি বললেন, “কেন জানো না, তুমি তো তার স্ত্রী, তোমার অবশ্যই জানা উচিত।” বাহরামের স্ত্রী ভাবলেন, “সত্যিই তো।” সে কারণেই তিনি বাহরামকে একদিন জিজ্ঞেস করলেন। বাহরামও সত্যি ঘটনা বউকে সুন্দরভাবে খুলে বললেন, এমনকি আংটিটি কোথায় রাখেন, তাও দেখিয়ে দিলেন। পরদিন বুড়ি কৌশলে সব জেনে নিলেন এবং তার ক’দিন পরই বুড়ি আংটিটি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে তাতারি শাহজাদার হাতে সঁপে দিলেন।

তাতারি শাহজাদা আংটির পাথরে ঘঁষা দিতেই গোলাম এসে হাজির। শাহজাদা গোলামকে বললেন, “আমি চাই রাজকন্যা হবে আমার স্ত্রী আর ফেরিওয়ালার ছেলের সম্পদ হবে ফেরিওয়ালার মতোই, তার বেশি না।” শাহজাদার হুকুম সাথে সাথেই তামিল হয়ে গেল। বাহরামের প্রাসাদ হাওয়া হয়ে গেল। তার স্ত্রীকে দেখা গেল তাতারি শাহজাদার পাশে। বাহরাম এ সময় মরুভূমিতে তার চাকর-বাকরসহ ঘোড়া দৌড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তার সবকিছু উবে গেল। কোনো কিছুই থাকল না কেবল তার গায়ে জরাজীর্ণ একটা পোশাক ছাড়া। বাহরাম প্রাসাদের দিকে ফিরে গিয়ে দেখলেন, প্রাসাদ বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই। সবকিছু আগের মতো হয়ে গেল। সেই পুরোনো ছোট্ট মাটির ঘর, সেই গরিবি অবস্থা। বাহরাম বুঝতে পারলেন, তার আংটিটি চুরি হয়ে গেছে। সেজন্যে তার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।

মা বললেন, “উড়ে আসা জিনিস এভাবেই হাওয়ায় মিলে যায়। আমার কাছে কিছু টাকা আছে। এগুলো নিয়ে বাজারে যা। তোর বাবা যে কাজ করতেন, সে কাজে আবার লেগে যা। রেশম গুটি কিনে আন।” বাহরাম ভারাক্রান্ত মনে বাজারে গেল ঠিকই, কিন্তু কোনো রেশম গুটির দোকানই খুঁজে পেল না। রাত হয়ে এলে অগত্যা মন খারাপ করে তিনি শহরের পাশেই একটি বিশ্রামাগারের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লেন। সেখানে কোত্থেকে যেন বিড়াল, কুকুর আর সাপ এসে জড়ো হলো। এদের সবাই

মাহির ও পানির দৈত্য

ফেরিওয়ালা বাহরাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *