ফেরাউনকে দ্বীনে হকের প্রতি আহবানের প্রস্তুতি

হযরত মূসা (আ) ও হযরত হারুন (আ) আল্লাহ তাআলার নির্দেশে ফেরাউনের নিকট দ্বীন হকের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু তারা ফেরাউনের যলুমের ভয় করে ছিলেন। তাই তারা আল্লাহ তাআলার সমীপে এ সম্পর্কে নিবেদন করলেন, হে আমাদের রব! ফেরাউন তো যালিম। যখন আমরা তার কাছে উপনিত হয়ে দ্বীনের

দাওয়াত দেব এবং যুক্তি প্রমাণের কথা আসলে আমরা জয়ী হব। কিন্তু তার সাথে আমাদের আলাপের পূর্বে তো সে আমাদের আক্রমণ করবার সম্ভবনা রয়েছে। কেননা, সে তো যালীম, সীমালংঘনকারী। অথবা সে আপনার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবানের পর বর্তমান অবস্থার চেয়েও অধিক অহংকারী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কোন কথা বলেও দিতে পারে। তার অভ্যাস সম্পর্কে আমার যতটুকু জানি তাতে আমরা এরুপ আশংকা করছি।

আল্লাহ তাআলার সান্ত্বনা বাণী শ্রবণের পর দু’ভাই মনোবলের সাথে প্রস্তুত হলেন। তফসীরকারীরা লিখেছেন যে, তাঁরা যখন ফেরাউনের দরবারের যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন,

তখন তাঁদের মা চিন্তা করলেন, ফেরাউন মিসরের বাদশাহ সকল ক্ষমতার অধিকারী। অধিকন্তু সে জালীম। নিজকে তব বলে দাবী করে। এমতাবস্থায় তার বিরুদ্ধাচারণ করার অর্থ বিপদকে ডেকে আনা। এ অবস্থায় ফেরাউন তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে হলেও তাঁদেরকে ধ্বংস করতে চাইবে। কাজেই তাঁদের ফেরাউনের দরবারে না যাওয়াই মঙ্গল। তাই তিনি পুত্রদ্বকে ফেরাউনের দরবারে যেতে নিষেধ করলেন। তাঁরা বললেন, আল্লাহ তাআলা সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পালন করতেই হবে। এটা কিছুতেই অপেক্ষা করা যাবে না। তাঁরা মাতাকে বুঝালেন আল্লাহ তাআলা তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। অবশেষে তাঁদের মাতা তাঁদেরকে ফেরাউনের দরবারে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করলেন।

তুর পাহাড়ে পাদদেশে মূসা (আ) আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে তার ভাই হযরত হারুনকে তার দায়িত্বে শরীক করে দেয়ার জন্য আবেদন করেন। আল্লাহ পাক তার আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন। আল্লাহ পাক মূসা (আ) -কে বলেছিলেন তিনি হযরত হারুন (আ) এর মাধ্যমে তার হাতকে সুদৃঢ় করে দিবেন। অতঃপর তাঁকে এও বলেন যে, তোমার সকল আবেদনই মঞ্জুর করা হয়েছে। এমতাবস্থায় যে কোন পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভয়শূন্য থাকাই একজন নবীর জন্য উচিত। কিন্তু আল্লাহ তাআলার এতসব ওয়াদার পরও পুনরায় ভাই হারুনের সাথে স্বীয় ভয় আশংকা প্রকাশ করা কিভাবে ঠিক হল? দ্বিতীয়বার তার ভয় ও আশংকা করা সম্ভবতঃ এ জন্য ছিল যে,

আল্লাহ তাআলার তুর পর্বতে হযরত মূসা (আ) এর কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হযরত মূসা (আ) কে তিনি বিজয়ী করবেন এবং ফেরাউনের যুক্তিতর্কের বিজয় না অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে বিজয় তা আল্লাহপাকের ওয়াদায় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল না। অবশ্য হযরত মূসা (আ) একে যুক্তিতর্কের বিজয় বলেই ধারণা করছিলেন। ফলে যুক্তিতর্ক পর্যন্ত উপনিত হওয়ার পূর্বে তাঁকে আক্রমনের আশংকা তার রয়েই গিয়েছিল। আর আক্রমণের এ আশংকা হতে নিরাপত্তা প্রদানের কথা পূর্বে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

তদপুরি মানুষ মাত্রই এমন সকল বিষয়কে ভয় করে থাকে যা মানুষের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে থাকে। এসব বিষয় যদি সামনে আসে তবে মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চার হওয়াটাই মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। নবীও এ থেকে মুক্ত নন। এমন কি তাঁদের প্রতি আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত ওয়াদার উপর তাঁদের পরিপূর্ণ ঈমান ও একীন থাকার পরও তাঁদের মধ্যে এ ধরণের ভয় জন্ম হয়ে থাকে। হজরত মূসা (আ) এর লাঠি যখন সর্পে পরিণত হয়ে যায় তখন তিনি এ সর্প ধরতে ভয় করেছিলেন অথচ তারও জানা ছিলনা যে সর্পটি তারই লাঠির দ্বিতীয় রুপ। এমনকি আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলেছিলেন, আপনি ভয় করবেন না। আর আল্লাহ তাআলা তা সুসংবাদ প্রদানের মাধ্যমে তা দূর করতে থাকেন। এ ধরনের ভয়ের সৃষ্টি হওয়া ঈমানের পরিস্থি নয়।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।