একা কুলীন ব্রাক্ষণ। বড়ই গরিব। কোনোরকমে দিন চলিয়া যাই। বর্ষাকালে সাত মেয়ের সাত জামাই আসিয়া বসিয়া আছে।
তাঁহার বাড়িতে। বেচারি শ্বশুর আজ বিক্রি করে বউ-এর গয়না, কাল বিক্রি করে পিতলের কলসী।
যা মূল্য পায় তাই দিয়া জামাইদিগকে খাওয়ায়।আষাঢ় মাসের ঘন বর্ষার দিন। দুধে-মাছে খাইয়া জামাইরা আর ফিরিবার নামও করে না।
পাড়ার একজন লোক, গরীব ব্রাক্ষণের অবস্তা দেখিয়া বড়ই দুঃখিত হইল। সে আসিয়া শ্বশুরকে বলিল,
“আপনার জামাইরা যে আজ দশ-বার দিন ধরিয়া বসিয়া বসিয়া খাইতেছে, তাদের বাড়ি চলিয়া যাইতে বলেন না কেন?”
শ্বশুর বলিল,“তাহা যদি করি তবে জামাইরা রাগিয়া মাগিয়া বাড়ি যাইয়া আমার মেয়েদের কষ্ট দিবে।”
সেই জন্যই তো তাহাদিগকে এতটুকু অযত্ন করিতে সাহস পাই না।
তখন সেই লোকটি শ্বশুরের কানে কানে একটি উপদেশ দিয়া গেল। পরদিন জামাইরদের খাইবার সময় পাতে ঘি পড়িল না।
তাহা দেখিয়া হরি নামে এক জামাই রাগিয়া মাগিয়া অস্থির।সে ভাতের থালা ধাক্কা দিয়া ফেলিয়া দিয়া বলিয়া উঠিল, “কি-আজ আমাদের থালায় ঘি পড়িল না, ঘি না খাওয়াইয়া শ্বশুর আমাদিগকে অপমান করিলেন।
এমন শ্বশুর বাড়ি কে থাকে?” এই বলিয়া সে গাটিট-বোকচা লইয়া শ্বশুরবাড়ি হইতে চলিয়া গেল।
পরদিন জামাইদের খাইবার সময় পাতে মাংস পড়িল না। মাধব নামের জামাই ভাতের থালা ফেলিয়া দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল।
“কি-শ্বশুর বাড়ি আসিয়াছি বলিয়া অপমানিত হইব? কাল খাইবার সময় ঘি দিল না,আজ আবার মাংস দিল না।
এমন শ্বশুর বাড়ি নাই থাকিলাম।”এই বলিয়া সে ছাতি লাঠি বগলে করিয়া বাড়ি চলিয়া গেল।
পরদিন খাইবার সময় মাছ দেওয়া হইল না। সে দিন রাগিয়া মাগিয়া মধু নামের জামাই চলিয়া গেল। তারপর দিন খাইবার সময় মিষ্টান্ন দেওয়া হইল না। উহাতে অপমান বোধ করিয়া যাদব নামের জামাই চলিয়া গেল। অপর দিন পাতে ব্যঞ্জন পড়িল না।
অক্ষয় নামের জামাই রাগিয়া আগুন হইয়া চলিয়া গেল। বাকী দুই জামাই শ্যাম আর ধনঞ্জয় তবু পড়িয়া রহিল।
বাড়িতে গেলে ভাতও তো জুটিবে না।না দিয়াছে তরকারি না দিয়াছে ঘি। এখানে নুন দিয়াও তো পেট ভরিয়া ভাত খাওয়া যাইবে!
পরদিন যখন খাইবার সময় নুন দেওয়া হইল না, বিনা নুনে ভাত খাইতে খাইতে থু-থু করিয়া শ্যাম নামের জামাই চাদর গলায় দিয়া বাড়ি চলিয়া গেল।
কিন্তু ধনঞ্জয় আর যাই না। শ্বশুর না দিয়াছে নুন,পেট ভরিয়া ভাত তো দিবে,।
বাড়িতে যাইয়া ভাতও তো জুটিবেনা। আর শ্বশুর বাড়িতে টিনের ঘর, ঝড়-বৃষ্টিতে জল পড়ে না।
বাড়িতে খড়ের ঘর!ছাউনি খসিয়া পড়িয়াছে। এতটুকু বৃষ্টি পড়িলেই মেঝেয় হাটুখানেক জল। শ্বশুর বাড়িতে আরাম করিয়া তো রাতে ঘুমান যায়।
পরদিন সেই লোকটি আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল,“আমার পরামর্শ-মতো কাজ করিয়া ফল পাইয়াছ তো?” শ্বশুর বলিল “আপনার পরামর্শমতো কাজ করায় সকল জামাই-ই একে একে চলিয়া গিয়াছে।
কিন্তু ধনঞ্জয় নামের জামাই কিছুতেই যায় না।” লোকটি তখন পরামর্শ দিল,“উহাকে লাঠিপেটা করিয়া
তাড়াও।”কাঁহাতক আর কতদিন জামাইকে বসাইয়া বসাইয়া খাওয়ান যায়!
পরদিল শ্বশুর একটি লাঠি দিয়া মারিয়া ধনঞ্জয়কে তাড়াইয়া দিল। সেই হইতে শ্লোক তৈরি হইল।
হরি বিনা হরির্যাতি মাংসেন মাধব,
মৎস্য বিনা মধুর্যাতি মিষ্টান্ন বিনা যাদব।
ব্যঞ্জন বিনা তড়িৎ যাতি ক্রোধদ্দীপ্ত অক্ষয়,
লবণ বিনা শ্যাম যাতি প্রহারেণ ধনঞ্জয়।