প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী– তৃতীয় অংশ

সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর মৃগাঙ্ক ব্যাপারটা ভাবছিল। আপসোস হচ্ছিল, খানিকটা বেশ রাগ ও হচ্ছিল আর্যশেখরের ওপর। একে তো জেরক্স বা স্ক্যান করেননি, তার ওপর আবার তদন্তে এত কড়াকড়ি! সে নিজের মনেই হেসে ফেলল – মানুষটাই এই রকম। আজকের এই রকম হুজুগের যুগে ভাবা যায় কোন মানুষ এত অল্পে সন্তুষ্ট থাকতে পারে? লোকে মিডিয়ার আলো চায় সবসময় নিজের ওপর, আর এ মিডিয়াকে এড়িয়ে থাকতে চায়। স্ত্রী মাধবীলতা এসে জিজ্ঞেস করল –
– কি কিছু বার করতে পারলে?
– সন্দেহের তালিকা থেকে হরিহর, অমিতাভ বাবু আর আমাকে বাদ দিলে থাকে আর ছজন – রজতাভ ও বাকী পাঁচজন কলেজ পড়ুয়া। চুরির সুযোগ এদেরই ছিল। শুক্রবার ই ছিল বাইশে শ্রাবণ, আমি ফোনেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। কিন্তু এরা ছজনেই কোন না কোন সময় ওনার বাড়ি গিয়েছিল প্রণাম করতে। সকালে সরিৎ, বিকেল সাড়ে চারটের সময় সরমা ও কিংশুক – সন্ধ্যাবেলা হেমন্ত, দেবলীনা ও রজত। সম্ভবতঃ ব্যাপারটা ঘটেছিল শুক্রবারেই।
– সে কি! তুমি যে বললে এই আত্মজীবনীর ব্যাপারটা কেউ জানতো না।
– আর্য তা ভাবলেও সেটা আদপেই ঠিক নয়। রজতাভর স্মরণশক্তি খুব ভালো, উনি রজতাভর কাছে ছোটবেলার কিছু ঘটনার কথা ঝালিয়ে নিতে চান, তখন রজতের মনে সন্দেহ হয়। এরপর কথায় কথায় উনি বলে ফেলেন ঐ উপন্যাসটির কথা।
– তার মানে একমাত্র রজতাভই জানত –
– ধীরে বন্ধু ধীরে! এসব কথা চাপা থাকা একটু শক্ত। রজতাভর সঙ্গে কথা বলে আমি যেটুকু জেনেছি যে সে আবার একদিন কিংশুক আর হেমন্তর সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে গুপ্ত কথাটি ফাঁস করে দেয়। অবশ্য আর্য সেভাবে তাকে গোপন রাখতে বলেন ও নি। কাজেই এই কম্যুনিকেশন বিপ্লবের যুগে যা হওয়া সম্ভব – সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে।
– বাবা! এছাড়া আর কিছু বার করতে পারলে?
– ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য কিছু জিনিষ পাঠিয়েছি। বাড়ির চারদিক টাও ভালো করে ঘুরে দেখলাম, ক্ল্যু বিশেষ কিছু পাইনি। শুক্রবার সকলেই ওঁর ওপরের ঘরে গিয়ে প্রণাম করেছে – ব্রিফকেসটা টেবিলের ওপরেই ছিল। একমাত্র সরিৎ কে বোধহয় বাদ দেওয়া যেতে পারে। সে এসেছিল সকালে আর শেষবার পান্ডুলিপি দেখেন আর্যশেখর দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়ার পর। শনিবার তাঁর দুটো বড়ো মীটিং ছিল, অমিতাভ বাবুর অফিসে আর কলেজ স্ট্রীটে অন্য আর এক প্রকাশকের সঙ্গে।- তারপর রবিবার ই তো এই কাণ্ড!!
– একটা কাজ করে দেখতে পার। যদি ধরা যায় এদের কেউ করেছে, তাহলে এদের একটু নাড়াচাড়া করে দেখতে পারো। এরা কেউ পাকা অপরাধী নয়, ঝোঁকের মাথায় একটা কাজ করে ফেলেছে, এদের প্রাইভেটলি একটু জেরা করলেই ভেঙ্গে পড়বে।
– কিন্তু মুশকিল টা কি জান, সকলেই ভালো ফ্যামিলির ছেলে-মেয়ে, ভীষণ সেনসিটিভ। কাজেই খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে। আমি ভাবছি, ওদের একবার আমাদের বাড়ীতে আড্ডার অছিলায় ডেকে একটা মাইল্ড থ্রেট করব। যত ছোটই হোক না কেন – দিস ইস ক্রিমিন্যাল অফেন্স।
– নট এ ব্যাড আইডিয়া। আমি না থাকলেই ভালো, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমাদের সর্ব শিক্ষা সমিতির একটা মিটিং আছে, আমি তোমাদের জন্য একটু চা টা দিয়ে কেটে যাব।
– ওকে! দেন ইটস ফাইনাল! হৃষিকেশ ও ততদিনে ফিঙ্গারপ্রিন্টের ব্যাপারে কিছুটা এগোতে পারবে।

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!