প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী– চতুর্থ অংশ

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা সবচেয়ে আগে এল কিংশুক ও হেমন্ত। তারপর একে একে সকলে এসে পড়ল। সবচেয়ে শেষে এল রজতাভ। অফিসের পর যানজট এড়িয়ে আসতে তার একটু দেরী হয়ে গেছে। মাধবী সকলের চা জলখাবারের ব্যবস্থা করে বেরিয়ে পড়ল।
মৃগাঙ্ক শুরু করল, –
– তোমরা সকলেই আন্দাজ করেছ কেন আজকে আমরা মিট করছি। আমাদের প্রিয় লেখক আর্যশেখরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখার পান্ডুলিপি নিখোঁজ। আমার ধারণা, এই ঘরে যারা উপস্থিত তাদের মধ্যে কেউ বা কারা এই কাজটি করেছে। আমি চাই অপরাধী আমাকে নিজেই জানিয়ে দেবে।
সকলেই চুপ, হেমন্ত বলে উঠল –
– আপনি এতটা সিওর হচ্ছেন কিভাবে? উনি হয়তো অন্য কোথাও রেখেছেন বা বা অন্য কারুকে দিয়েছেন। এটুকু ভুল তো মানুষ মাত্রেরই হতে পারে।
– অসম্ভব! আমরা সমস্ত চেক করেছি। দ্যাখ, আমরা তদন্ত শুরু করেছি, ধরা অপরাধী পড়বেই। অবশ্য আমি এটাও জানি যে এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে সে এই কাজের জন্য সে নিজেই খুব অনুতপ্ত। তোমরা সকলেই খুব ইয়াং, আমি চাইনা তোমাদের কারুর জীবনে শুরুতেই কোন রকম একটা বিশ্রী দাগ পড়ুক। আগামী দুদিন সময় দিচ্ছি, পান্ডুলিপি সে আমাকে নিজে দিয়ে যাবে।
এবারে সরমা মুখ খুলল –
– কি বলছেন! আমার এখন ও বিশ্বাস ই হচ্ছেনা যে আমাদের মধ্যেই কেউ –
– ইয়েস, ইটস ট্র্যু! দ্যাখ, যেই করেছে ঝোঁকের মাথায়, কাজেই ব্যাপারটা হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই কিছু করতে হবে। যদি নিজে এসে দিতে ইচ্ছে না করে, সে কিন্তু ক্যুরিয়ার করে ও পাঠাতে পারে। আমি কথা দিচ্ছি, কোনরকম ইনভেস্টিগেশন হবে না, কাকপক্ষীতে কিছু টের পাবে না।
ঘরে এক অদ্ভুত নৈশব্দ- শুধু হাল্কা করে এসির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে – গলা ঝাড়া দিল মৃগাঙ্ক।
– তোমাদের সকলের সামনে কাগজ রাখা আছে, এতে তোমাদের বাড়ীর ঠিকানা আর ফোন নম্বর লিখে দাও!

সকলে চলে গেলে সে তার ল্যাপটপ টি নিয়ে বসে গেল “সত্যান্বেষণে”! আর্যশেখর রায়চৌধুরী সম্পর্কে বেশ অনেক খোঁজাখুঁজি করে কিছু তথ্য যোগাড় করে ফেলতে পারল। আর্যর স্কুল কলেজ আর লেখক জীবনের মোটামুটি একটি ইতিহাস নথিবদ্ধ করা গেছে। দেখা যাক, কোন আলোর কিরণ দেখা যায় কিনা। প্রথম প্রথম আর্যর ওপর রাগ হলেও এখন ব্যাপারটা বেশ থ্রিলিং লাগছে। এই প্রথম মৃগাঙ্ক সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতে রহস্যের জাল ভেদ করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ একটা কথা মনে এল – এরকুল পোয়ারো ভাবার চেষ্টা করতেন তিনি যদি এই অপরাধী হতেন তাহলে তিনি কেন আর কি ভাবে এই কাণ্ডটি ঘটাতেন। একটা ক্ষীণ হাসি এল মুখে-

পরদিন অফিসে বসে নথীগুলো দেখতে দেখতে এলোমেলো অনেক কথা মনে আসছিল। মোবাইলটা হঠাৎ পরিচিত সুরে গান গাইতে আরম্ভ করল:
– বলুন, কি লাগবে?
– উঃ, কিছু লাগবে না। এই শোন না, কিছুদিন আগে না নববঙ্গ বলে একটা প্রোগ্রামে তোমার লেখক বাবুর বহু পুরনো একটা সাক্ষাৎকার রিপিট টেলিকাস্ট করছিল, বেশ কিছু পুরনো কথাও – মানে ওনার স্কুল জীবন –
– বুঝেছি, বুঝেছি- কোন চ্যানেল!
– তোমার ফেভারিট সুচেতনার চ্যানেল – “বাংলার মুখ”!!
– তাই !! সো নাইস অফ ইস্যু!
– বাব্বা, হোল কি, ভূতের মুখে রামনাম!!
– আচ্ছা, এখন ছাড়ছি।
ফোন ছেড়েই আর একটা ফোন করল।
– সুচেতনা ব্যানার্জী আছেন কি!

 

গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!