প্রথম ঈমান আনার গৌরব যাঁরা অর্জন করলেন
ইসলাম পূর্ব যুগ থেকেই রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সর্বসাধারণ আরববাসীর কাছে সমাদৃত ছিলেন। সে যুগে আরবে প্রতিমা উপাসনা ব্যাপক প্রসার লাভ করেছিল, এমনকি তওহীদের প্রাণকেন্দ্র কাবা গৃহে প্রর্যন্ত তিনশ ষাটটি মূর্তি সগৌরবে স্থান লাভ করেছিল।
অতএব কাবা গৃহই যেখানে দেবমূর্তির দাপট থেকে রক্ষা পায়নি, সেখানে বাইরের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। এতদসত্ত্বেও আরবে এমন কিছু পবিত্রাত্না ব্যক্তি বিদ্যমান ছিলেন, যাঁরা মূর্তিপূজাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন। তাঁরা তখনও বিশুদ্ধ ইবরাহীম ধর্মে স্থিত ছিলেন।
ওয়ারাকা বিন নওফেল, ওবায়দুল্লাহ বিন যায়দ, হাকীম প্রমুখ শেরক মুক্ত, তওহীদবাদী পবিত্রতম সত্তরই কয়েকজন। উল্লিখিত পুত পবিত্র ব্যক্তিবর্গের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মনের সম্পর্ক গড়ে উঠে। হযরত আবূ বকরও (রাঃ) এমনি পবিত্র ব্যক্তিত্বদের একজন ছিলেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর রিসালাত লাভের উক্ত প্রকারের লোকেরাই সর্ব প্রথম ইমান গ্রহণ করেন।
মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম উম্মুল মু’মেনীন হযরত খাদীজা (রাঃ), বালকদের মধ্যে হযরত আলী (রাঃ), বয়ষ্কদের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ), গোলামদের মধ্যে হযরত বেলাল হাবশী (রাঃ) ঈমান গ্রহণ করেন। ইনাদের মধ্যে কে সর্বপ্রথম ঈমান এনেছিলেন ইতিহাসবিদদের মতে তা নির্ধারণ একটি সুকঠিন বিষয়।
তবে কোন কোন হাদীস বিষয়ক চরিত্রকারের মতে সর্বপ্রথম হযরত খাদীজা (রাঃ) এবং তাঁর পর হযরত আলী (রাঃ) ঈমান গ্রহণ করেন। হযরত আলী (রাঃ) – এর পরে হযরত যায়দ ইবনে হারেসা (রাঃ) ঈমান গ্রহন করেন। তাঁর পরেই হযরত আবূ বকর (রাঃ)-এর স্থান।
হযরত আবূ বকর (রাঃ) কুরাইশদের মধ্যে অত্যন্ত হৃদয়বান, দয়ালু এবং সর্বাধিক সম্মানিত বিবেচিত হতেন। তাঁর ধন সম্পদ ছিল অঢেল। ফলত তৎকালীন আরব সমাজে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল ধারণাতীত। তাছাড়া তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধীরস্থির মানসিকতার অধিকারী।
তিনি নিজে ইসলাম গ্রহণের পরে অন্যদেরকেও ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। তাঁর দাওয়াতে হযরত ওসমান, যোবাইর, আবদুর রহমান বিন আওফ, সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস, তালহা প্রমুখ ইসলাম গ্রহণ করেন, এঁরা সবাই আরবের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন।
এই পাঁচ জনের পর হযরত আবূ ওবায়দা, আবূ সালামা, আরকাম, ওসমান বিন মাযউন, কোদামা, হযরত ওমর (রাঃ)-এর ভগ্নীপতি যায়দ বিন সায়ীদ ও বোন হযরত ফাতেমা, ওবায়দা বিন হারেস, আসমা বিনতে আবূ বকর, হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদসহ আরও অনেকে ইসলাম গ্রহন করেন।
অনেক জীবনবৃত্তান্ত লেখকের মতে, হযরত ইবনে মাসউদ ষষ্ঠ নম্বরে ইসলাম কবুল করেন। অনেকের মতে দলীল প্রমাণের দিক থেকে এ উক্তিই প্রবল। তারপর মাসউদ, হাতেব বিন আবী বালতাআ, তাইয়্যাশ, আসমা বিনতে সালামা, খোনায়স, আবদুল্লাহ বিন জাহশ, জাফর বিন আবূ তালেব, আবূ হোযায়ফা, আমের বিন যোহায়র, নঈম বিন আবদুল্লাহ, আম্মার বিন ইয়াসের, সোহায়ব, খালেদ বিন সায়ীদ প্রমুখ সম্মানিত শান্তকামী ব্যক্তিবর্গ ইসলামে দিক্ষীত হন।
প্রাথমিক দাওয়াতে যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন, তাঁদের অনেকেরই কোন সামাজিক প্রতিপত্তি ছিল না। যেমন মহাত্নার নাম ইসলামের ইতিহাসে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় সর্বযুগে সর্বকালে সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরাই আম্বিয়ায়ে কিরামের অনুসারী হয়েছেন অধিক। তারাই আম্বিয়ায়ে কিরামের আহ্বানে সর্বপ্রথম সাড়া দিয়েছেন। কাফেরদের অত্যাচার, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন তাঁদেরকে আল্লাহর পথ হতে ফিরাতে পারে নি।