প্রতিহিংসা –ষষ্ঠ অংশ

‘শর্ত দিতে আপত্তিই বা হবে কেন তার? ডবল লাভ কে ছাড়ে? আবার অন্য শহরে বিক্রী হবে ফেরৎ আসা সব ওষুধ। তখন তো আরো লাভ। । এই সব ওষুধ কর্মচারিরা স্টক রেজিস্টরে ও কখনো এন্ট্রি করতো না ভূলে ও, তাই ধরা পড়লো না কিছুই’।

‘ওষুধের রসীদ তখনো কম্প্যুটারে তৈরী হ’তো না তাই ব্রান্ড লেখা ও হ’তো না । কিন্তু প্রতিহিংসার আগুন বুকে নিয়ে ঘুরতে রইলেন সুযোগ সন্ধানী এক পিতা। ডঃ সানিয়েল ওই ঘটনার পরেই ঘোর সন্দেহক্রমে নিজের দোকান বন্ধ ও বিক্রী করে প্র্যকটিশ ও ছেড়ে দিলেন’।

‘কিন্তু তিনি ছিলেন উদারমনা। চিনতে না পেরে, অতো রোগির ভীড়ে তাঁর অবশ্য মনে থাকার কথা ও নয়, তিনি বাড়িতে একজনকে ভাড়াটে রাখলেন’।

‘এই ক্ষেত্রে সন্দেহ জাগায় দুই প্রৌঢ়ের শৌখিনতা। ডঃ সানিয়েল চিরকালই একটু শৌখিন মানুষ ছিলেন যা মিঃ বসাকের কথায় জানা গেছে কিন্তু মিঃ সিয়েনের বেলায় তেমন কোন প্রমাণই কিন্তু পাওয়া যায় নি । কিন্তু তাঁর ঘরে ও বাথরুমে একই ধরণের শৌখিনতা ও প্রসাধনীর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কেন? অনুকরণ? না বাকী জীবনের জন্য অভ্যাস তৈরী করা? খুনী মার্ডারারস্ নার্ভাসনেসের জন্য সব প্রসাধনের জিনিষপত্র সরিয়ে ফেলতে পারে নি । হয়তো তার কোন দরকার ও মনে করে নি। কিন্তু মাউথ ওয়াশের বোতলটা রিপ্লেশ করে দিলেই আর কোন ঝামেলাই থাকতো না। হয়তো চেষ্টা ও করেছিলেন তিনি, কিন্তু আবার অকুস্থলে যাবার সাহসে কুলোয়নি’।

‘এখন বাকি থাকে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করা ও গেটের তালা ভেঙে তা খুলে রাখা নইলে কাজের লোকজন তো কেউ বাড়িতে ঢুকতে না পেরে চলে যাবে। এটা কোন অবস্থায় হ’তে পারে?’

‘হ্যাঁ, গেটের তালা ভাঙা ও খুলে রাখা বাড়ির যে কেউ করতে পারে কিন্তু কারো ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করা কি সম্ভব ঘরে যে আছে তার পক্ষে? বাইরের কেউ ছাড়া?’

‘অবশ্য হুড়কোটা সত্যিই বেশ ঢিলে আর এইটি ও ইচ্ছাকৃত ভাবে করে রাখা হ’তেই পারে। দরজার পাশেই একটা জানলা ও আছে ঘরের। সুতরাং মিঃ কুমারের হাতের ধাক্কায় বা তাঁর জামাতে আটকে গিয়ে কোনক্রমে ঘরের দরজার হুড়কো আটকে না গেলেই বা কি? সে তো বরং ভালোই এবং সে’টাই তো দরকার । একটি কালো রবার ব্যান্ড ও খানিকটা কালো টোনসূতো হ’লেই কাজ হয়ে যায়। দেখতে ও পাবে না কেউ সহজে……’

‘রবার ব্যান্ড দিয়ে সূতোটা আগে থেকে হরাইজন্টাল হুড়কোতে আটকে সুরষো গলিয়ে এনে রেখে দিয়ে পরে ঘরের দরজা ভেতর থেকে টেনে বন্ধ করে দিয়ে, .জানলায় আটকে রাখা সূতোটা ধরে জোরে টান দিলেই হুড়কো ও আটকে গেল আর রবার ব্যান্ড ছিঁড়ে গোটা সূতোটা ও সহজেই হাতে ও এসে গেল। তারপরে জানলাটা বন্ধ করে ঘরে এ সি চালিয়ে দিলেই হয়ে গেল….ওঁ শান্তিঃ..’

‘আমি প্রসেসটা ডিমোনস্ট্রেট করে ও দেখাতে ও পারি কিন্তু সময় নেই যে…..কি করি? তবে বাথরুমের গোপন লকার থেকে অন্যান্য জিনিষপত্রের সাথে এই
মাউথ ওয়াশের বোতলটা পুলিশ খুঁজে পেয়েছে, অনেক কষ্ট করে। বোতল অবশ্য খালি কিন্তু তা’তে যে বিষ দেওয়া ছিল তা পরীক্ষায় জানা গেছে। মেটাল ডিটেক্টার না হ’লে বাথরুমের দেওয়ালের টাইল্সের পিছনের ওই গোপন চেম্বারের বিষয়ে জানা ও যেতো না। আর ছেঁড়া রবার ব্যান্ড সমেত এই কালো টোন সূতোটা কমোডে ফেলে ফ্লাশ করা হয়েছিল কিন্তু সূতোটার শেষ ভাগ রবার ব্যান্ডের সাথে আটকে গিয়েছিলো কমোডে । তাই জলের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। আর মিলেছে কিছু নকল বেশ ধারণের বা মেকআপের সামগ্রী। সুতরাং সব কৃতিত্বই পুলিশের, আমার কিন্তু কোন বাহাদুরী নেই এই কেসে’

‘তা’হলে কেসটা কি দাঁড়ালো? আর এতো সব ইনভেস্টিগেশন তো আমি করিনি।’
বিস্মিত প্রশ্ন পুলিশের ও সির শোনা গেলো।

‘আমি নিজেই সব করেছি.’ বড়কাকু বলে উঠলেন। কিন্তু কেসটা যে কি দাঁড়ালো সেটা আমি ও ঠিক এখনো ..’

আমি বললুম–‘খুব সহজ….রিভার্সড মার্ডার বা বিলোমিত হত্যার কেস। আর কি?.’

‘….তার মা…মানে?’ ডঃ সানিয়েলের কম্পিত স্বর শোনা গেল’।

‘মানে খুবই সোজা। যিনি মারা গিয়েছেন তিনি যদি মিঃ সিয়েন না হয়ে স্বয়ং ডঃ সানিয়েল বা অনিমেষ স্যান্নাল হয়ে থাকেন তা হ’লেই হয়ে গেল এবং যিনি তার সমস্বভাবের অনুসরণকারী বন্ধু এবং ভাড়াটে ছিলেন এবং এখন আমাদের সামনে
ডঃ সানিয়েল সেজে বসে আছেন তিনিই সেই হতভাগ্য পিতা মিঃ সিয়েন বা রঞ্জন সেন’।

‘সবটাই ঠিক ছিল। শুধু যদি উনি ভয়ে নিজেকে নির্দোষ দেখাতে ঘর বন্দী করে না
ফেলতেন সব কাজ সেরে আর দোষটা মিঃ কুমারের ঘাড়ে গিয়ে না চাপতো, তা’হলে
আর আমাদের এ’খানে আসতে ও হ’তো না তাঁর অনুরোধে আর এতো সহজে উনি ধরা ও পড়তেন না। অবশ্য উনি ঠিকই জানতেন যে এই কেসের দু’জন সাসপেক্টই বেনিফিট অফ ডাউট পেতে বাধ্য কেননা খুন করবার কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ বা স্ট্রং মোটিভ কিছুই তো নেই কারো বিরুদ্ধে। সবটাই সন্দেহ….আর সবখানেই….. হয়তো…. মে বি….কোন কোর্ট তো তা মানতেই পারে না। সে’খানে চাই এভিডেন্স………’।

‘আর ওই দুই সাসপেক্টের কেউ তাঁকে ইচ্ছে করে ঘর বন্দী করে রাখতে যাবেই বা কেন? সুতরাং তিনি দৈবাৎ একদম অসহায়, ঘরবন্দী অবস্থায় আটকে ছিলেন ও তাই সম্পূর্ণ নিরপরাধ এই বিষয়টিই প্রমাণ হবে…………’

‘দরজা আটকানোর ঘটনাটি ঘটেছে বটে কেননা কাজের লোকেরা সাক্ষী ও যখন আছে, তখন ঘটনাটি মিথ্যা নয় আর তাইতে ডঃ সানিয়েল ঘরে আটক থাকতে বাধ্য হ’লে ও এই ঘটনাটি দৈবাৎ ঘটে গেছে মিঃ কুমারের হাতের ধাক্কায়, এই ভাবতে বাধ্য হবেন বিচারক। আর কোন ম্যাচিওর্ড পলিসী তো আর তামাদি হয় না তাই নিরপরাধ প্রমাণ হয়ে গেলে টাকা ও অবশ্যই পাবেন তিনি তার নমিনী হিসেবে। আসল অপরাধী থাকবে সব সন্দেহের বাইরে।’

‘কিন্তু অতি বুদ্ধিমান ও অতি সাবধানিদের এই ফল লাভই হয়’।

‘তা তুমি এখন চলো তো, কাকু। আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে…এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ধরতে হ’লে আর দেরী করা যাবেই না………………’.

‘আরে আরে এ কী? আপনারা সব কে?….নো নো ফটো, প্লীজ। আপনারা কি জার্নালিস্ট? কে ডেকেছে আপনাদের এখানে?’ এইবার আমি নিজেই লাফিয়ে উঠলুম।

‘পুলিশে ডেকেছে……………’

‘তা বেশ তো, পুলিশের ফটো তুলে নিয়ে আপনারা চলে যান। আমাদের আটকাচ্ছেন কেন? আমরা এখন যাই’।

‘কি ইন্টারভিউ নেবেন? নাঃ …সে এখন অসম্ভব………আমাদের ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে’।

‘কোন কথাই শুনবেন না আপনারা আমার? কি গেরো রে বাবা? তবে আমাদের আটকে রেখে আর কি হবে বলুন তো স্যার? আটকাতে হলে আপনারা বরং গিয়ে অপরাধিকে আটকান দেখি’।

‘কী বললেন? পুলিশের হাতকড়ি তো আছেই…..’

‘হিঃ…..হিঃ……হিঃ…..হাতকড়ির বন্দিত্বের সময় তো উত্তীর্ণ প্রায়………’

‘তার মানে?’

‘কি মুশ্কিল? তার মানে ও আবার জানতে চাইছেন? সবই আমাকে বলতে হবে? কি ঝামেলাতেই পড়লুম রে বাবা?’

‘আচ্ছা, তাই বলছি শুনুন—আর নয় কি দশ সেকেন্ডের মধ্যেই উনি ও পরপারে চলে যাবেন। বুঝলেন না। একই বিষ। বড় সাংঘাতিক জিনিষ। মুখে একটু ঠেকলেই হয়ে গেল। মাত্র বিশ সেকেন্ড বড়জোর…লাগে সবশুদ্ধু…………..’

‘এ’সব কি বলছো তুমি?’ বলেই লাফিয়ে উঠলেন মিঃ মিত্তল ও বড়কাকু দু’জনেই একসাথে কথাটা শোনামাত্রই। একেই বলে পুলিশ স্মার্টনেস।

‘ঠিকই বলছি, কাকু। এতো করে ও শেষে ধরা পড়ার লজ্জায় সেই বিষ এখন নিজের ওপরেই প্রয়োগ করেছেন উনি। কেমন নিশ্চুপ অবস্থায় বসে রয়েছেন, দেখছেন না। যান, হে সাংবাদিকগণ আপনারা যদি পারেন তো কেউ ফোন করে এখুনি অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন। নিয়ে যান ওনাকে হাসপাতালে । দেখুন যদি স্টম্যাক ওয়াশ করিয়ে একটা প্রাণ বাঁচাতে পারেন…. একটা অমূল্য জীবন।। আমার তো আর কিছু করবার নেই। সত্য বড় নির্মম …..বড় নিষ্ঠুর……’

‘এখন তুমি চলো না, ও কাকু’…..আমি কাকুর হাত ধরে টানলুম।

 

গল্পের প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

দুঃখিত!